10000 kilometers ownership review of Yamaha R15 V3 Indian version dual channel ABS ☺
আমি গত ২৩/০৭/২০১৯ তারিখে বাইকটি কিনি। শুরুতে ইন্দোনেশিয়ান ভারসন টা কিনতে চেয়েছিলাম। অনেক কয়েকবার ডিসিশন নিতে সমস্যা হয়েছে। কয়েকজন এর কাছে পরামর্শ নিয়েছি। সবশেষে অনেক কাহিনির পরে এই ইন্ডিয়ান এবিএস ভার্সন কিনি। যাই হোক কয়েকমাসেই দশ হাজার কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়েছি। এই বাইকটির ব্যাপারে সবাই কম বেশি জানেন। তাই শুধু নিজের মন্তব্য শেয়ার করবো। ছোট খাটো সব বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। কিছু ভুল ত্রুটি থাকতে পারে, আশা করি সবাই ভালো চোখে দেখবেন।
১. লুক্স, ডিজাইনঃ লুক্স যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কাছে সব বাইকই সুন্দর। বাংলাদেশে যেকয়টি স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইক আছে R15 v3 তাদের মধ্যে অন্যতম। বাইকটির এগ্রেসিভ লুক যে কারো ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে।
২. বিল্ড কোয়ালিটিঃ ইন্ডিয়ান আর ইন্দোনেশিয়ান ভারসন দুইটির তুলনা করতে যেয়ে অনেকে ইন্ডিয়ান টার বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমার কাছে বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে ইন্ডিয়ান টার, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুইটি বাইকেরই টুকটাক সমস্যা রয়েছে। যেমন পেইন্ট কোয়ালিটি, প্লাস্টিক কোয়ালিটি। তবে এতো শক্তিশালী মেশিনের জন্য এইটুকু ছাড় দেয়াই যায়।
৩. পারফরম্যান্সঃ ১৯.৩ বিএইচপি আর ১৪.৭ এনএম টর্ক বাংলাদেশের যেকোনো স্পোর্টস বাইককে টক্কর দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আর এটাতে রয়েছে ভিভিএ টেকনোলজি যেটা ৭৪০০ আরপিএম এর পরে এক্টিভেট হয়। যখন এটা এক্টিভেট হয় তখন আসলেই এটির চেহারা চেইঞ্জ হয়ে যায়।
আমি সর্বোচ্চ ১৪৮ কিমি পার ঘন্টা টপ স্পিড তুলেছিলাম। হয়তো আরো বেশি উঠতো রাস্তা থাকলে। তবে বাংলাদেশে এটিকে শুধু স্পিডে বিট করার মতো বাইক একটা আছে, GSX-R।
৪. মাইলেজঃ এই মাইলেজ নিয়ে আসলে অনেকের অনেক ধরনের কথা শুনেছি। অনেকে মাইলেজ শুনে অবাক হয় নাহলে হাসে! আমি রাজশাহী আর রংপুর শহরে চালাই আর মাঝে মধ্যে ঢাকায় যাওয়া হয়। আমি শহরে এখন পর্যন্ত ৪০ কিঃমিঃ পার লিটার এর কম পাইনি। আর হাইওয়ে তে সবসময় ৫০+ পেয়েছি। আমি ১০ লিটার তেল নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা আবার ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়া আসা করেছি। সেই হিসাব করলে আমার বাইকের মাইলেজ ছিল ৫৫+ কিঃমিঃ পার লিটার (আমি বেশি রেভ করিনি জেন্টলি চালিয়েছিলাম)। যেটা এরকম স্পোর্টস ক্যাটাগরি বাইকের জন্য অনেক! আর অবশ্যই এটা তখনি পাবেন যখন আপনি ৭৪০০ আরপিএম এর নিচে চালাবেন। R15 v3 তে ৬ নং গিয়ারে ১০৩/১০৪ কিমি প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত বাইক চালালে ভিভিএ এক্টিভেট হয়না। ১০৪ এর পরে ভিভিএ এক্টিভেট হয়। তো খুব সহজেই ৯০/১০০ মেইনটেইন করে চালালেও মাইলেজ কমে না। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে এই বাইকের মাইলেজ অসাধারণ।
