অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর ছাড়া মোটরসাইকেল ক্রয় করা উচিত না কেন

আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মোটরসাইকেল কোম্পানীর অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর তারাই যারা ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড কর্তৃক স্বীকৃত এবং একটি দেশে একমাত্র পরিবেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যেমন বাংলাদেশে ইয়ামাহার এসিআই মোটরস লিমিটেড, বাজাজের অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর উত্তরা মোটরস লিমিটেড, সুজুকির র‍্যাঙ্কন মোটরবাইক লিমিটেড ইত্যাদি।

প্রতিটি অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর সারা দেশে ডিলার শপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলগুলো বিক্রি করে থাকে এবং যেহেতু তারা বড় পরিসরে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ব্যবসা করে তাই বিক্রির পর স্পেয়ার পার্টস, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি তারা দেশের সকল প্রান্তে দিয়ে থাকে।

তাহলে আন-অথরাইজডভাবে মোটরসাইকেল আমদানী করছে কারা?

আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশে এখন কেটিএম ব্রান্ডের বাইকও পাওয়া যায় কিন্তু খুব স্বল্প পরিমাণে দেশে আসে এবং সব সময় স্টকে থাকে না। মূলত বাংলাদেশে এমন বেশ কিছু কোম্পানী আছে যারা ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড স্বীকৃত না হয়েও ব্যবসায়ীক স্বার্থে দেশে মোটরসাইকেল আমদানী করে। শুধু তাই নয় এমন অনেক ইম্পোর্টার আছে যারা দেশে ওই ব্রান্ডের অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর আছে তবু ওই কোম্পানীর কোন নির্দিষ্ট মডেলের বাইক দেশে আমদানী করে বিভিন্ন দেশ থেকে।

যেমন বাংলাদেশে ইয়ামাহা’র মোটরসাইকেল ডিস্ট্রিবিউশন করে এসিআই মোটরস লিমিটেড কিন্তু দেখবেন তাদের বেশ কিছু প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক যেমন Yamaha R15 V3, Yamaha M Slaz ইত্যাদি নানান স্পোর্টস বাইক আমাদের দেশে এসিআই মোটরস আনার আগেই ইন্দোনেশিয়া থেকে অন্য ইম্পোর্টার মারফত দেশে এসেছে এবং এখনো আসছে। ঠিক তেমনি Honda CBR 150R, Honda CB150R Exmotion, Suzuki GSX-R, Suzuki GSX-S ইত্যাদির ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে।

এসব ইম্পোর্টার থেকে মোটরসাইকেল ক্রয় করলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?

১। দামঃ বাইকের নির্দিষ্ট কোন দাম নির্ধারন করা থাকে না। তাই অনেক সময় একই মোটরসাইকেল বিভিন্ন জন বিভিন্ন দামে কিনতে দেখা যায়। বাজারে চাহিদা বেশি হলে দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বি।

২। স্পেয়ার পার্টসঃ প্রয়োজনে কোন স্পেয়ার পার্টস পাবেন কিনা এর দায়ভার ইম্পোর্টারদের নয়। তখন হয়তো আপনাকে বেশ খুঁজে বের করতে হবে কারা আপনার বাইকার পার্টস ইম্পোর্ট করছে। দাম অন্ততঃ ৩-৪ গুণ বেশি। অনেক সময় অনেক খুঁজেও হয়তো আপনার কাংখিত পার্টসটি পাবেন না।

৩। কাস্টমার সার্ভিসঃ কোন প্রকার সেলস আফটার সার্ভিস আপনি পাবেন না। শুধু মোটরসাইকেল বিক্রির মধ্যে যেহেতু তারা সীমাবদ্ধ, তাই সার্ভিসিংয়ের সময় বাড়তি খরচ বহন করতে হবে আপনারই। আর প্রিমিয়াম সেগমেন্টের মোটরসাইকেলগুলোর জন্য দক্ষ মেকানিক খুঁজে পাওয়া বেশ দূষ্কর হয়ে যায়।

৪। রেজিস্ট্রেশন ঝুঁকিঃ ইদানিং প্রায়ই শোনা যাচ্ছে এসব ইম্পোর্টার মারফত আসা মোটরসাইকেলগুলোর রেজিস্ট্রশন করতে অনেক ক্রেতারাই নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

৫। আজ আছে কাল নেইঃ মূলত এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা বুঝে এক এক ব্রান্ডের বিভিন্ন মডেলের বাইক আনে। বাজারে চাহিদা না থাকলে সেটি আর তারা নাও আনতে পারে। আপনার ব্যবহৃত বাইকের পরিমাণ দেশে যত কম, আপনার স্পেয়ার পার্টস পেতে তত বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে। আর এটি প্রভাব ফেলবে মোটরসাইকেলটির রিসেল ভ্যালু-এর উপরেও।

এমন ঝুঁকি নিয়েও আমরা মোটরসাইকেলগুলো কিনি শুধুমাত্র অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটরদের আগে অনেক সময় দেশে আসে এবং বাড়তি আগ্রহের কারণে। প্রথমত, দেশে যারা অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর আছে তাদের উচিত তাদের ব্রান্ডের কোন মডেলের বাইক অন্য দেশে লঞ্চ হলে দ্রুত সেটি আমদানী করা। দ্বিতীয়ত, মোটরসাইকেল বিক্রি করলে অবশ্যই স্পেয়ার পার্টস এবং সেলস আফটার সার্ভিসের নিশ্চয়তা দিতে হবে এমন কোন আইন তৈরী হওয়া। তৃতীয়ত, ক্রেতাদের উচিত হবে নিজের ভাল বুঝে যেখানে বাইক কিনলে পরিপূর্ট সাপোর্ট পাওয়া যাবে সেই শো-রুম থেকেই মোটরসাইকেল ক্রয় করা।

Related Posts

error: Content is protected !!