কখন আপনার হেলমেট পরিবর্তন করবেন

মোটরসাইকেল রাইডিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং প্রয়োজনীয় কিট হচ্ছে হেলমেট। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশ হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করেছে যার পেছনে মূল কারন হচ্ছে অধিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা। মোটরসাইকেল রাইডিং রোমাঞ্চকর হলেও একটু অসাবধানতার কারনে হয়ে যেতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। বিশ্বের বিভিন্ন দূর্ঘটনার সমীক্ষায় দেখা যায়, মোট দূর্ঘটনার প্রায় ৬০ ভাগ হয়ে থাকে মোটরসাইকেলের কারনে এবং মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার ৭০ ভাগ নিহত হয় মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে বা হেলমেট না পরার কারনে। মোটরসাইকেল বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন “আপনার মোটরসাইকেলের পর সবচেয়ে দামি রাইডিং কিট হওয়া উচিৎ আপনার হেলমেট”।

তবে সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে হেলমেট পরে বাইক চালানোর প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন এশিয়ান এবং ইউরোপিয়ান হেলমেট ব্রান্ড বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায় করে আসছে এবং স্ট্যান্ডার্ড থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হেলমেট বাজারজাত করছে তারা। হেলমেট সাধারণত হার্ড প্লাস্টিক, পলিকার্বোনেট, কার্বন ফাইবার ইত্যাদি উপাদান দিয়ে তৈরী করা হয় যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তবে একটি হেলমেট আপনি কতদিন ব্যবহার করবেন বা একটি হেলমেট থেকে আপনি কতদিন সর্বোচ্চ সুরোক্ষা পাবেন তা অনেকেরই জানা নেই। অন্যান্য উপকরনের মত হেলমেটেরও জীবনকাল রয়েছে। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে বুঝবেন আপনার হেলমেটটি পরিবর্তনের সময় এসেছে।

হেলমেটের বয়সঃ

একটি হেলমেট আপনি কতদিন ব্যবহার করতে পারবেন? এই নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়ে থাকেন। কেউ বলেন ৫-৭ বছর আবার অনেকেই বলেন হেলমেট নষ্ট হওয়া পর্যন্ত। তবে বিভিন্ন হেলমেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের হেলমেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার সীমা ৫ বছর নির্ধারন করে থাকে। অর্থাৎ, আপনি যত দামীই হেলমেট ক্রয় করেন না কেন আপনি সেটি সর্বোচ্চ ৫ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে হেলমেটের ব্যবহার সীমা কেন ৫ বছর?

একটি হেলমেট সাধারনত বিভিন্ন কম্পোনেন্ট এবং উপকরন দিয়ে তৈরী করা হয় যার প্রকৃতি এবং ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন শেল তৈরীতে ব্যবহার করা হয় ট্রাই-কম্পোজিট, কার্বোন ফাইবার ইত্যাদি উপকরন এবং ভাইসর ও ইনার ইপিএস তৈরীতে ব্যবহার করা হয় পলিকার্বোনেট উন্নত মানের প্লাস্টিক ফোম। এই উপকরনগুলো বেশ মজবুত এবং শক্ত-পোক্ত হলেও এদেরও নির্দিস্ট মেয়াদ কাল রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত হেলমেট ব্যবহারের ফলে রাস্তার ধুলো-ময়লা এবং ক্ষতিকর আলোর প্রভাবে ধীরে ধীরে হেলমেটের উপকরনগুলোর কার্যকারিতে কমে আসে। তাই হেলমেট থেকে সর্বোচ্চ সুরোক্ষা পেতে প্রস্তুতকারক কোম্পানিরা এর সময় নির্ধারন করে দেন।

দুর্ঘটনাঃ

যেকোন দূর্ঘটনায় একজন রাইডারের সুরক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে হেলমেট। আমরা অনেকেই আছি যারা দূর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পরেও একই হেলমেট ব্যবহার করি যেটি পরিহার করা উচিৎ। আপনি যখন কোন দূর্ঘটনায় পরবেন তখন অবশ্যই দেখতে হবে আঘাতের কারনে হেলমেটের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা। হেলমেটে যদি সামান্য পরিমানও ফেটে যাওয়া কিংবা কালার উঠে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ঐ হেলমেট ব্যবহার করা যাবে না। কেননা ঐ ছোট ফাটা যায়গা থেকেই পরবর্তিতে কোন সামান্য আঘাতেই সম্পূর্ন হেলমেটটি ফেটে যেতে পারে।

দীর্ঘদিন ব্যবহারঃ

বাইকারদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা একটি হেলমেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন। সাধারনত আমরা যখন একটি জিনিস দীর্ঘদিন ব্যবহার করি তখন এর কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্বতা কমে আসে এবং হেলমেটও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকেই ভাবেন একটি হেলমেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় তবে কথাটি সত্য নয়। আমরা যখন একটি হেলমেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করি তখন এটি বাইরের ধুলো-ময়লা, বৃষ্টি এবং বিভিন্ন কারনে হেলমেটের বাইরের শেল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কার্যকারিতে কমে আসে। তাই সার্বিক সুরক্ষার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পর হেলমেট পরিবর্তন করতে হবে।

হেলমেট লুজ হওয়াঃ

আমরা যখন একটি হেলমেট দীর্ঘদিন ব্যবহার করি তখন এর ভিতরের ইনার ইপিএস এবং প্যাডিং অনেকটা লুজ হয়ে যায় এবং মাথার সাথে ঠিকমত আটকে থাকে না। ফলে সামান্য দূর্ঘটনা কিংবা আঘাতেই হেলমেটটি মাথা থেকে বেড়িয়ে আসবে। এক্সপার্টরা বলে থাকেন, হেলমেট মাথায় এমনভাবে লেগে থাকা উচিৎ যেন আপনি একটি চুইংগামও চাবাতে না পারেন। তাই আপনার হেলমেট যদি লুজ হয়ে যায় তাহলে সেটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

লক/স্ট্রাপ নষ্ট হওয়াঃ

একটি হেলমেটের লক বা স্ট্রাপ খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। কেননা এটি হেলমেটটিকে আপনার মাথার সাথে ভালভাবে আটকিয়ে রাখে এবং দূর্ঘটনার সময় হেলমেটকে মাথা থেকে বেড়িয়ে আসতে দেয় না। কিন্তু আপনার হেলমেটের যদি লক নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে সেটি যত দামীই হোক না কেন আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। তাই হেলমেটের লক যদি নষ্ট হয়ে যার সেটি দ্রুতই ঠিক করে নেয়া উচিৎ এবং সেটি সম্ভব না হলে হেলমেটটি পরিবর্তন করা ভাল।

একজন রাইডারের জন্য হেলমেট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন একটি রাইডিং গিয়ার। তাই সবসময় চেষ্টা করুন ভাল মানের এবং সার্টিফাইড হেলমেট পড়ে বাইক রাইড করার।

Related Posts

error: Content is protected !!