মোঃ মিজানুর রহমানের স্পিতি ভ্যালি ট্রিপ

আলহমদুলিল্লাহ। গত এপ্রিল মাসে যখন কাশ্মীর,লাদাখ ট্যুর দেই তখন মাথায় ভূত চেপেছিল যে,এ বছর স্পিতি ভ্যালি ট্রিপ আমাকে দিতেই হবে। আমি বরাবর সলো ট্রাভেলার কিন্তু এই ট্রিপে সফর সঙ্গী হয়েছেন দুই বাংলাদেশি ভাই ও পরে কলকাতার এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে যায়, যে কিনা গত তিন দিন আমার সাথে ট্যুর করেছে।

বাইক ভাড়া – গত কাশ্মীর ট্রিপে বাইক ভাড়া করেছিলাম শ্রী নগর থেকে আর নিয়েছিলাম হিমালয়ান স্ক্যাম। এবার কি বুঝে বাইক ভাড়া করলাম দিল্লি থেকে আর বাইক নিয়েছি রয়েল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০।

আপনারা যদি এই ট্রিপ করতে চান অবশ্যই হিমালিয়ন নেবেন অথবা হিমালিয়াম স্ক্যাম। ভুলেও আমার মত রয়েল এনফিল্ড ক্লাসিক নেবেন না। যে পরিমাণ প্যারা দিয়েছে এই বাইক এইটা পুরো পোস্ট পড়লে বুঝতে পারবেন।

রুট প্ল্যান – অনেকেই দিল্লি থেকে মানালি দিয়ে শুরু করে কিন্তু আমি শুরু করেছি দিল্লি থেকে শিমলা হয়ে। দিল্লি থেকে শিমলা – নারাকান্ড – চিৎকুল – সংগলা – কল্পা – নাকো – তাবু মনেস্ট্রি – ডানকার – মনেস্ট্রি – পিন ভ্যালি – কাজা – কিববের ঘাট – কি মনেস্ট্রি – লাংযা – কোমিক – হিককিং – কুঞ্জুম পাস – চান্দ্রতাল – মানালি – দিল্লি।

 

১ম দিন – খুব ভোরে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরি দিল্লি থেকে আর দিল্লির ট্র্যাফিক জ্যাম কাটিয়ে মোটামুটি বিকেল নাগাদ পৌঁছে যাই শিমলাতে। আর প্রথম রাতটা শিমলাতেই কাটাই,দিল্লির ভয়ঙ্কর গরম কাটিয়ে যখন শিমলায় পৌঁছানর পর রাতে দেখি ভয়ংকর লেভেলের শীত, মানে প্রথমে শরীর একটা ধাক্কা পেয়ে গেল। এখানে আমরা রাতে অবস্থান করি। আর এইদিন আমরা রাইড করি মোটামুটি ৩৫০ থেকে ৩৬০ কিলোমিটারের মতো।

২য় দিন – শিমলাতে পাহাড়ের উপরে একটা কটেজ নিয়েছিলাম, বেশ ভালই কেটেছিল রাত। ভোরে উঠে যখন রওনা দিলাম ঠিক তখনই বাদল বিপত্তি। বাইক কোন ভাবেই সেল্ফ স্টার্ট নিচ্ছিল না। অনেক কষ্টে স্টার্ট নিল কিন্তু দশ কিলোমিটার যাওয়ার পর বাইকের আবার একই প্রবলেম। পরবর্তীতে শিমলাতে বাইক সার্ভিসিং করে নেই। এতে প্রায় চলে যায় আমাদের ৩৫০০ রুপি। এটা এই ট্রিপের প্রথম বাইকের ধাক্কা। এই জন্য বলেছিলাম এই বাইক যেন কেউ না নেয়। বাইক সার্ভিসিং করে শিমলা থেকে রওনা দেই নারকান্দার উদ্দেশ্যে। নারকান্দা মাত্র 65 কিলোমিটার আর এতে আমাদের রাত হয়ে যায় তাই দ্বিতীয় দিন আমরা নারকান্দাতেই থেকে যাই।

 