৫. ব্রেকিংঃ ডুয়াল চ্যানেল এবিএস থাকায় এটার ব্রেকিং নিয়ে কিছু বলার থাকে না। অসম্ভব ভালো ব্রেকিং এবং একবারের জন্যও কনফিডেন্স হারাইনি। কিন্তু এবিএস সেন্সর টা নিয়ে আমার একটু সন্দেহ আছে। এই পর্যন্ত দুইবার এটি ফেইস করেছি। আর কেউ করছে কিনা জানি না। যেহেতু এটি একটি সেন্সর তো অনেক সময় সেন্সর ঠিক মতো রিড করতে পারে না। ফলস্বরূপ ব্রেক ধরে ছেড়ে দেয় আবার ধরে। এই প্রসেস টা অনেক দ্রুত হয় জন্য আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। কিন্তু কোনো কারনে যদি এটা ধীরে কাজ করে সেক্ষেত্রে এটা খারাপ একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। তো সেন্সর যদি ধীরে কাজ করে তখন এইরকম প্রব্লেম এ পড়তে হয়। সে জন্য সবসময়ই ইঞ্জিন ব্রেকিং করার চেষ্টা করি। আর ইঞ্জিন ব্রেকিং এর সুবিধা হলো ভালো ব্রেকিং, সাথে ভালো মাইলেজ ফ্রি!
৬. স্লিপার ক্লাচঃ বাইক কেনার সময় ইন্দোনেশিয়ান CBR 150R ও পছন্দের তালিকায় ছিল। বাইকটি আমার অনেক প্রিয় একটি বাইক কিন্তু এটি না নেয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ছিল সেটি হচ্ছে স্লিপার ক্লাচ। R15 v3 তে স্লিপার ক্লাচ আছে যেটা CBR এ নেই। এটি ইঞ্জিন ব্রেকিং এর সময় অনেক বেশি হেল্প করে। স্লিপার ক্লাচ এর কাজ হলো কয়েকটি গিয়ার পরপর ডাউন শিফট করলেও পিছনের চাকা লক হতে দেয় না। ইমারজেন্সি ব্রেকিং এর সময় স্লিপার ক্লাচ খুব ভালো কনফিডেন্স দেয় আর সাথে তো এবিএস আছেই।
৭. টায়ারঃ ইন্ডিয়ান টায় MRF টায়ার ইউজ করেছে যেটা আমাদের রাস্তার জন্য ভালো এবং উপযোগী। এই টায়ারের গ্রিপ ইন্দোনেশিয়ান টার IRC টায়ারের থেকে ভালো বলে মনে হয়েছে।
৮. সিটিং পজিশনঃ ইন্দোনেশিয়ান টায় USD সাসপেনশন ব্যবহার করেছে যেটার জন্য হ্যান্ডেল বার সামান্য নিচু। কিন্তু ইন্ডিয়ান টায় নরমাল সাসপেনশন ব্যবহার করেছে যার জন্য হ্যান্ডেল বার সামান্য উঁচু হয়েছে এবং তুলনামূলক কম্ফর্টেবল সিটিং পজিশন। বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৭০ মিলিমিটার হওয়ায় যেকোনো স্পিড ব্রেকারে খুব সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। পিছনে ভারী পিলিওন নিয়েও ট্রাই করে দেখেছি নিচে ঘসা লাগে না।
৯. হেডলাইটঃ ইন্দোনেশিয়ান টার তুলনায় ইন্ডিয়ান টার হেডলাইটের আলো সামান্য বেশি। কিন্তু অন্যান্য বাইকের কথা চিন্তা করলে এই আলো দিয়ে হাইওয়ে তে চালানোর মতো উপযোগী না।
