হেলমেট ছাড়া এখন বাইক নিয়ে বের হন এমন কাউকেই হয়ত আজ খুজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে একটা সময় ছিল তখন মানুষ মনে করত হেলমেট মানে বিলাসিতা। বেশীদিন আগের কথা নয় এই ৮-১০ বছর আগেও মানুষ হেলমেট পরত না, পড়লেও একদম সস্তা এবং নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করত। সময়ের পরিবর্তনে এবং আইনের প্রয়োগে বেশীর ভাগ রাইডাররাই এখন হেলমেট ব্যবহার করেন। অনেক রাইডাররাই এখন মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করে থাকেন অপরদিকে নিম্নমানের সস্তা হেলমেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আজকে আমরা জানব হেলমেট সম্পর্কে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য যেটা জানা উচিত প্রতিটি রাইডার এর।
কেন হেলমেট ব্যবহার করব?
দুর্ঘটনার ইমপ্যাক্ট কমাতেই আসলে হেলমেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোটরবাইক দুর্ঘটনায় শরীর এর তিনটি জায়গায় সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তা হচ্ছে মাথা, হাতের কনুই এবং পায়ের হাটুতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইমপ্যাক্ট পড়ে মাথায় এবং ঘাড়ে। মাথার পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মারা যাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী হয়। তাই মোটরবাইক চালানোর সময় সবসময় হেলমেট ব্যবহার করার বিষয়টি সারা পৃথিবীতে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।
হেলমেট কত প্রকার?
সাধারনত কয়েকটি ধরনের হেলমেট পাওয়া গ্লোবালি ব্যবহার হয়। ফুলফেইস, মটোক্রস, মডিউলার, ওপেন ফেইস এবং হাফ ফেইস।
কোন হেলমেট ব্যবহার করব?
অবশ্যই ফুলফেইস হেলমেট ব্যবহার করা উচিত। ফুলফেইস হেলমেট সবচাইতে নিরাপদ এবং এক্সিডেন্ট ইমপ্যাক্ট সবচেয়ে কম হয় ফুলফেইস হেলমেট ব্যবহারের ফলে। আর মানের দিক দিয়ে বিবেচনা করতে গেলে দেখা যায় অনেকেই মনে করে থাকেন দামী হেলমেট মানেই ভাল হেলমেট । আসলে এই ব্যপারটি সঠিক নয়। হেলমেট এর কোয়ালিটি দামের উপর নির্ভর করে না। হেলমেট এর গুণগত মান নির্ভর করে এর বিল্ড কোয়ালিটি, ইনার এবং আউটার শেল, প্যাডীং এর কমফোরটনেস, ফেইস শিল্ড, লক এই কমপোনেন্ট গুলোর উপর।
কীভাবে বুঝব হেলমেটের কোয়ালিটি?
একজন গ্রাহক এর পক্ষে কখনই সম্ভব নয় যে সে হেলমেটটি কেনার আগে তা টেস্ট করে তার মান যাচাই করবে। বিভিন্ন দেশের কিছু অরগানাইজেশন নানা রকম প্রয়োজনীয় টেস্ট এর মাধ্যমে হেলমেটের গুণগত মানের সনদ দিয়ে থাকে যাকে বলা হয় হেলমেট সারটিফিকেশন। হেলমেটের গুণগত মান নিয়ে জানতে হলে আগে জানতে হবে এটির সারটিফিকেশনস। বিভিন্ন রকম সারটিফিকেশন রয়েছে যা সম্পর্কে আমরা এখন জানব।
১। SHARP Rating – শার্প রেটিং হচ্ছে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্ট এর উদ্যোগে একটি টেস্ট প্রসেস যার মাধ্যমে হেলমেট এর গুণগত মান সম্পর্কে রেটিং দেয়া হয়ে থাকে। ৫ স্টার পর্যন্ত রেটিং তারা দিয়ে থাকে। শার্প রেটিং ৪ স্টার প্রাপ্ত সকল হেলমেটই নিরাপদ এবং গুঙ্গ মানে অনন্য। আপনি চাইলে নিজেও যাচাই করতে পারবেন আপনার হেলমেট এর শার্প রেটিং। https://sharp.dft.gov.uk/sharp-testing/ এই লিঙ্ক এ প্রবেশ করে আপনার হেলমেট এর ব্র্যান্ড এবং মডেল নাম্বার শেয়ার করে সরাসরি দেখতে পারবেন আপনার হেলমেটটির রেটিং কত।