৩য় দিন – সব থেকে এক্সাইটিং একটা জার্নি ছিল এই ৩য় দিন। সম্ভবত সব থেকে রিক্সের রাস্তা দিয়ে আমরা বাইক ড্রাইভ করি এই দিনে। ৩য় দিন আমরা নারকান্দা থেকে চিতকুলের উদেশে রওনা। চিতকুল হলো ইন্ডিয়ার লাস্ট ভিলেজ আর কর্চাম থেকে চিৎকুলের রাস্তা এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, আমি জীবনে এই রাস্তা ভুলবোনা। পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে আর সেই রাস্তা এতটাই শোরু যে বলার মত না। ভুল করে যদি কিছু হয়ে যায় এই রাস্তায় তাহলে নিশ্চিত আপনার জীবন শেষ। এই দিন আমরা রাইড করেছিলাম ১৮০ কিমি মত আর চিতকুল আমরা পৌঁছে যাই মোটামুটি রাত ৮.৩০ নাগাত। ক্লান্ত শরীর রেস্ট করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। ভয়ংকর শীতের মধ্যে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমে পড়লাম।

৪থ দিন – চিত্কুলের সকাল এতটাই সুন্দর আর গ্রাম এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যা মেমোরিতে সারা জীবন থেকে যাবে। সকাল থেকে শুরু করে এগারোটা অব্দি গ্রামের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরেছি। নদীর পাড়ে বসে কল কল শব্দ আর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো মন ভরিয়ে দিয়েছে। সবকিছু শেষ করে সকালের নাস্তা করে আমরা বেরিয়ে পড়ি আমাদের গন্তব্যের দিকে আর আজকের মন্তব্য নাকো ভ্যালি।

নাকো উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেও রাস্তায় গিয়ে ঘটে এক বিপত্তি। ফুলে পৌঁছার পরেই আমরা জানতে পারি আমাদের ইনার লাইন পারমিট এর প্রয়োজন। যেহেতু এই জায়গাটা চিনা সীমান্তের খুব কাছাকাছি তাই আমাদের ইনার পারমিট নিতে হবে। পরে চেক পোস্ট থেকে জানানো হলো যে, সাব ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস রয়েছে সেখান থেকে আমরা চাইলে ইনার মিট নিতে পারবো। সুতরাং কোন উপায় না পেয়ে আমরা ফুলে অবস্থান করি। এই দিন আমরা সর্বমোট রাইড করেছিলাম ১৬০ কিলোমিটারের মতো।

এই দিনের রাস্তাটা ছিল দুর্দান্ত এতদিন যে ফটোগুলো কিংবা ভিডিও গুলো আমি ইউটিউবে দেখতাম ঠিক সেই রাস্তা দিয়ে রাইড করছিলাম আর প্রতি মুহূর্তে নিজের ভিতরে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। এই দিন আমরা দেখেছিলাম সুইসাইড পয়েন্ট। আফসোস মানুষ এই জায়গা থেকে কিভাবে সুইসাইড করে! এতটা সুন্দর একটা জায়গা যেটা হয়তোবা আপনার স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে।

৫ ম দিন – রাতে তো টেনশন হচ্ছিল যে পারমিট পাবো কি পাব না। তাই খুব ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। পরেদিন সকালে নয়টা থেকে সাব ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে বসে আছি, কখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আসবে! আমাদের পারমিটের ব্যবস্থা করে দেবে পরে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব যখন আসলেন আমরা সব ফর্মালিটি জেনে গেলাম ও পারমিট করিয়ে নিলাম। সকালে যখন পারমিট টা নিয়ে চেকপোষ্টে যাই তখন এক অন্যরকম ফিলিংস কাজ করছিল। যাই হোক ফুল চেকপোস্ট থেকে পারমিট সিল করিয়ে দিল এবং বলে দিল আরো সামনের তিনটা চেকপোস্ট আছে সেগুলোতেই দেখতে হবে সুতরাং এটা যেনো সাবধানে রাখি। এই পারমিট নিতে জনপ্রতি খরচ পড়েছিল ২০০ রুপি করে। আমাদের প্লান ছিল তাবু গিয়ে রাতে স্টে করা। যাত্রাপথে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু জায়গা পড়ে। যার জন্য আমরা অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলি। এই পথে পড়বে গুই ভ্যালি ও ৫০০ বছরের পুরন মুম্মি।

যাই হোক সুন্দর্য উপভোগের পর আমরা রওনা দেই তাবুর উদ্দেশ্যে। কিন্তু কি যেন মনে হল, আজকে এইখানে গিয়ে থাকব না। আমরা নতুন কোন জায়গায় থাকবো। তাই এই জায়গা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আগে আমরা একটা ভ্যালিতে থেকে যাই। যার নাম লারি ভ্যালি। একটা হোমস্টে তে ছিলাম। যেটা সারাজীবন মনে থাকবে। কি আপ্যায়ন রে বাবা, মানুষ গেস্টের জন্য এতকিছু করে এটা কখনোই জানা ছিল না। একদম তিব্বতিরা যা খায় সে খাবারগুলো খেয়েছিলাম। কিরকম হয় তাদের আচার-আচরণ, ধর্মীয় নীতি, কি রকম হয় তাদের খাবার, ঘর সব কিছুই নিজ চোখে দেখেছিলাম। এটা সত্যি মনে রাখার মতো। এই দিন চালিয়েছি মোটামুটি ১৪০ কিলোমিটারের মতো।

