যেহেতু আমাদের দেশে সিসি লিমিট রয়েছে এবং মোটরবাইকের উপর ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিমাণ তুলনামূলক অন্যান্য দেশের থেকে বেশ বেশি তাই আমাদের দেশে কম পরিমানে স্পোর্টস বাইক দেখা যায়। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিশেষ করে ফুল ফেয়ারড স্পোর্টস বাইকের প্রতি বেশ আগ্রহ দেখা যায়।
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে লঞ্চ হয় একটি স্পোর্টস মোটরসাইকেল যার লুকস ছিল একেবারে চোখ ধাঁধালো। একবার হলেও বাইকারদের মাঝে কৌতুহল তৈরী করেছিল এই ১৫০ সিসি’র ফুল ফেয়ারড স্পোর্টস বাইকটি। বাইকটি হচ্ছে Taro GP 1. মূলত মোটরসাইকেলটি টারো ব্রান্ডের এবং বাংলাদেশে এই ব্রান্ডের ইম্পোর্টার টারো বাংলা। টারো মটো এর ব্রান্ড অরিজিন ইতালি এবং তাদের মোটরসাইকেলগুলোর ডিজাইন, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট করে থাকে তাদের ইউরোপিয়ান টিম এবং তাদের উৎপাদনকেন্দ্র হচ্ছে চীনের Zhejiang Chuangtai Motorcycle Co., Ltd. Taro GP 1 বাইকটি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে পরিচিত। যেমন পাকিস্তানে একই বাইক Sigma Valentino নামে পরিচিত।
বাইকটি আসলে কেমন? শুধু দেখতেই সুন্দর নাকি পারফর্মেন্সও ভাল? ব্রেকিং, সাসপেনশণ, মাইলেজ, ফিচার, রিসেল ভ্যালু সব মিলিয়ে বাইকটি কেনা কি উচিত হবে? আসুন দেখে নেই বিস্তারিত।
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে লিফানের ১৪৯.৯ সিসির ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন। যেটি 16 Bhp ম্যাক্স পাওয়ার এবং 14.5 Nm টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইঞ্জিন হচ্ছে একটি মোটরসাইকেলের হার্ট. লিফান বিশেষভাবে ইঞ্জিন উৎপাদনে নামকরা কোম্পানী আর ইতোঃমধ্যে বাংলাদেশে লিফানের মোটরসাইকেল বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কেন ২৯৯,০০০ টাকায় বাইকটি কিনব?
ইঞ্জিন একটি মোটরবাইকের হার্ট কিন্তু শরীরের প্রতিটি অঙ্গের গুরুত্বও কম নয়। ভাল ইঞ্জিনের সাথে দরকার ভাল ব্রেকিং, সাসপেনশন, লুকস, বিল্ট ইন কোয়ালিটি, প্রয়োজনীয় সব ফিচার ইত্যাদি।
Taro GP 1-এর চেসিসে ব্যবহার করা হয়েছে ট্রেলিস ফ্রেম যা KTM এবং ডুকাটির বাইকগুলোতে দেখা যায়। এটি দেখতে যেমন স্টাইলিশ তেমনি বাইকদের ওজন কমিয়ে দেয়। সামনে ৩০০ mm এর ২টি এবং পেছনে ২৪০mm ১টি ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে LED প্রজেকশন হেডলাইট রয়েছে। ফ্রন্ট ইন্ড এবং হেডলাইটের কম্বিনেশনে বাইকটি দেখতে যথেষ্ট এগ্রিসিভ। হাই বিমে যথেষ্ট আলো প্রদান করে তবে লো-বিমে ফীড-ব্যাক কিছুটা কম।
ফেয়ারিং, ফুয়েল ট্যাংক কাভার এবং এজাতীয় প্লাস্টিক প্রডাক্টগুলো বেশ শক্তিশালী মনে হয়েছে। পেছনে 150/70-17 এবং সামনে 110/70-17 সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ চওড়া এই টায়ারগুলো CST ব্রান্ডের এবং টিউবলেস।
টারোর এই স্পোর্টস বাইকটির সামনে টেলেস্কোপিক সাস্পেনশন রয়েছে। স্পেশাল ইডিশনটিতে পাবেন আপ-সাইড-ডাউন (USD) সাসপেনশন। পেছনের সাসপেনশনে থাকছে সিঙ্গেল টিউব গ্যাস ফিল্ড এবজরভার যা সাধারণত হালকে ওজনের গাড়ি যেমন কার, জীপ ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। বাইকটিতে রয়েছে সাইড স্ট্যান্ড সেন্সর রয়েছে, তাই স্ট্যান্ড না উঠালে বাইকটি স্টার্ট হবে না।
নানান ফিচার সমৃদ্ধ হলেও কিছুটা ঘাটতি পাওয়া গেছে এর ড্যাশবোর্ডে। এতে পাবেন ডিজিটাল স্পীডোমিটার সাথে ওডোমিটার, ফুয়েল এবং গিয়ার ইন্ডিকেটর। তবে টেকোমিটারটি এনালক। ট্রিপমিটার এবং ক্লোক-এর অভাব অনুভব করেছি। তবে টারো বাংলা জানিয়েছে সামনে তারা এই বাইকটিতে ফুল ডিজিটাল মিটার নিয়ে আসবে। ডাবল ইন্ডিকেটর বা এমার্জেন্সী লাইট সুইচ রয়েছে Taro GP 1-এ। ফুয়েল ট্যাংকটি ১৩.৫ লিটার পর্যন্ত ফুয়েল ধারণ করতে পারে।
বাইকটির সাউন্ড বেশ লাউড এবং স্পোর্টি। যা শুনে মনে হবে কাস্টম Exhaust লাগানো হয়েছে। বাইকটির ওয়েট একটু বেশি ১৬৫ কেজি। হ্যান্ডেলবারটি কিছুটা উঁচুতে হওয়ায় স্পোর্টস বাইক হলেও সিটিং পজিশন কম্ফোর্টেবল। তবে সিট এবং ফুয়েল ট্যাংকটির শেষ দিকটি কিছুটা রাউন্ড শেপ হওয়া উচিত ছিল।
ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক তার উপড় CBS ব্রেকিং সিস্টেমের কম্বিনেশন থাকায় এর ব্রেকিং বেশ ভাল পেয়েছি। সামনের সাসপেনশনটি চমৎকার কাজ করে তবে ভাঙ্গা-চূড়া রাস্তায় পিছনের সাসপেনশনের পারফর্মেন্স কিছুটা কম।
এক্সিলারেশন চমৎকার। ০-১০০ km/H উঠাতে সময় লাগে মাত্র ১২ সেকেন্ড। গিয়ার শিফটিং ফার্স্ট এবং সফট মনে হয়েছে। ঢাকা সিটিতে মাইলেজ পাওয়া গেছে ৩৫ km/L প্লাস. আশা করা যায় হাইওয়েতে আরো বেশি মাইলেজ পাওয়া যাবে।
ফিচার, স্ট্যাবিলিটি, কোয়ালিটি, লুকস সব মিলিয়ে বাইকটি আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.