১০. স্মুথনেসঃ ইন্দোনেশিয়ান টার তুলনায় প্রথম প্রথম ইন্ডিয়ান টার স্মুথনেস অনেক কম মনে হয়েছে। গিয়ার সিফটিং সামান্য হার্ড ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন এটা স্মুথ হতে থাকে। আমার মনে হয় ৫০০০+ চালানোর পরে ইন্ডিয়ান টা স্মুথ হতে শুরু করে। ইন্দোনেশিয়ান টায় শুরু থেকেই স্মুথ থাকে। সেজন্য অনেকে ইন্ডিয়ান টা পছন্দ করে না। কিন্তু এটা যতো দিন যাচ্ছে ততো বেশি স্মুথ হচ্ছে।
১১. বাইকটির দুইটি জিনিস ভালো লাগেনি। ইন্দোনেশিয়ান টায় ইমারজেন্সি ইন্ডিকেটর এর অপশন থাকলেও ইন্ডিয়ান টায় সেটি দেয়া হয়নি। আর বাইকের পাসিং সুইস টা ইউজার ফ্রেন্ডলি না। আলাদা করে আর দশটা বাইকের মতো দিলে সুবিধা হতো।
১২. বাইকটির হ্যান্ডেল বার সামান্য উঁচু হওয়াতে এর যে উইন্ড শিল্ড টা আছে সেটা অনেক বেশি কাজে দেয় না ইন্দোনেশিয়ান টার মতো। ৮০/৯০+ করলে বাতাস ডিরেক্ট গলায় এসে লাগে। সে জন্য ডাবল বাবল অথবা ট্রিপল বাবল উইন্ড শিল্ড একটা ভালো অল্টারনেটিভ। এতে বাতাস সহজেই পাস হয়ে যায়।
১৩. বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস বেশি। তাই ইউ টার্ন গুলো নিতে অনেক জায়গা লাগে। ছোট জায়গায় খুব সহজে এটি ঘুরানো যায় না।
১৪. পিলিওন সিট প্রায় সব স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইকেরই খারাপ। পিলিওন বসে খুব একটা আরাম পায় না। কিন্তু R15 v3 এর পিলিওন সিট টা তুলনামূলক আরামদায়ক। এর কারণ এটির পিছনের সাসপেনশন একেবারে স্টিভ না। ভাংগা চুরা রাস্তায় মোটামুটি ভালো ফিডব্যাক দেয়।
১৫. ইন্দোনেশিয়ান vs ইন্ডিয়ানঃ
👉 USD / Normal telescopic suspension
👉 Non ABS / ABS
👉 155 mm ground clearance / 170 mm ground clearance
👉 Lower handle bar / Upright handle bar
👉 IRC tires / MRF tires
আমি ২০০০ কিমি পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করেছি। আমার এখন পর্যন্ত শুধু মোবিল চেইঞ্জের সময় ইঞ্জিন অয়েল ফিলটার ছাড়া আর কিছুই চেইঞ্জ করতে হয়নি। আমি প্রথমে বাইকে শেল এ্যাডভান্স মিনারেল মোবিল ব্যবহার করেছি। আর ৫০০০ কিমি এর পর থেকে শেল এ্যাডভান্স ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার করছি। ইঞ্জিন অয়েল পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
এই কম সময়ে ১০০০০ কিমি পার করে ফেলার পিছনে বেশ কয়েকটি হাইওয়ে ট্যুর দায়ী। রাজশাহী থেকে বান্দরবান গিয়েছিলাম আর হাইওয়ে পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ!
বাইকিং সবাই যার যার প্যাশন থেকে করে। যার যার বাইক তার তার কাছে বেস্ট। আমি যতটা আশা করেছিলাম সেরকমই পাচ্ছি। শুধু মাইলেজ টা একটু বেশি অবাক করে দিয়েছে। তবুও সব বাইকেরই খারাপ দিক আছে। সব দিক চিন্তা করলে আমি সন্তুষ্ট এই ইন্ডিয়ান (গরিবী) ভারসন টা নিয়ে।
Always wear a Full face helmet.
Ride safe. Thank you.
লিখেছেন- জিয়াহানুল ইসলাম প্রিয়ম
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.