টায়ার একটি মোটরসাইকেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যার সাথে সরাসরি নির্ভর করে একটি বাইকের ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স। বিশেষ করে স্পোর্টস বাইকগুলোর টায়ার পছন্দের সময় বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়। টায়ার রাস্তায় কেমন গ্রিপ করবে, কর্ণারিংয়ে ঠিকঠাক ব্যালেন্স পাওয়া যাবে কিনা, ব্রেকিংয়ের সময় পারফেক্ট ব্যালেন্স হচ্ছে কিনা, নির্দিষ্ট মডেলের বাইকের জন্য টায়ারটি কতটা উপযোগী, বৃষ্টি কিংবা ভেজা রাস্তায় এটি কতটা পারফর্ম করবে, অফরোডে এর ফীডব্যাক কেমন হবে, মান কেমন, দাম হাতের লাগালে কিনা, দীর্ঘ দিন টেকসই হবে কিনা ইত্যাদি নানা কিছু।
একটা কোম্পানী যখন কোন মোটরসাইকেল উৎপাদন করে তখন সেটির কোয়ালিটি নিশ্চিত করা জন্য তারা নানা ধরনের টেস্টিং করে থাকে। যাচাই বাছাই করে তাদের নির্ধারিত মডেলের বাইকের জন্য পারফেক্ট টায়ার পছন্দ করে। তবে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য তারা সাধারণত কোন নির্দিষ্ট মডেলের টায়ার উল্লেখ না করে বরং কিছু গাইড লাইন দিয়ে থাকে। প্রতিটি টায়ারের গায়ে লেখা থাকে তার বৈশিষ্ট্য, তাই স্টক টায়ারের মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেছে নিতে হয় নির্ধারিত টায়ারটি। যেমন টায়ার সাইজ, প্রস্তুতকরণের ধরণ, টায়ার কম্পাউন্ড, সাইডওয়াল, ম্যাক্স লোড, ম্যাক্স কোল্ড প্রেসার, স্পীড ইনডেক্স ইত্যাদি কেমন হবে।
আসুন দেখে নেয়া যাক কিছু বেসিক জিনিস যেগুলো সাধারণত টায়ারের গায়ে লেখা থাকে। যেমন Yamaha R15 V3 (ইন্দোনেশিয়ান) তে ইয়ামাহা স্টক টায়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে আইআরসি ব্রান্ডের টায়ার যার গায়ে লেখা আছে এমন, IRC Road Winner RX-01R 140/70-17 MC 66S.
Road Winner RX-01 মূলত টায়ারের মডেল এবং এর সাথে “R” যুক্ত করার কারণ এটি রেডিয়াল টায়ার। টায়ারটি 140mm প্রসস্থ, উচ্চতা টায়ারের প্রসস্থের 70% যা 98mm এবং 17 M/C দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে বাইকের চাকার রিমের ব্যাস ১৭ ইঞ্চি যাতে এটি ফীট করবে। “66S” দ্বারা সাংকেতিক ভাবে বোঝানো হয়েছে টায়ারটির লোড ইনডেক্স এবং স্পীড ইনডেক্স। “66” দ্বারা বোঝানো হয়েছে সঠিক টায়ার প্রেসারে এটি সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি পর্যন্ত লোড নিতে সক্ষম। “S” দ্বারা বোঝানো হয়েছে টায়ারটির স্পীড ইনডেক্স ১৮০ কিঃমিঃ/ঘন্টা অর্থ্যাৎ সর্বোচ্চ এই গতিতে চলার জন্য এটি সক্ষম। যদিও একটি টায়ার ঠিকই যে কোন গতি উৎপন্ন করতে পারে কিন্তু সেটি কতটুকু স্ট্যাবল তা এই স্পীড ইনডেক্স দ্বারা বোঝানো হয়।
নিচের চার্টটি ফলো করলে লোড এবং স্পীড ইনডেক্সটি বুঝতে পারবেন।
LOAD INDEX | KILOGRAMS |
65 | 290 |
66 | 300 |
67 | 307 |
68 | 215 |
69 | 325 |
70 | 335 |
71 | 345 |
72 | 355 |
73 | 365 |
74 | 375 |
75 | 387 |
