এক শ্রেণীর বাইকার আছেন যাদের কাছে রাইডিংয়ে কম্ফোর্টনেস সবার আগে বেশি গুরুত্ব পায়, তাদের জন্য স্কুটার হচ্ছে সেরা পরিপূরক। তবে ট্রেডিশনাল স্কুটারগুলোর লুকস একজন বাইকারকে সহজে সন্তুষ্ট করতে পারে না। আজ আমরা আপনাদের যে স্কুটারটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব সেটি হচ্ছে Yamaha Ray ZR, যার ডিজাইন কন্সেপ্ট একেবারে ইউনিক, এগ্রিসিভ এবং স্পোর্টি।
বিগত আগষ্ট মাসের ১৯ তারিখ বাংলাদেশে ইয়ামাহার ডিস্ট্রিবিউটর এসিআই মোটরস লিমিটেড লঞ্চ করেছে Yamaha Ray ZR এবং মূল্য নির্ধারণ করেছে ১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। এর আগেও ২-১টি ইম্পোর্টারের হাত ধরে কয়েক পিস Ray ZR বাংলাদেশে এসেছিল, যখন দাম ছিল ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। তবে বর্তমানে ইয়ামাহার যে কোন বাইক/স্কুটার একমাত্র এসিআই মোটরস লিমিটেডই ইম্পোর্ট করার অধিকার রাখে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার টানা রাইড, কুয়াকাটা ট্যুরে অফ-রোডের টেস্ট, ঢাকার ভিতরে সিটি রাইড, সব মিলিয়ে Yamaha Ray ZR স্কুটারটি আমরা টিম দেশি-বাইকার চালিয়েছি প্রায় ২৬০০ কিঃমিঃ। একটা স্কুটারের পারফর্মেন্স বুঝতে এর বেশি দরকার নেই আশা করি। বিস্তারিত লেখার আগে যে কথাটি না বললেই নয় যে, Ray ZR আমাকে স্কুটারের প্রতি নতুনভাবে আকৃষ্ট করেছে। একজন বাইকারের ভালবাসা যদি হয় একটা দ্বি-চক্র যানকে ঘিরে, তবে Ray ZR-এর প্রেমে পরতে পাড়েন অনেকেই। স্কুটারটিতে কি পেলাম, কি পেলাম না, যাবতীয় তথ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতার করার চেষ্টা করব আমাদের এই রিভিউটিতে।
বাইক বা স্কুটি যাই হোক না কেন, সবার আগে একজন ক্রেতা যা চিন্তা করেন তা হচ্ছে লুকস। আর এই ধাপে Ray ZR-কে এর প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুটারগুলোর থেকে অবশ্যই এগিয়ে রাখতে হবে। এর মাঝে এক ধরনের স্পোর্টস লুক আমরা দেখতে পেয়েছি।
ইয়ামাহা তাদের ব্রেকিং নিয়ে সব সময় সচেতন। Ray ZR-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতীক্রম হয়নি।এর সামনে রয়েছে ১৭০ মিঃমিঃ ডিক্স ব্রেক এবং পেছনে ১৩০ মিঃমিঃ ড্রাম ব্রেক। এর ব্রেকিংকে আমরা একশতে একশই দিব। হার্ড ব্রেকিংয়ের সময়ও সামনে ঝুঁকে পড়তে হয় না, যা এর কম্ফোর্টনেসকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। নতুন অবস্থায় সামনের ডিস্ক ব্রেক খুব একটা ভালো কাজ করছিল না। কিন্তু ১০০০ কিঃমিঃ রাইডের পর এটি স্বরূপে ফিরে এসেছিল।
ব্রেক-ইন-পিরিওডে এর মাইলেজ আমাদের হতাশ করেছিল। কিন্তু ওডোমিটারে কিলোমিটার বাড়ার সাথে সাথে, এর মাইলেজও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত আমরা এতে মাইলেজ পেয়েছি ৪৬ কিঃমিঃ/লিটার। এর ড্যাশবোর্ডটি এনালক তবে প্রয়োজনীয় ফিচার যেমন স্পীডোমিটার, ওডোমিটার, ফুয়েল গেজ ইত্যাদি রয়েছে।
