ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি আলাদা একটা নেশা কাজ করত আমার। আশেপাশে কোন বাইক দেখলেই উঠে পড়তাম। আমার বড় চাচার একটা Yamaha RX 100 বাইক ছিল, যেটিতে চাচার সাথে অনেক যায়গায় গিয়েছি। মূলত সেখান থেকেই বাইকের প্রতি ভালোলাগা শুরু।
নিজের জন্য যখন বাইক কেনার কথা চিন্তা করলাম তখন প্রথমেই মাথায় আসে কোন ব্রান্ডের বাইক কিনব। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ইন্ডিয়ান, চাইনিজ এবং জাপানিজ ব্রান্ডগুলো রয়েছে। তাই প্রত্যেকটি ব্রান্ডের মোটরসাইকেল নিয়ে কিছুটা গবেষণা করেছি। আমার বাজেটের মধ্যে কোন বাইকটি আমাকে সবচেয়ে ভাল পার্ফরমেন্স, ব্রেকিং এবং একই সাথে আমার পার্সনালিটির সাথে যাবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাই অনেক চিন্তা ভাবনার পর আমি নিয়েছি Yamaha FZs V3 FI ABS বাইকটি।
বাইকটি পছন্দ করার প্রথম দিকটি হচ্ছে এর মাস্কুলার এবং বাল্কি ডিজাইন। যেহেতু আমার হাইট ৫’১০”, সেহেতু আমি চাচ্ছিলাম এমনি একটি ডিজাইন। এছাড়া এর কালার কম্বিনেশন চমৎকার মনে হয়েছে। এই বাইকটির অন্য একটি এডিশন FZ V3 রয়েছে যার কালার গ্রাফিক্স গ্লোসি। তবে আমি ম্যাট কালার পছন্দ করি এবং সেজন্যই FZs V3 বাইকটির Armada Blue কালারটি বাছাই করেছি আমি। এছাড়া এর হেডলাইট ইউনিটের ডিজাইনটিও আমার কাছে ভাল লেগেছে। তবে সিটিতে এর আলো আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হলেও হাইওয়েতে কিছুটা কম মনে হয়েছে।
এখন আসি ইঞ্জিন পার্ফরমেন্স প্রসঙ্গে। আমি এর পূর্বে এই বাইকটির দ্বিতীয় ভার্সন FZs V2 চালিয়েছি। কিন্তু এই ভার্সনটি চালিয়ে আগের থেকে এর ইঞ্জিন কিছুটা স্মুথ মনে হয়েছে। হাইওয়েতে রাইডের সময় বাইকটি থেকে থ্রোটল রেসপন্স বেশ ভাল পেয়েছি। হাইওয়েতে অভারটেকিংয়ের সময় থ্রোটল রেস্পন্স বেশ জরুরী। তবে ১০০+ কিমি/ঘন্টা স্পিডের পর বাইকটিতে কিছুটা ভাইব্রেশন লক্ষ্য করেছি। বাইকটি থেকে আমি টপস্পিড পেয়েছি ১১২ কিমি/ঘন্টা, তবে এর টপস্পিড আরও বেশি হবে বলে মনে হয়েছে।
ইয়ামাহাকে বলা হয় ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিংয়ের রাজা, যা এই বাইকটি চালিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি। এর আপ-রাইট হ্যান্ডেলবার এবং সিটিং পজিশনটি সিটি এবং হাইওয়ে দুই রাস্তাতেই বেশ কম্ফোর্টেবল মনে হয়েছে আমার কাছে। হাইস্পিডে ব্রেকিংয়ের সময়ও বাইকটি কোন ধরনের স্কিড করেনি। এছাড়া এটিতে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে এর ব্রেকিং পূর্বের ভার্সন্টি থেকে বেশ ভাল হয়েছে। বাইকটি দিয়ে আমি বেশ কয়েকবার লং রাইড করেছি। তবে কখনই এটি চালিয়ে ব্যাক পেইন কিংবা সোল্ডার পেইন অনুভূত হয়নি। এছাড়া সিটি রাইডের সময় বাইকটিকে খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারবেন।
এটিতে FI ইঞ্জিন ব্যবহার করার ফলে মাইলেজ আশানুরূপ পেয়েছি। প্রথমের দিকে ৩৮-৪০ কিমি/লি পেলেও এখন আমি ৪২-৪৫ কিমি/লি পাচ্ছি। তবে মাইলেজ মূলত একজন রাইডারের রাইডের ধরনের উপরও নির্ভর করে। যদি আপনি বাইকের ঠিকঠাক যত্ন না নেন এবং সবসময় হাই-রেভ করে রাইড করেন তাহলে মাইলেজ কমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। আমি প্রথমের দিকে মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতাম এবং ৮০০-৯০০ কিমি এর মধ্যেই পরিবর্তন করতাম। কিন্তু এরপর Shell Advance AX5 Ultra 10W40 Synthetic ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করা শুরু করি এবং আমার ইঞ্জিন পার্ফরমেন্স যেমন স্মুথ হয়েছে সেই সাথে মাইলেজও আশানুরূপ পাচ্ছি।
আমি বাইকটি Yamaha এর বাংলাদেশে অথরাইজড ডিস্টিবিউটর এসিয়াই মটরস থেকে নিয়েছি। কেনার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩টি সেলস আফটার সার্ভিস নিয়েছি আমি। ইয়ামাহার সেলস আফটার সার্ভিস আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। FI বাইকের সার্ভিসের জন্য যে টুলস গুলো ব্যবহার করা হয় তা আমার মনে হয় না অন্যকোন সার্ভিস সেন্টারে ব্যবহার করা হয়।
ওভার-অল Yamaha FZs V3 বাইকটি ব্যবহার করে আশানুরূপ পার্ফরমেন্স পেয়েছি আমি।
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.