মোটরসাইকেলের মাইলেজ কমে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার

আমরা যখন কোন নতুন মোটরসাইকেল কিনতে যাই তখন সবার প্রথমেই আমরা চিন্তা করি এটি আমাদের কি রকম মাইলেজ দেবে। আসলে এই চিন্তাটি মাথায় আসার মূল কারন হচ্ছে আমাদের দেশে ফুয়েলের দাম এবং আমাদের উপার্জন ক্ষমতা। মাইলেজ একটি মোটরসাইকেলের অন্যতম মূক্ষ্য বিষয়। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে আপনি আপনার বাইক থেকে সঠিক মাইলেজ পাবেন সেই বিষয় নিয়ে।

কম-বেশি প্রায় সকল বাইকারই তাদের বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। মোটরসাইকেলের মাইলেজ কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারন রয়েছে যার মধ্যে একজন রাইডারের চালানোর ধরন এবং সঠিকভাবে বাইক মেইন্টেনেন্স না করা অন্যতম। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি কারনে বাইকের মাইলেজ কমে যায় এবং কিভাবে সঠিক মাইলেজ পাবেন সেই বিষয়ে।

টায়ার প্রেশারঃ প্রথমেই কথা বলা যাক টায়ার প্রেসার নিয়ে। অনেকেই আমরা বাইকের আইডিয়াল টায়ার প্রেসার কত সেটা জানি না। এর ফলে অনেকেই টায়ারে বেশি প্রেসার দিয়ে থাকি আবার কেউ কম। প্রেসার বেশি বা কম দুটোই টায়ারের জন্য ক্ষতিকর। আপনার বাইকের টায়ার প্রেসার যদি কম হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার মাইলেজ কমিয়ে দেবে এবং টায়ার দ্রুতই ক্ষয় হয়ে যাবে। অন্যদিকে আপনি যদি বেশি টায়ার পেসার ব্যবহার করেন তাহলে আপনি বাইকের প্রোপার গ্রিপ পাবেন না এবং আপনার বাইকের ব্রেকিং এবিলিটি কমে আসবে। সাধারনত একটি বাইকের আইডিয়াল টায়ার প্রেসার হল সামনে ২৭-২৮ PSI এবং পিছনে ৩৩-৩৫ PSI.

ইঞ্জিন অয়েলঃ সঠিক মান এবং গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার আপনার বাইকের সঠিক মাইলেজ প্রদানের পাশাপাশি আপনার ইঞ্জিনকে সুরক্ষিত রাখে। এর জন্য নির্দিষ্ঠ সময় পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিৎ। আপনি যদি মিনারেল অয়েল ব্যবহার করেন তাহলে ৮০০-১০০০, সেমি-সিন্থেটিক ১২০০-১৫০০ এবং সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ২০০০-২৫০০ কিমি এর মধ্যে পরিবর্তন করা ভাল।

কার্বুরেট পরিস্কারঃ আপনারা যারা কার্বুরেটর ইঞ্জিনের বাইক ব্যবহার করেন তাদের জন্য কার্বুরেটর পরিস্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ন। একটি কার্বুরেটর সিস্টেমে সাধারনত দুটি অংশ থাকে। একটি হচ্ছে ইঞ্জিন আরপিএম Screw এবং অন্যটি হচ্ছে Air এবং fuel Mixture screw যেটি আপনার ইঞ্জিনে বাতাস এবং ফুয়েলের প্রবেশের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। যদি ইঞ্জিনে বাতাসের পরিমান বেশি এবং ফুয়েলের পরিমান কম প্রবেশ করে তাহলে আপনি ভাল মাইলেজের পাশাপাশি ইঞ্জিন থেকে ভাল পার্ফরমেন্সও পাবেন। তাই চেষ্টা করবেন সবসময় কার্বুরেটর পরিষ্কার রাখতে।

টাইট ব্রেকঃ অনেক সময় বাইকের ব্রেক কিছুটা টাইট হয়ে যায় এবং হুইল ফ্রিলি ঘুরতে পারে না। এই জ্যাম হুইলকে ঘোরানোর জন্য ইঞ্জিনকে বাড়তি শক্তি খরচ করতে হয় যা বাইকের মাইলেজ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