Ray ZR-এ রয়েছে বেশ প্রসস্থ সিট, যা কিনা রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়কেই বেশ আরাম প্রদান করে। স্কুটি! স্পীড কম তাই না? লং ট্যুর সম্ভব? যদি মনে এমন প্রশ্ন আসে তাহলে সেটাকে ভূল বলতে হবে, ইয়ামাহার এই ১১৩ সিসি এয়ারকুলড ব্লু-কোর ইঞ্জিন বিশিষ্ট স্কুটারটি সর্বোচ্চ ৭ বিএইচপি শক্তি এবং ৮.১ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। আর আমরা এতে টপ স্পিড পেয়েছি ১০০ কিঃমিঃ/ঘন্টা। ভারী পিলিওন নিয়েও স্কুটিটা সল্প সময়ে ০-৮০ কিঃমিঃ/ঘন্টা তুলতে সক্ষম।
হেডলাইটের আলো কেমন? হাইওয়ে রাইডিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত? এর উত্তর হ্যাঁ-বোধক। ১২ ভোল্ট হ্যলোজেন হেডল্যম্পটি যে কোন রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত বলে মনে হয়েছে। হাই এবং লো আরপিএম-এ স্কুটারটির সাউন্ড চমৎকার। যখন কাউকে পাশ কাটিয়ে যাবেন, হাল্কা সাউন্ডটা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
সামনে এবং পিছনে ১০ ইঞ্চি শীট মেটাল বিশিষ্ট হুইলে ব্যবহার করা হয়েছে টিভিএস 90/100-10 টিউবলেস ট্যায়ার, যার ট্যায়ার গ্রিপ বেশ ভাল এবং স্কীড করার সুযোগ কম। এর রাইডিং পজিশন দীর্ঘক্ষণ রাইড করার জন্য বেশ উপযোগী। যারা কম্ফোর্টেবল রাইডিং পছন্দ করেন, তারা পছন্দের তালিকায় নিঃস্বন্দেহে রাখতে পারেন।
স্কুটারটিতে ইলেক্ট্রিক এবং কিক স্টার্ট পদ্ধতি রয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ভি-বেল্ট অটোমেটিক গিয়ার-বক্স। ১০৩ কেজি ওজনের স্কুটারটির সীটের নিচে রয়েছে ২১ লিটারের সমপরিমাণ বৃহৎ স্টোরেজ আর রাইডারের হাতের কাছে রয়েছে ২টি ছোট স্টোরেজ। ১০০০ কিলোমিটারের পর থেকে স্মুথনেস আর এক্সিলারেশন আমাদের সব থেকে বেশি আকৃষ্ট করেছে Ray ZR-এর প্রতি। লুকসের পর সব থেকে বড় পজিটিভ দিক এটি।
Ray ZR-এর সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে ইউনিট সুইং সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে যা বেশ চমৎকার রেসপন্স করে। কিন্তু কার্ব ওয়েট কম হওয়ায় উঁচু-নিচু ভাঙ্গা রাস্তায় বেশ ঝাঁকি পোহাতে হয়।
স্কুটারটির মূল্য প্রকাশের আগে আমরা ধারণা করেছিলাম এর মূল্য ১৭০,০০০-১৮০,০০০/- পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর মূল্য ১৫২,০০০/- টাকা প্রকাশ করা আমাদের কাছে আশারবাণী মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকায় Ray ZR-ক মোটামুটি সাশ্রয়ী মনে হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ইয়ামাহা থ্রি-এস সেন্টার (তেজগাঁও) এবং ক্রিসেন্ট ইন্টারপ্রাইজে (মিরপুর) স্কুটারটি পাওয়া যাবে। আশা করা যায়, অতি শিঘ্রই দেশে ইয়ামাহার সকল ডিলার পয়েন্টেও স্কুটারটি পাওয়া যাবে।
- মোটরসাইকেলের দাম কি আরো বাড়বে? (বিস্তারিত জেনে নিন) - জানুয়ারি ২২, ২০২৫
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.