শখ এবং প্রয়োজনের কারণে বাইকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাইক হয়ে উঠেছে বর্তমান প্রজন্মের একটি জনপ্রিয় যানবাহন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসছে বিভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের বাইক। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক বাইক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইলেকট্রিক বাইক এর জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশের বাজারে এই বাইক গুলো খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। রোডে খুব একটা চোখে পড়ে না বাইক গুলো। সেই তুলনায় চার চাকা ও তিন চাকার ইলেক্ট্রিক ও সেমি ইলেক্ট্রিক যানবাহন গুলো বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দামে কম ও লো ফুয়েল কস্টিং হবার পরও কেন ইলেক্ট্রিক বাইক গুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে নেই, সেই কারণ গুলোই আজ আমরা টিম দেশি বাইকার খতিয়ে দেখব।
ইলেক্ট্রিক বাইক কেনো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে না সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য আগে জানতে হবে ইলেকট্রিক বাইক গুলো কেন বাহিরের দেশগুলোতে এতটা জনপ্রিয়। ১৮৮০ ও ১৮৯০ এর দিকে প্রথম ইলেকট্রিক বাইক এর প্যাটেন্ট জমা দেয়া হয় ফ্রান্স এবং ইউনাইটেড স্টেটে। ধারণা করা হয় ১৯৯০ সালের দিকে ইলেকট্রিক বাইসাইকেল গুলো প্রথম রাস্তায় চলা শুরু করে। বাহিরের দেশ গুলোতে গত ২০১৩-২০১৭ পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক বাইক ব্যাবহারকরির সংখ্যা বেড়েছে ২ মিলিয়ন ও ১০ মে ২০২১ পর্যন্ত টা বেড়েছে ৭৪% প্রায়। ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ইলেকট্রিক বাইক ব্যাবহার হবে কোম্পানি গুলো আশা করছে।
একটু যাচাই বাছাই করলে দেখা যায় বাহিরের দেশে ইলেকট্রিক বাইক গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ার কারণ হলোঃ
• ইলেকট্রিক বাইক এর ব্যাবহারের বৈধতা।
• স্কুটার টাইপ বাইক গুলার প্রতি একটা আকর্ষণ।
• ইলেক্ট্রিক বাইকের সহজলভ্যতা।
• বাহিরের দেশ গুলোতে এটির পরিচিতি ও অভ্যস্ততা একটি বড় কারণ।
• দাম হাতের নাগালে।
• ইলেক্ট্রিক বাইক নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক অপশন পাওয়া।
• চার্জ রিফিল করার সহজ উপায়।
• বেশ কটি প্রমিনেন্ট কোম্পানি ইলেক্ট্রিক বাইক রয়েছে বাহিরের দেশ গুলোতে ।
• এছাড়াও বাহিরের দেশে ধোয়া বিহীন বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়।
এখন আসি বাংলাদের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণেঃ
২০০৮ সালে The Daily Star প্রকাশিত একটি সংবাদে জানা যায় খুব শীঘ্রই দু চাকা এবং তিন চাকার ইলেকট্রিক বাইক গুলো বাংলাদেশের রাস্তায় দেখা যাবে। কিন্তু ইলেকট্রিক বাইক গুলো বাংলাদেশে কবে থেকে চালু হয়েছে এর কোন সুস্পষ্ট নথি পাওয়া যায়নি। ইলেক্ট্রিক বাইক গুলোর জনপ্রিয়তা না থাকার অন্য তম একটি বড় কারণ হলো বি আর টি এ কতৃক এর বৈধতা না থাকা। এ জন্য অনেক প্রমিনেন্ট কোম্পানি এই বাইক গুলো বাংলাদেশে আনছে না। যে কোম্পানি গুলো আছে সেগুলোর যদি আফটার সেলস সার্ভিস ও স্পেয়ার পার্টস এর এভেল – এভেলিটি পর্যাপ্ত থাকতো, তাহলেও এই বাইক কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতো। ইলেকট্রিক বাইক গুলোর স্পেসিফিক ও এনাফ সার্ভিস সেন্টার না থাকাটা এর গ্রহণ যোগ্যতার উপর ডিরেক্ট একটি ইমপ্যাক্ট ফেলছে। তাছাড়া স্পেয়ার পার্টস ছাড়া একটি যানবাহন পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য। আর কেউই চায়না লাখ টাকা খরচ করে কেনা তার সখের বাইকটি পংগু হয়ে যাক। স্পেয়ার পার্টস এর সল্পতা বাইকের লংজিবিলিটির উপর বড় একটি প্রভাব ফেলে, আর একজন বাইকার যখন বাইক কেনে সে লংজিবিলিটির বিষয়টি বিশেষ করে লক্ষ করে। আমাদের কাছে মনে ইলেক্ট্রিক বাইক গুলোর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিরও কিছুটা লেকিং রয়েছে। একটি প্রবাদ বাক্য আছে, প্রচারেই প্রসার। এর অর্থ হচ্ছে, একটি পণ্যের যত বেশি প্রচার হবে এবং ওই পণ্যটির যত বেশি এভেল এবল হবে তার চাহিদা ততো বেশি হবে ও সেই প্রোডাক্টের ব্যাবসা প্রসারণ লাভ করবে। এই দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বর্তমনে বিভাগীয় শহর ছাড়া ইলেক্ট্রিক বাইক গুলোর শোরুম একবারে চোখেই পরে না। তাই এই বাইক গুলো সম্পর্কে অনেকে অজানাই থেকে যায়। এছাড়াও অন্যান্য মোটর সাইকেল কোম্পানি গুলি তাদের বাইক নিয়ে যে পরিমাণ মার্কেটিং, প্ল্যানিং ও বাজেটিং করে থাকে, সে তুলনায় ইলেক্ট্রিক বাইক এর কোম্পানি গুলো কিছুই করছে না। যা করছে তা নাম মাত্র বলা যায়। এই প্রচারণার অভাবটাও ইলেক্ট্রিক বাইক গুলোকে জনপ্রিয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বাধা প্রয়োগ করছে।