৬ থ দিন – লারিভ্যালি থেকে বের হয়ে আমরা যাই তাবু মনেষ্ট্রি দেখতে। এটা শেষ করেই আমরা বেরিয়ে পড়ি দানকারের উদ্দেশ্যে। এখানে একটা লেক রয়েছে। এটা দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দানকার থেকে দুই আড়াই ঘন্টা ট্র্যাক করে যেতে হয় লেক দেখতে যার জন্য। তাই দেখতে পারিনি, ফিরে আসি দানকারে। দনকার মনেস্ট্রি দেখে রওনা দেই কাজা এর উদ্দেশ্যে। কাজা যাওয়ার পথে দেখতে পাই পিনভ্যালে সাইনবোর্ড। অনেক আগে পিন ভ্যালির একটা ভিডিও দেখেছিলাম তাই ভাবলাম যেহেতু রাস্তায় পড়েছে, পিন ভ্যালি টা দেখে যাই। মূল রাস্তা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার রাইড করে পিনভ্যালি দেখতে যাই। জায়গাটা ভালো লেগেছিল। কিন্তু খারাপ লেগেছিল এই অফরোড রাস্তা। যাই হোক ফিরে আসি কাজায়। কাজায় হোটেল খোঁজা আর বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর ওপরে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানো দুইটাই সেম কাজ। হোটেল খুঁজতে যে পরিমাণ বেগ পেয়েছিলাম এটা বলার মত না। অবশেষে অনেক কষ্টে আমরা একটা হোটেল পেয়ে যাই। এখানেই আগামী দুই দিন থেকে যাব। এইদিন আমরা রাইড করেছিলাম মোটামুটি ১৬০ কিলোমিটারের মতো।

৭ম দিন – আজকের দিনটা একটু অন্যভাবে শুরু হয়েছে, কারণ আজকে বাইকের সাথে কোন লাগেজ নেই, শুধুমাত্র বাইক নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়েছি। আজ দেখব পৃথিবীর সবথেকে উঁচু রেস্টুরেন্ট ও পোস্ট অফিস এবং সবথেকে বড় মনেস্ট্রি।সকালে নাস্তা করে আমরা বেরিয়ে পড়ি, কি মনেষ্ট্রি দেখার জন্য। এই মনেস্ত্রি দেখতে গিয়ে কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয় পশ্চিমবঙ্গের,এই গল্পটা একটু পরে করছি। এই মনস্ট্রি দেখা শেষ করে আমরা বেরিয়ে পড়ি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস আর রেস্টুরেন্ট দেখার জন্য। কিছুটা অফরোডইং করে আমরা পৌঁছে যাই কমিকের মনিষ্ট্রি তে। এর পাশে করা হয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেস্টুরেন্ট। অসাধারণ একটা আবহাওয়া আর এখানে বসেই আমরা ম্যাগি খেয়ে নিলাম। দুর্দান্ত ওয়েদার ছিল, সবকিছু মিলে এখানকার বিকেলটা অসাধারণ ছিল। এটা শেষ করে আমরা একটু নিচের দিকে চলে আসি। এই জায়গাটার নাম হলো হেকিম। হিকিমে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস।

অনেকে দেখলাম এখান থেকে পোস্ট কার্ড কিনে প্রিয়জনদের পাঠাচ্ছে আমার চিঠি লেখার অভ্যাস নেই। তাই আমি আর সেদিকে পা না বারিয়ে কিছু ফটো তুলে এখান থেকে সোজা রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্য। হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মোটামুটি রাত হয়ে গেল আর এই দিনে আমরা বাইক রাইড করেছিলাম ৭০ কিমি মত।

৮ম দিন – হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ অবস্থিত পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল নিয়ে নিলাম। রওনা দিলাম চক্রাতালের উদ্দেশ্যে। যাত্রা পথে বেশ কয়েকটি ভ্যালি পড়বে। সবগুলো দেখা শেষ করে, আমরা পৌঁছে যাই কুঞ্জুম পাসের রাস্তায়। রাস্তা মোটামুটি ভালো মন্দ ছিল। অনেক কষ্টে আমরা পাসটা যখন পার করি তখনই শুরু হয় সব থেকে ভয়ংকর রাস্তা যে রাস্তা হয়তোবা আমি লিখে মানুষকে বোঝাতে পারবো না কতটা বাজে অবস্থা ছিল।