SPEED SYMBOL | Approx MPH | Approx KM/H |
P | 93 | 150 |
Q | 99 | 160 |
R | 106 | 170 |
S | 112 | 180 |
T | 118 | 190 |
H | 131 | 210 |
V | 149 | 240 |
VR | 131 | 210 |
W | 168 | 270 |
Y | 186 | 300 |
ZR | 149 | 240 |
আপনার বাইকের জন্য টায়ার বাছাইয়ের সময় অবশ্যই আপনাকে টায়ারের সাইজ ঠিক রাখতে হবে। রিমের সাইজ শুধু ঠিক থাকলে চলবে না কারণ টায়ারের প্রস্থ এবং উচ্চতা যদি ঠিক না হয় তাহলে আপনি পারফেক্ট ব্যালেন্স পাবেন না। টিউব হলে টিউব টায়ার এবং টিউবলেস হলে সেটি ব্যবহার করতে হবে। প্রস্তুতকরণের ধরণ রেডিয়াল নাকি বায়াস রিকমেন্ড করা হয়েছে সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। ফ্রন্ট এবং রেয়ার টায়ারে একই প্যাটার্নের টায়ার ব্যবহার করলে ভাল ব্যালেন্স পাওয়া যায়। কোম্পানী কি রিকমেন্ড করেছে, রাস্তা-ঘাট এবং আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে বেছে নিতে হবে আপনি সফট নাকি হার্ড কম্পাউন্ড টায়ার ব্যবহার করবেন। টায়ার প্যাটার্নের সাথে দেখে নিতে হবে টায়ারটি কি পরিমাণ কার্ভ, আপনার স্টক টায়ারের মত কিনা এবং আপনি কেমন কর্ণারিং সক্ষমতা চাচ্ছেন।
তো যাই হোক, আমার Yamaha R15 V3 তে এতকাল যাবৎ স্টক টায়ার ব্যবহার করে এসেছি। টায়ার রিপ্লেসমেন্টের সময় ২-৩ টা ব্রান্ড পছন্দের তালিকায় ছিল। কিছু দিন যাবৎ টোরিনো টায়ারের বেশ নাম ডাক শুনছিলাম। তার উপর “মেড ইন বাংলাদেশ” বলে আরো সফট কর্ণার কাজ করে। এর আগেও পরিচিতদের কাছে টোরিনো টায়ারের ভাল ফিডব্যাক শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখলাম টোরিনো এর একটি রেয়ার টায়ার R15 V3 এর সাথে ম্যাচ করে যেটি হচ্ছে Road Gripper (140/70-17). টোরিনো এর আরো ২টি ১৪০ সেকশন টায়ার রয়েছে যে দু’টি হচ্ছে Tourino Aviva এবং Blade কিন্তু সেগুলো’র সাইজ 140/60-17. Yamaha FZs V3, Suzuki Gixxer এর জন্য ওই টায়ার দু’টি ম্যাচ করবে। কিন্তু R15 V3 এর জন্য একমাত্র পারফেক্ট Tourino Road Gripper.
টোরিনো রোড গ্রিপার R15 V3 এর স্টক টায়ারের ফিচারের সাথে প্রায় একদম ম্যাচ করে। এটি সফট কম্পাউন্ড রেডিয়াল টায়ার এবং টায়ার প্যাটার্ন দেখেও বোঝা যাচ্ছিল এটি ভাল গ্রিপ করবে। সবচেয়ে যে জিনিসটি আমি বেশি বেশি খেয়াল করেছি তা হচ্ছে টায়ারটি কি পরিমাণ কার্ভ বা প্রসস্তের দিকে বাঁকানো। কারন আমি সুযোগ পেলে কর্ণারিং করতে ভালবাসি আর স্পোর্টস বাইকে এই ধরনের টায়ারই দরকার। সে দিক থেকে Road Gripper আমার R15 V3 এর সাথে ভাল ম্যাচ করেছিল।
R15 V3 এর সামনের চাকার জন্য নিয়েছিলাম Tournio SuperRide (100/80-18) কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এক এক করে টায়ারের পারফর্মেন্স চেক করতে। আর হুট করে ২টা টায়ার চেঞ্জ করলে রাইডিং ফিল কেমন হবে সেটিও ভেবেছিলাম। অন্যদিকে সামনের স্টক টায়ারটির অবস্থাও ভাল ছিল। তাই ফাইনালি বাইকের রেয়ার টায়ার হিসেবে ইন্সটল করে ফেললাম Tourino Road Gripper.