কার্বন ডেপোসিটঃ আপনারা যারা ২৫০০০-৪০০০০ কিমি এর বেশি রাইড করেছেন তাদের বাইকের মাইলেজ কমে আসার অন্যতম কারন হতে পারে ইঞ্জিনে কার্বনস্তর জমা। বিশেষকরে যখন পিস্টনে কার্বন জমে তখন এটি কিছুটা ভারি হয়ে যায় এবং সঠিকভাবে এয়ার এবং ফুয়েল বার্ন করতে পারে না। ফলে বাইকের মাইলেজ কমে আসে এবং ইঞ্জিন নকিং সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া কার্বন জমার কারনে দ্রুতই ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব কমে আসে।

ব্রেকিং পিরিয়ড না মানাঃ প্রত্যেকটি মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি তাদের ইউজার বইয়ে ব্রেক ইন পিরিয়ডের কথা উল্লেখ করে থাকে। সাধারনত স্ট্যান্ডার্ড কমিউটার বাইকের জন্য প্রথম ১০০০-১৫০০ কিমি এবং স্পোর্টস বাইকের জন্য ১৫০০-২০০০ কিমি ব্রেক ইন পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়। এই সময় বাইকের গতি ৫০-৬০ কিমি/ঘন্টা এবং আরপিএম ৪৫০০ থেকে ৬০০০ এর মধ্যে রেখে বাইক রাইড করা উচিৎ। এছাড়া ব্রেক ইন পিরিয়ডের প্রথম ৩০০-৫০০ কিমি এর মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা ভাল। বাইকে কোন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন এবং কখন পরিবর্তন করবেন এই সম্পর্কে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কিত ভিডিওটি দেখতে পারেন।

ভাল মানের ফুয়েল ব্যবহারঃ আমাদের দেশের ফুয়েলের মান আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে অনেক কম সেই সাথে ফিলিং স্টেশনগুলো এটিতে যুক্ত করছে কেরোসিন এবং পানিসহ নানান দ্রব্য। তাই ভাল মানের ফুয়েল পাওয়াটা আমাদের জন্য কিছুটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই চেষ্টা করুন যেসব ফুয়েল স্টেশনের কিছুটা সুনাম রয়েছে সেইসব স্টেশন থেকে ফুয়েল নেয়ার।

রোদে বাইক পার্কিংঃ আমরা অনেকেই পার্কিং স্পেস না পেয়ে রোদে বাইক পার্ক করি যেটি বাইকের মাইলেজ কমে যাওয়ার একটি কারন। অনেকেই ভাবতে পারেন বাইক রোদে রাখলে মাইলেজ কমে যাবে কেন? আসলে ফুয়েল যেহেতু একটি দাহ্য পদার্থ তাই এটিকে বেশিক্ষন রোদে রাখলে সেটি বাষ্প হয়ে যায়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাইকের ফুয়েল ফুরিয়ে যায়।

চালানোর ধরনঃ সর্বশেষ কারনটি হচ্ছে রাইডিংয়ের ধরন। অনেকেই আছেন যারা ব্রেকের সময় কিংবা যেকোন পরিস্থিতিতে ক্লাচ প্রেস করেন। প্রয়োজনের অধিক ক্লাচ চাপলে বাইকের মাইলেজ কমে আসে। এছাড়া অনেকেই বাইকের আইডিয়েল আরপিএম ২০০০-৩০০০ রাখেন যেটি মাইলেজ কমার সাথে সাথে ইঞ্জিন অভারহিট করে। তাই চেষ্টা করুন আইডিয়াল আরপিএম ১৩০০-১৫০০ এর মধ্যেই রাখতে এবং ব্রেকিংয়ের সময় ইঞ্জিন ব্রেকে অভ্যস্থ হওয়ার।

আশাকরি আমাদের আলোচিত বিষয়গুলো আপনাদের বাইকের মাইলেজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আর রাইডিংয়ের সময় অবশ্যই হেলমেট এবং রাইডিং কিট পরার চেষ্টা করবেন।

লিভ ফ্রি, রাইড সেফ।