আমি আশিক মাহমুদ, একজন বাইকার। বাইকিং জগতটা নিয়ে পড়ে আছি বেশ অনেক বছর ধরে। আর সব সময় চেস্টা করে আসছি নিজের অভিজ্ঞতাগুলো বাইকারদের মাঝে শেয়ার করার যাতে এটা কারো না কারো উপকারে আসে। যাই হোক এবার আসল কথায় ফিরে আসি। আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো সেটা বাইকের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস, তা হলো বাইকের টায়ার।
সিয়েট, এম আর এফ, সিএসটি, প্রিলি, টিমসান ইত্যাদি টায়ার সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু আমাদের নিজের দেশে কি তৈরী হচ্ছে সেটা আমরা খুব একটু মানুষই কানে নেই। আজ আমি যেই টায়ারটির ইউজার রিভিউ লিখছি সেটি একটি বাংলাদেশী টায়ার, নাম টোরিনো ট্যায়ার, টোরিনো মূলত বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এপেক্স-হুসাইন গ্রুপের একটি পন্য। টোরিনো আমাদের দেশে হুসেনই টায়ার নামে বেশি পরিচিত। কিছু কাল আগে তাদের মোটরসাইকেল টায়ারকে “Tourino Bike Tyres” নামে রি-ব্রান্ডিং করা হয়েছে। আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন ট্যুরিনো প্রায় ২৪ প্যাটার্নের ২৯ ধরনের টায়ার তৈরী করে আসছে।
যাই হোক, আমি টোরিনো রেস কিং টায়ারটি ব্যবহার করেছি আমার পালসার ১৫০ ইউ জি ফোর বাইকটিতে, টায়ারের সাইজটি ছিলো ১২০/৮০-১৭। টায়ারটি আমি ব্যবহার করেছি প্রায় ১৭০০ কি.মি, এখনো ব্যবহার করছি, ব্যবহার করে যে দিকগুলো আমার চোখে পড়লো তা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

Torino Raceking 120/80-17
টোরিনো রেস-কিং (১২০/৮০-১৭) ভালো দিক গুলোঃ
১। টায়ারটি দেখতে বেশ সুন্দর, টায়ারের গ্রিপ স্টাইল অথবা ডোরা গুলো যে কোন মানুষের কাছেই খুব ভালো লাগবে।
২। টায়ারটি সফট প্যাটানের যার ফলে এই টায়ারটি বেশ ভালো গ্রিপ দিতে সক্ষম, আর এর ফলে আপনি পাবেন একটি ভালো মানের ব্রেকিং এর নিশ্চয়তা।
৩। ভাংগা রাস্তার মধ্যেও টায়ারটি বেশ ভালো পারফর্মেন্স দেয়।
৪। হাই স্পীড কর্ণারিং এর সময় ট্যায়ারটি কোন প্রকারের স্কীড করে না। তাই আপনার কর্ণারিংটি হয়ে ওঠে আরো নিরাপদ।
৫। পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই, আমি এর আগে আমার পালসার ১৫০ তে সিএট ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন ট্যুরিনো রেস কিং ব্যবহার করে আমার একটি বারের জন্যও মনে হয় নি যে আমি কোন দেশি টায়ার ব্যবহার করছি।
রেস-কিং টায়ারটির কিছু খারাপ দিকগুলিঃ
১। বিটগুলা একটু উচু হওয়াতে বাইকের হাইট কিছুটা বেড়ে যায়, যা কিনা অনেকের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে।
২। প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ প্রথম ১৫০-২০০ কি.মি টায়ারটি খুব ভালো গ্রিপ দিতে সক্ষম নয়, কিন্তু কিছুদিন ব্যবহারের পর তা ঠিক হয়ে অসাধারন গ্রিপ প্রদান করে।
৩। রেস-কিং টায়ারটির বিটগুলো বেশ পুরু হওয়ায় টায়ার থেকে কিছুটা কাদা বাইকে ছড়িয়ে যায়। যদি আপনার বাইকে টায়ার গার্ড না থাকে তাহলে এটা আপনার কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে।
চলুন এবার কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দেই।
ট্যুরিনো রেস কিং টিউওবলেস টায়ারের কোন বিষয়টি আপনার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
উত্তরঃ টায়ারের গ্রিপিং আমার কাছে অসাধারন লেগেছে যার ফলে বাইক থেকে ভালো মানের একটি ব্রেকিং পাওয়া যায়।
আমি কি আমার বাইকে ট্যুরিনো টায়ার ব্যবহার করতে পারবো?
উত্তরঃ ট্যুরিনোর আছে ২৪ প্যাটার্নের প্রায় ২৯ ধরনের টায়ার, এর মধ্যে যে কোন একটি অবশ্যই আপনার বাইকে ব্যবহারের উপযোগী।
ট্যুরিনো রেস কিং কোন কোন বাইকে ব্যবহার করা যাবে?
উত্তরঃ Pulsar DTSi 150, Hero Hunk, Keeway RKS 125 এই জাতীয় বাইকগুলোতে টায়ারটি ব্যবহার করা যায়।
কতদিন টিকবে?
উত্তরঃ দেখা যাক কতদিন টিকে, তবে এর পারফর্মেন্স থেকে যেটুকু বুঝতে পারলাম তাতে মনে হল বেশ ভালো লাস্টিং করবে।
দাম কেমন?
উত্তরঃ যেহেতু ভাল মানের টায়ার তাই দাম একেবারে কম হবে এটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। তবে বাজারের অন্যান্য যে কোন বিদেশী ব্রান্ডের টায়ার থেকে দাম কিছুটা হলেও কম এর সব সাইজের টায়ারের।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই দেশি পন্য মানেই খারাপ না, আর শোনা কথায় কান দিতে নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে বিদেশি ব্রান্ডের টায়ারের সাথে প্রতিযোগিতা করে কিছু কিছু দিকে খানিকটা এগিয়ে থাকবে টোরিনো বাইক টায়ার।
লিখেছেনঃ আশিক মাহমুদ
- মোটরসাইকেলের দাম কি আরো বাড়বে? (বিস্তারিত জেনে নিন) - জানুয়ারি ২২, ২০২৫
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.