 

এই ভয়ংকর রাস্তা পারি দিয়ে আমরা পৌঁছে যাই চন্দ্রাতলায়। আজকের রাতে আমরা চন্দ্রাতলাতে তাবু করে থেকে যাব। চন্দ্রাতালে পৌছার পরে আমরা লেকটা ঘুরে দেখি সন্ধ্যা অব্দি।তারপর আমরা আমাদের ক্যাম্পেইনটে ফিরে যাই। ভয়ংকর বাতাস বইছিল আর শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মোটামুটি সব ধরনের কাপড় পরার পরও মনে হইতেছে শীত ভিতরে ইঞ্জেকশন এর মত করে কে যেন পুস করে দিচ্ছে।

এদিন আমরা রাইড করেছিলাম মোটামুটি ১৭০ কিলোমিটারের মতো।

৯ম দিন – কাযা থেকে আসার পথে এক ভয়ংকর ওয়াটার পাস আমরা পার করে এসেছিলাম। আজকে ঠিক ওই পথে আমাদের যেতে হবে মানালিতে। আর যেহেতু এইখানে কোন নেটওয়ার্ক ছিল না তাই আমরা চাচ্ছিলাম খুব সকালে রওনা দিয়ে, যাতে আমরা মানালিতে দুপুর নাগাদ পৌঁছে যাই। সকালের নাস্তা করে সাড়ে সাতটা – আটটা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়ি মানালের উদ্দেশ্যে। চন্ডাতল থেকে মানালির দূরত্ব খুব বেশি না। সকালে যখন বেরিয়ে পড়ি তখন আবহাওয়াটা বেশ ভালই ছিল আকাশে কোন মেঘের ছায়া পর্যন্ত ছিল না। ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার রাইড করার পরে শুরু হয় বৃষ্টি। মেঘের মাঝ দিয়ে আমরা রাইড করছি আর বৃষ্টি হচ্ছে। ৩০-৩৫ কিলোমিটার রাইড করার পরে আমাদের শরীররে একদম বরফে জমে যায়। এতটাই ভয়ংকর শীত পড়ে গিয়েছিল যে, বাদ্য হয়ে ব্যাগ থেকে সব ধরনের কাপড় বের করে পরে নেই। আর এভাবে ই সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছে যাই ছক্র নামক জায়গায়।

এ জায়গায় বসার পর ভাবলাম, যেহেতু মাত্র ১১ টা বাজে মানালিতে জেতে মাত্র তিন ঘন্টার মত টাইম লাগবে’ সো এখানে একটু চা কফি কিছু খেয়ে নেই। আহা এই চন্ডীতল থেকে ছাক্র পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার রাস্তা এতটাই বাজে অবস্থা যে, কোনদিন আমার শত্রুর জন্য এরকম রাস্তা দিয়ে যেতে না হয় এটা কামনা করব। কোন রাস্তা নেই, বড় বড় পাথর রাস্তায় পড়ে আছে,সেগুলোর উপর দিয়ে গাড়ি ঘোড়া চলাচল করতে করতে গাড়ির চাকার দাগ হয়ে গিয়েছে আর এটাই হয়ে গেছে রাস্তা। তো যাই হোক ছাক্র জায়গায় বসে আমরা চা খফি খাচ্ছিলাম, এভাবেই কখন যে দু’ঘণ্টা পার হয়ে গেছে মনে নেই। বৃষ্টিতে বসে চা খেতে ভালোই লাগছিল কিন্তু বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা যে জায়গায় বসে চা খাচ্ছিলাম তার থেকে অল্প কিছু দূরে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে পাহাড় ধ্বস হয়। এই ধ্বসের কবলে পড়ে একটি যাত্রীবাহী কার। ভেতরে স্বামী-স্ত্রী দুজন ছিল তারা কোনরকম কার থেকে বাইরে বের হয়ে দৌড় দেয় কিন্তু পাহাড় ধ্বসের কবলে এই কারটি দুমড়ে মুচড়ে যায় আর ৫০ থেকে ৬০ ফিট দূরে ফেলে দেয়। কতটা মর্মান্ত িক এবং ভয়ংকর দৃশ্য ছিল এইটা বোঝানোর মতো না, চোখের সামনে সবকিছু হচ্ছিল কিন্তু আপনার কোন কিছু করার নেই।