বাইকের যেমন ব্রেক-ইন-পিরিয়ড থাকে তেমনি একটি টায়ারেরও ব্রেক-ইন-পিরিয়ড রয়েছে। তাই শুরুতে পারফর্মেন্স নিয়ে কিছু ভাবছিলাম না। তবে ধীরে ধীরে খেয়াল করছিলাম কর্ণারিং স্ট্যাবিলিটি কেমন, ব্রেকিংয়ের সময় ব্যালেন্স একদম পারফেক্ট কিনা ইত্যাদি। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হলাম আর সাহস বেড়ে গেল। প্রথম ১০০ কিঃমিঃ (আনুমানিক) এর পর থেকে কনফীডেন্স দারুণ বেড়ে গেল। যেমন টায়ার গ্রিপ তেমন কর্ণারিং স্ট্যাবিলিটি। টায়ার ইন্সটল করার কয়েক দিন পর প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার লং ট্যুর দিয়েছিলাম। ওই দিনে রাইডে প্রায় পুরো রাস্তায় বৃষ্টি ছিল। Tourino Road Gripper এর টায়ার প্যাটার্ন এবং সফট কম্পাউন্ডের হওয়ায় বৃষ্টির দিনেও বেশ ভাল গ্রিপ পেয়েছি।
আর হাই স্পীড কর্ণারিংয়ে কখনো স্কীড করেনি। তবে যেহেতু এই টায়ারটি স্পোর্টস বাইক এবং অন-রোডের জন্য প্রস্তুতকৃত তাই এটি নিয়ে অফ-রোডে খুব ভাল পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে না, যা আমি আগের স্টক টায়ারটিতেও পাইনি। আর এটা আশা করাই অবান্তর কারণ একটা স্পোর্টস বাইক সাধারনণত খুব একটা অফ-রোড সহনীয় হয় না।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টায়ারটির পারফর্মেন্স সব দিক থেকেই আমাদের দারুণ লেগেছে। এখন শুধু অপেক্ষায় আছি টায়ারটি কত দিন পর্যন্ত টেকসই হয়। তবে আমার কাছে এখন পর্যন্ত মনে হয়েছে এটি আগের স্টক টায়ারটির মতই লাস্টিং করবে। দেখা যাক। আর আগামীতে চেষ্টা করব আরো একটি লং টার্ম রিভিউ লেখার। তো যাই হোক দেশীয় একটি ব্রান্ড যদি ভাল টায়ার প্রস্তুত করে আর সেটা ব্যবহার করে মনের মত পারফর্মেন্স পাওয়া যায়, তাহলে দেশী পণ্যের প্রতি ভালবাসা বাড়ে। টোরিনো বাংলাদেশে প্রথম টিউবলেস টায়ার প্রস্তুত করে আর দিনকে দিন তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বমানের টায়ার উৎপাদন করছে। তারা মোটরসাইকেলের জন্য ২৪ প্যাটার্নের ২৯ ধরনের টায়ার প্রস্তুত করে। বাংলাদেশে এভেইলেভেল এমন সব বাইকের জন্যই তাদের বিভিন্ন মডেলের টায়ার রয়েছে।
Tourino Road Gripper এর এই ১৪০ সেকশন টায়ারটির দাম ৪৫০০ টাকা। সারা দেশে টোরিনো এর প্রায় ৪০০ টি’রও বেশি ডিলার পয়েন্ট রয়েছে যেখানে এই টায়ারটি পাবেন। এমন কি অনলাইন শপ Daraz থেকেই টোরিনো এর সব টায়ার এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
Tourino Road Gripper- টায়ারটি Yamaha R15 V3, Yamaha MT 15, Honda CB Hornet 160R, Loncin GP ইত্যাদি বাইকের জন্য উপযোগী।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.