ফগ লাইট সব ধরনের যানবাহন চালক, বিশেষ করে বাইকারদের কাছে খুবই পরিচিত একটি জিনিস। ফগ লাইট মূলত এলইডি চিপ, রেজিস্টেন্ট, ডায়োট, সার্কিট বোর্ড ও আতশী কাচ এর সাহায্যে তৈরি হওয়া একটি পরিপূর্ণ সার্কিট। যা একটি কেসিং এর মধ্যে বসানো হয় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ এর সাহায্যে এটি থেকে আলো উৎপন্ন হয়। সাধারণত অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা ও রাস্তায় থাকা বস্তু দৃষ্টিগোচর হওয়া এবং ভালোভাবে চলাচল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ফগ লাইট লাগানো হয়। এই লাইট এন্টি ফগ লাইট বা ক্রি লাইট নামেও পরিচিত।
বর্তমানে যে সকল মোটরসাইকেল বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর হেডলাইট হিসেবে থাকে হ্যালোজেন লাইট অথবা এলইডি হেডসেট। এই হ্যালোজেন লাইট অথবা এলইডি হেডসেট গুলোর আলো রাতের বেলা হাইওয়েতে চলার জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে বাইক রাইডার এর রাতের বেলা রাইড করা বেশ ঝুকি পূর্ণ হয়ে যায়। রাতের বেলা সেইফ ভাবে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য একজন মোটরসাইকেলিস্টের ডিফল্ট হেডলাইটের আলোর থেকেও একটু বেশি আলোর প্রয়োজন হয়। আর এই প্রয়োজন মেটাতেই বাজারে আছে বিভিন্ন দামের ও মানের এন্টি ফগ লাইট।
বাজারে যে সকল ফগ বা ক্রি লাইট পাওয়া যায় নিচে তার একটি লিস্ট দেয়া হলো:
ফগ লাইট বা এন্টিফগ লাইটের ব্যবহারঃ
১) আলো স্বল্পতায় এর ব্যবহারঃ
বাংলাদেশের বেশির ভাগ হাইওয়েতে রোড লাইটের ব্যাবস্থা নেই। বড় যানবাহন গুলো যেখানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাল্টিপল হেডলাইট নিয়ে অন্ধকার হাইওয়েতে দাপিয়ে বেড়ায়, সেখানে বাইকাররা আলো স্বল্পতায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়। ফগ লাইটের ব্যবহারে একজন মোটর সাইকেল চালক তার হেডলাইটের পাশপাশি বেশ কিছু আলো তার বাইকে সংযুক্ত করতে পারে। ফলে অন্ধকার হাইওয়েতে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে তার মোটর বাইকটি চালাতে পারে।
২) কুয়াশায় এর ব্যবহারঃ
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের আবহাওয়াতে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শীতকালে অতিমাত্রায় কুয়াশা পরা। কুয়াশা চাদর এত ঘন হয় যে ৩-৪ গজ দূরের বস্তুকেও ঠিকঠাক ভাবে দেখা যায় না। এ সময় মোটরসাইকেল চালানো অনেক বিপদজনক, কারণ কুয়াশার কারণে চালকের ভিসিবিলিটি একদম কমে যায়। বাইকে থাকা AHO সিস্টেমের জন্য অনেক সুবিধা হলেও, বাংলাদেশের কুয়াশার ঘনত্বকে ভেদ করে খুব বেশি দূর পৌঁছায় না AHO সিস্টেমে জ্বলতে থাকা বাইকের হেডলাইটের আলো। এমত অবস্থায় রাস্তা দেখার জন্য এবং নিজের অস্তিত্ব অন্যকে জানান দেয়ার জন্য এন্তিফগ বা ক্রি লাইটের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এই লাইটের লুমেন বেশি থাকার কারণে এর কুয়াশাকে ভেদ করতে সক্ষম।
৩) বড় যানবাহনের আলোর প্রখরতা থেকে বাঁচতে এর ব্যবহার:
আমাদের দেশের হাইওয়েগুলোতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা করে লেন না থাকার কারণে বড় যানবাহন এবং মোটরসাইকেল একসাথে চলাচল করে। একটি বড় যানবাহনে লাইটের যে ধরনের সেটআপ থাকে তাতে করে সাধারণভাবে তাদের লাইট জ্বালিয়ে রাখেও অপজিট সাইট থেকে আসা একজন মোটরসাইকেল আরোহীর চোখ ঝলসে যায়। এতে করে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড় একটি বড় যানবাহনকে ওভারটেকিং এর সময় আপার ডিপার্টের প্রয়োজন হয়। এই আপার ডিপার্ট এর লাইট যদি পর্যাপ্ত না হয় তখনও একটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফগ লাইটার সুষ্ঠু ব্যবহার এই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
• ফগলাইট ব্যবহারে আইনি বিধি নিষেধ:
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের সপ্তম অধ্যায়ে (শিরোনাম: মোটরসাইকেল নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষণাবেক্ষণ) এর ৪০ ধারার ৩ এবং ৪ নম্বর উপধারাতে কি লেখা আছে আসুন একটু জেনে নেই।