অবশেষে সাড়ে চারটা নাগাদ পাহাড় ধস থেমে যায় কিন্তু এতে করে রাস্তা ভেঙে যায় এবং আমরা পৃথিবী থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। কোন কারেন্ট নেই থাকার মত যথেষ্ট জায়গা নেই এরকম একটা অবস্থায় আমরা ১০০ প্লাস টুরিস্ট আটকা পরে যাই এই পাহাড় ধ্বসের কারণে। যেহেতু আমরা বাইক নিয়ে কোনো ভাবে আর সামনে আগাতে পারবনা তাই এই এখানেই একটা টেন্ট ম্যানেজ করে থেকে যাই। আজকের দিনের রাইড ছিল ৫১-৫৫ কিমি।

১০ম দিন – পাহাড় ধ্বসের কারণে আমরা পৃথিবী থেকে একদম বিচ্ছন্ন। সকাল থেকে আমরা শুধু অপেক্ষা করছি কেউ আমাদের খবর নিতে আসবে সকাল গড়িয়ে দুপুর কেউ আসে না। বিকাল ৪:০০ টা নাগ াদ হিমাচল পুলিশ আমাদের খোঁজখবর নিতে যায়। অবশেষে তারা দুইটি বাসের ব্যবস্থা করে দেয়, যে বাসে করে আমরা সব টুরিস্ট মানালিতে চলে আসি কিন্তু আমাদের বাইক থেকে যায় ছক্রতে আর আমরা মানালিতে। রাত নয়টা অব্দি পৌঁছে যাই মানালি আর হোটেলে উঠে হোটেল রুমে শুয়ে আছি কিন্তু মন পড়ে আছে বাইকের কাছে।

১১ তম দিন – বাইক পরে আছে ৬১ কিমি দূরে আর আমি মানালি হোটেল রুমে শুয়ে বসে। বিকাল নাগাদ ফোন দিলাম ডিএসপি স্যার কাছে যে রাস্তায় আপডেট কি জানার জন্য। স্যার জানালো কাল দুপুর নাগাত রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রথমে শুনে হতো বম্ব হয়ে গেলাম কেমন পসিবল এই রাস্তা এত তাড়াতাড়ি ঠিক করার!

১২ তম দিন – বাইক নিতে গেলাম মানালি থেকে ৬১ কিমি দূরে ছক্রতে। দেখি রাস্তা মোটামুটি কাজ হইছে। দেখে একটু অবাক হলাম কেমনে এত ফাস্ট সব কিছু সম্ভব। তারপর ব্যাকপ্যাক করে রেডি হলাম বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যে জায়গায় পাহাড় ধ্বস হয়েছে সেখানে আমার মত আরো ৫০+ বাইক কার অপেক্ষা করছে কখন রাস্তা পার করা যাবে। অবশেষে সেই মহেন্দ্রখন, বাইক পার করা যাবে। এক এক বাইক ৪-৫ জন্য ধরে ধরে পার করতে হবে। সব বাইকার যে জার মত পারছে হেল্প করে বাইক পার করা হলো। এই ভাবেই সব বাইক পার করতে বেজে গেলো ৩ টা। তারপর সবাই এক সাথে পথ চলা শুরু। প্রথমে ৪১ কিমি অফরোডিং তারপর পেয়ে যায় অতল টানেল রাস্তা আর আমাদের সবার মুখে হাসি ফোটে। অবশেষে টানেল ধরে আমরা পৌঁছে যায় মানালি। যেহেতু আগের ২ দিন মানালি থেকে সব কিছু এক্সপ্লোর করা হয়েছে। তাই আজ মানালি না থেকে আমরা চলে যায় কুল্লু তে। আর আজকের দিনে আমাদের রাইড হয়েছে ১১০ কিমি।

এখন রওনা দিয়েছি দিল্লির দিকে। ইচ্ছা আছে তাজমহল দেখে বাইক জমা দিয়ে আবার যাবো কাশ্মীরে। কাশ্মীরে একটা ট্রেক আছে ৯ দিনের যায় জন্য যদি কাশ্মীর। সাথে ইচ্ছা আছে ঝানকার যাওয়ার।

দুর্দান্ত একটা সময় পার করছি জীবনের। সবাই দোয়া করবেন যাতে সব কিছু শেষ করে দেশে ফিরতে পারি।

 

লিখেছেন: মোঃ মিজানুর রহমান

মন্তব্য করুন