ইলেকট্রিক বাইক গুলো জনপ্রিয় না হবার আরো কিছু উল্লেখ্যযোগ্য কারণ হলোঃ
• বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধিঃ
– একটি ইলেকট্রিক বাইক ফুল চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা, কোন কোন সময় ছয় ঘণ্টা। বিদুৎ ইউনিটের দাম বৃদ্ধির জন্য এখন বাংলাদেশে চার্জিং কস্ট বেড়ে গেছে। এই মূল্য বৃদ্ধি একটি নেগেটিভ ইম্প্রেশন করেছে ইলেকট্রিক ভেইকেল গুলোর উপরে।
• লুকসঃ
– বাংলাদেশে এভেলেবল ম্যাক্সিমাম ইলেকট্রিক বাইকগুলো আকারে ছোট এবং স্কুটি টাইপ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা শীর্ষে আছে একটু স্ট্যান্ডার্ড ও স্পোর্টি টাইপ বাইক গুলো। ইলেকট্রিক বাইক এর কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত বাজারে কোন স্পোর্টি অথবা স্টান্ডার্ড লুকের বাইক অফার করছে না। এর জন্য সাধারণ মানুষের কাছে এর চাহিদা খুব একটা নেই।
• কম্পিটিটিভ মার্কেট না থাকাঃ
– ইলেকট্রিক বাইকগুলোর বাজারে কোন কম্পিটিশন না থাকায়, এর কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রির জন্য সেই ভাবে প্রচার প্রচারণা বা কোন একটিভিটিস করছে না। যার কারণে সাধারণ মানুষ বোধগম্য হচ্ছে না এই বাইক গুলো সম্পর্কে। যদি বাজারে কম্পিটিশন থাকত তখন কোম্পানী গুলো নানা ভাবে তাদের পণ্য অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করতো বলে আমাদের ধারণা।
• বিক্রয় প্রতিষ্ঠান গুলোর দায়িত্বশীলতার অভাবঃ
– ইলেকট্রিক বাইক ইউজারদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, এই বাইক গুলো কেনার পরে থেকেই তারা অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছে, সার্ভিস এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে। ব্যাপার গুলো কোম্পানিকে জানানোর পরও তারা এই সব সমস্যাগুলো সমাধানের সেরকম করে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তাদের এই নীরব ভূমিকা দায়িত্বশীলতার অভাবের প্রমান দেয়।
• দাম ও মানের অসামঞ্জস্যতাঃ
– বর্তমানে বাজারে এবেলেবেল ইলেকট্রিক বাইক গুলো কিনতে যে পরিমাণ অর্থ গুনতে হয় সে পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। কিন্তু বিল্ড কোয়ালিটি, পেইন্ট কোয়ালিটি, স্টাবিলিটি ও লংজিবিলিটি দিক বিবেচনা করলে ইলেকট্রিক বাইক গুলোর মানের থেকে দাম অনেক বেশি মনে হয়। এই কারণে অনেকেই আসলে ইলেকট্রিক বাইক গুলো কেনা থেকে বিরত আছে।
• চার্জিং টাইম ও চলার রেঞ্জ এর অসামঞ্জস্যতাঃ
– একটি ইলেকট্রিক বাইক চার্জ করতে যেখানে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে সেখানে এই বাইকটি দিয়ে ফুল চার্জ ব্যাবহার করে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করা যায়। যা একজন বাইকারের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অনেকে এই কারণে ইলেকট্রিক বাইক এর দিকে আগ্রহ দেখায় না।
• চার্জিং স্টেশন এর অভাবঃ
ফুয়েল চালিত বাইক গুলো রিফল সটেশন যে পরিমাণে বাংলাদেশ আছে তার দুই একাংশ ইলেকট্রিক বাইক গুলো চার্জিং করার স্টেশন বা পয়েন্ট নেই। যার জন্য এই বাইক গুলো নিয়ে বাইকাররা ট্যুর বা লং ড্রাইভ করতে ভয় পায়।
• গতির অভাবঃ
– প্রয়োজনীয় গতির অভাব এই বাইকগুলোর আরেকটী খারাপ সাইড বলা যায়। হাইওয়েতে চলার জন্য একটি বাইকে যে পরিমাণ গতি ও ইস্টার্ন থ্রিটোল প্রয়োজন হয় ইলেকট্রিক বাইক গুলো তা জেনারেট করতে প্রায় অক্ষম। আমাদের দেশের বাইকার বা বাইক লাভার ওরা কখনোই শুধুমাত্র সিটি রাইডে জন্য বাইক ক্রয় করে না। ইলেকট্রিক বাইক গুলো জনপ্রিয় না হওয়ার এটাও একটা কারণ।
বাংলাদেশ বাইক প্রেমীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এই দিকটা বিবেচনা করলে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক বাইক গুলো একটি বিশাল মার্কেট রয়েছে। এই মার্কেট টিকে প্রপারলি ইউটিলাইজ করা উচিত।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