৩নং উপধারা: “কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কারিগরি বিনির্দেশের (technical specification) ব্যত্যয় ঘটাইয়া কোন মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আসন বিন্যাস, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার হ্যাংগ, ফ্রন্ট ওভার হ্যাংগ, সাইড ওভার হ্যাংগ, চাকার আকৃতি, প্রকৃতি ও অবস্থা, ব্রেক ও স্টিয়ারিং, গিয়ার, হর্ন, সেইফটি গ্লাস, সংকেত প্রদানের লাইট ও রিফ্লেক্টর, স্পিড গভর্নর, ধোঁয়া নির্গমণ ব্যবস্থা ও কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ, শব্দ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বা সমজাতীও অন্য কোনো কিছু পরিবর্তন করা যাইবে না”।
৪নং উপধারা: “রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের কোন কারিগরি অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে”।
উপরোক্ত উপধারা দুটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, কর্তৃপক্ষের কারিগরি নির্দেশ মেনে যে মোটরযানটি তৈরি করা হয়েছে সেই মোটরযানটিতে এমন কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বেঁধে দেয়া কারিগরি নির্দেশকে উপেক্ষা করে। আর যদি একান্ত কোন রকম পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এই দুটি উপধারার কোথাও ফগ লাইটের কথা উল্লেখ না থাকলেও এটা বোঝাই যাচ্ছে যে ফগ লাইট লাগানো টা বেআইনি। কারণ একটি যানবাহনে অনুমতি না নিয়ে কোনো রকম সংযোজন,যা পরিবর্তন ঘটায়,তা বেআইনি।
আর বাংলাদেশে যতগুলো বাইক ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি আছে তাদের কেউই বাইকের ফগ লাইট সংযোজন করে বাজারে নিয়ে আসে না। সুতরাং, বাড়তি ভাবে ফগ লাইট স্থাপন করাাটা বেআইনি।
সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪ ধারায় বলা আছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৪০ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনাধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড তবে অনুণ্য ১ (এক) বছর, বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয়ের দ্বন্দ্বে দণ্ডিত হইবেন”।
অর্থাৎ এই ফগ লাইট ব্যবহার বা সংযোজন জন্য ১-৩ বছরের কারাদণ্ড বা তিন লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত অর্থদ্বন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে।
কিন্তু খুশির খবর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের জারীকৃত একটি প্রজ্ঞাপনে পাওয়া যায় যে, “ফগ লাইটের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না”।
উক্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এন্টিফগ লাইট ব্যবহারে কোন আইনি জটিলতা নেই। একজন মোটরযান চালক তার প্রয়োজন অনুযায়ী ফগ লাইট ব্যবহার করতে পারে। এটি ব্যবহার বেইনি না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফগ লাইট ব্যবহার করলে মামলা শিকার হতে হয়। বেশ কিছু কেইস স্টাডি করে আমরা এর কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছি।
কারণ সগুলো হলো:
১) অপ্রয়োজনে ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখলে তা অনেকেরই অসুবিধায় কারণ হয়। অন্যের এই অসুবিধা করার জন্য মামলা হতে পারে।
২) হেডলাইট এর উপরিভাগে ফগ লাইট বা ক্রি লাইট স্থাপন করলে তার আলো রাস্তা দিকে না পড়ে, অপর দিক থেকে আসা যানবাহন এর উপর পরে ফলে চালক এর চালনায় অসুবিধা হয়। এর জন্য হেডলাইট এর উপরিভাগ ফগ কিংবা ক্রি লাইট স্থাপন করলে মামলা হওয়ার একটি চান্স থাকে।
৩) পজিশন তার্তম্মতা। এমন পজিশনে স্থাপন করা যে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এজন্য এর ব্যবহারকারীকে আইনের আওতায় আনা হতে পারে।
৪) অনেকে প্রয়োজনের থেকেও বেশি ফগ লাইট স্থাপন করে যার ফলে অতিরিক্ত আলো প্রডিউস হয়। যা অপ্রয়োজনে এবং দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই তাই অতিরিক্ত ফগ লাইট ব্যবহারের কারণে মামলা হতে পারে।
৫) আলোকিত জায়গাতে বা সিটির ভিতরে এর ব্যাবহার করার কোন প্রয়োজন পরে না। কিন্তু অনেকেই এমন কাজ করে থাকেন। তাই অনেক সময় আইনি জটিলতার শিকার হয়।
৬) রেস্টিক্টেড এরিয়াতে ফগ লাইট জ্বালালে মামলা হতে পারে।
আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনার ফগ লাইটের ব্যবহার এবং ব্যবহারের আইনি বিধি নিষেদ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে। আসুন আমরা এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.