২। SNELL – স্নেল মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন দ্বারা নির্ধারিত মান। স্ট্যান্ডার্ডটি খুব নির্দিষ্ট এবং মোটরসাইকেল রেসিং এর উপর বেইজ করে হেলমেটের টেস্ট করে থাকে। স্নেল সার্টিফিকেশন আসে অলাভজনক এবং বেসরকারি সংস্থা স্নেল মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন থেকে করা হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যা রেসিং বা স্পোর্টিং গিয়ারের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। সিটি রাইডে ব্যবহারের জন্য বর্তমান মান হল SNELL M2020।
৩। DOT – ডট সারটিফিকেশন অন্যতম জনপ্রিয় একটি সারটিফিকেশন যা দিয়ে থাকে ইউনাইটেড স্টেইটস অফ আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্টেশন । ডট ফেডারেল মোটর ভেহিকেল সেফটি স্ট্যান্ডার্ড (এফএমভিএসএস) থেকে মান এবং নিয়ম অনুসরণ করে। DOT সার্টিফিকেশন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলির সবচেয়ে বেসিক এবং সর্বনিম্ন মার্জিন নিশ্চিত করে।
৪। JIS – জাপানিজ ইণ্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ড (JIS) হচ্ছে জাপানিজ সারটিফিকেশন যা জাপানিজ সরকার হতে এই সারটিফিকেশনটি দেয়া হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি জাপানিজ কোয়ালিটি সারা পৃথিবীতে কতটা জনপ্রিয়। জাপানিজ ইঞ্জিনিয়ার দারা পরীক্ষিত এবং জাপানের সরকার থেকে স্বীকৃত হেলমেটের স্ট্যান্ডারড সারটিফিকেশন হচ্ছে এই JIS সারটিফিকেশন।
৫। SISIR – এটি সিঙ্গাপুর এর সারটিফিকেশন স্ট্যান্ডার্ড যা সবসময় হাইয়েস্ট কোয়ালিটির ব্র্যান্ড গুলোই নিয়ে থাকে। সাধারন মানের কোন হেলমেটে এই সারটিফিকেশন থাকে না।
৬। NBR 7471 – এটি ব্রাজিল এর সরকারী সেইফটি সংস্থা হতে ইস্যু করা একটি আন্তর্জাতিক মানের সারটিফিকেশন। এই সারটিফিকেশন থাকা মানে আপনার হেলমেটটি রেইসট্র্যাক এবং সিটি রাইডিং উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার উপযোগী ।
৭। ECE 22.05 – ECE 22.05 সার্টিফিকেশন ইউরোপের ইকোনমিক কমিশন থেকে আসে। ECE সার্টিফিকেশন ১৯৫৮ সালের জাতিসংঘ চুক্তির ধারা নং ২২ এর নিতি ফলো করে থাকে। রেগুলেশনের নিয়ে বলতে গেলে, ECE 22.05 এর স্ট্যান্ডার্ড এবং টেস্টিং পদ্ধতিটি DOT রেগুলেশন এবং স্ট্যান্ডার্ডের মতই অনেকটা । এই বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড ইউরোপের ৫০ টিরও বেশি দেশ ব্যবহার করে।
৮। SNI – ইন্দোনেশিয়ান সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী SNI সারটিফিকেশন সরকার ইস্যু করে থাকে। উন্নত মানের হেলমেটের অন্যতম গুরুত্তপুরন সারটিফিকেশন হচ্ছে এই SNI সারটিফিকেশন।
কোন সার্টিফিকেশনটি বেশী ভাল / কোন সার্টিফাইড হেলমেটটি কিনব?
উপরে উল্লেখিত সবগুলো সারটিফিকেশনই আন্তর্জাতিক মানসম্মত এবং সেইফটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড ফলো করে ম্যানুফেকচার করা হয়। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেই ব্র্যান্ডের হেলমেটটির সব চেয়ে বেশী সারটিফিকেশন রয়েছে তার নির্ভরযোগ্যতা সবচেয়ে বেশী। বেশীরভাগ হেলমেট এরই ১ টি সারটিফিকেশন থাকে যা অতটা নিরাপদ নয়। আমরা চেস্টা করব উপরের লিস্টের অন্তত ৩ টি সারটিফিকেশন আভেলাইবল রয়েছে এমন ব্র্যান্ডের হেলমেট ব্যবহার করতে।
কোন কোন ব্র্যান্ডের হেলমেট সার্টিফাইড?
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সার্টিফাইড হেলমেট পাওয়া যায়। এর মধ্যে Nolan, X – Lite, MT Helmets, HJC, Shark, KYT, SOL ইত্যাদি ব্র্যান্ডের হেলমেটগুলো সারটিফাইড।
আশা করি আজকের এই আলোচনায় হেলমেট নিয়ে অনেকেই জানতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন হেলমেটের গুরুত্ত।
সবাই হেলমেট ব্যবহার করবেন এবং সেইফ রাইড করবেন।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