Apache RTR 150 এর ব্যাবহারকারী অপু লিখেছেন বাইকটির রিভিউ

অ্যাপাচি আরটিআর ১৫০ সম্ভবত বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত একটি বাইক। টিভিএস একটি নামকরা ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড যার ২০০ সিসি বাইকটি বর্তমানে ইন্ডিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাইক। বাংলাদেশে ২০০ সিসি রোড পারমিট না থাকায় এর পরিবর্তে ১৫০ সিসি আর টি আর বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বাইকটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ নেহাত কম নয় আবার সমালোচনাও অনেক বেশি। যদিও টিভিএস বাংলাদেশের তথ্য মতে এর ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট ১৪৭ সিসি কিন্তু অনেকের দাবি অনুযায়ী আরটিআর বাইকগুলি মূলত ১৫৯ সিসি। আমি একজন আরটিআর ব্যবহারকারী এবং আজ আমি আপনাদের জানাবো এর সুবিধা এবং অসুবিধা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে।

আমি নিজেকে একজন বাইক প্রেমী হিসেবে দাবি করতে পারি যদিও এর আগে আমার নিজের কোনো বাইক ছিল না।  ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি আমার ছিল খুব বেশি আগ্রহ যখন আমার বাবা বাজাজ ৪s চ্যাম্পিয়ন বাইকটি চালাতেন। আমার বাইকের হাতে খড়ি হয় বাবার দ্বিতীয় বাইক বাজাজ বক্সার এটি ১০০ দিয়ে এবং তা আজ থেকে নয় বছর আগে। এর পর অনেক বাইক চালিয়েছি। কোনটা ছিল বাবার, কোনটা বন্ধুদের আবার কোনটা আত্মীয়দের। যখন নিজের বাইক কেনার প্রসঙ্গ এলো তখন পড়লাম বিপদে। বাজেট ছিল ২ লক্ষ। এর মধ্যে কোনটা কিনবো কারণ সবই ভালো লাগে। পছন্দের মধ্যে ছিল পালসার, ট্রিগার, অ্যাপাচি, হাঙ্ক, হিরো এক্সট্রিম। এখন বিচার করার পালা।

RTR Fuel tank

আর যাই হোক সর্বপ্রথম লুক্স এর দিকে আসতেই হবে এবং এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে অ্যাপাচি আরটিআর দেখতে সবচেয়ে সুন্দর এই সেগমেন্ট এ। তারপরেও কথা থেকে যায়।  যারা অনেক বাইক চালিয়েছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। তারা দ্বিতীয় যে জিনিসটা বললো তা হলো এর একসেলেরশন অর্থাৎ রেডি পিকআপ খুব ভালো। যার মানে বাইকটির স্পিড খুব ভালো। তিন নাম্বার বিষয়টি হলো এর ব্র্যান্ড ভ্যালু। ইন্ডিয়ান বাইক হওয়ার সুবাদে এর রিসেল ভ্যালু ভালো হবে। মূলত এই তিন বিষয়েই এগিয়ে থাকার কারণে সবশেষে আরটিআর বাইকটি নিয়ে নিলাম। একজন ২৬ বছর বয়সী রাইডারের জন্য আর কি চাই।

এরই মধ্যে আমি বাইকটি ৫০০০ কিমি এর বেশি চালিয়ে ফেলেছি এবং অনেক লম্বা পথও পাড়ি দিয়েছি। আসুন দেখে নেয়া যাক আমি কি কি সুবিধা এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। আমি পয়েন্ট আকারে লিখছি আপনাদের সুবিধার জন্য।

প্রথম – এই সেগমেন্ট এ ন্যাকেড এডিশন বাইকগুলোর মধ্যে আরটিআর এর লুক্স আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে চরম লাগে। এর জিনিসটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এর মধ্যে কিছুটা এগ্রেসিভ স্পোর্টস লুক্স বিদ্যমান।

দ্বিতীয় – এর হেডলাইটের ডিজাইনটা অসাধারণ বিশেষ করে এর পার্কিং লাইট টা। যদিও এর হেডলাইটের পাওয়ার কম এই জন্য অন্ধকার রাতে কিছুটা সমস্যা হয়। আমার জানামতে ইন্ডিয়ান বাইকগুলোতে এই সমস্যা বিদ্যমান। কোম্পানির উচিত এলইডি হেডলাইট ব্যবহার করা। টেইল লাইট টা কিন্তু ঠিকই এলইডি।

Apache RTR 150 headlight

তৃতীয় – এর রেডি পিকআপ। এটি এক কথায় চরম। এটি হচ্ছে আর টি আর নামের সার্থকতা। আর টি আর – রেসিং থ্রটল রেসপন্স। এর স্পিড খুব দ্রুত ১০০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত ওঠে কিন্তু এরপর স্পিড উঠতে সময় লাগে। আমার বাইকের সর্বোচ্চ গতি এখন পর্যন্ত ১০৭ কিমি/ঘন্টা। আরো স্পিড উঠতো কিন্তু রাস্তার সংকুলান হয় নাই।

চতুর্থ – আমি নিয়ম করে মবিল পরিবর্তন করেছি। প্রথমবার ৫০০ এবং এরপর থেকে ১০০০ কিমি পর পর পরিবর্তন মবিল করেছি। প্রথমবার কোম্পানির মবিল, দ্বিতীয়বার ভিস্কো ৩০০০ এবং এর পর থেকে হ্যাভলিন ব্যবহার করছি। ইঞ্জিন একটু গরম হচ্ছে কিন্তু খুব বেশি না।

পঞ্চম – আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৪৪ কিমি অ্যাভারেজ।

ষষ্ঠ – আমি একটানা প্রায় ২০০ কিমি চালিয়েছি আমার অ্যাপাচি দিয়ে কিন্তু কোনো সমস্যা ফেস করিনি। সেদিনই টপ স্পিড ১০৭ কিমি/ঘন্টা তুলেছিলাম। তবে ইঞ্জিন কিছুটা গরম হয়েছিল।

সপ্তম – এর রেয়ার টায়ার নিয়ে আমি কিছুটা অসুন্তষ্ট। আমার মতে ১২০/৮০ টায়ার ব্যবহার করা ভালো। তাতে ভালো গ্রিপ পাওয়া যায় এবং ব্যালান্স ভালো হয়। এবং সব সময় কোম্পানি প্রদত্ত, টায়ার প্রেশার রাখা উচিত। চাকায় হাওয়া বেশি থাকলে স্কিড্ করার সম্ভবনা বেশি থাকে। আমি সামনের চাকায় হাওয়া ৩০ এবং পিছনের চাকায় ৪৫ পিএসআই রাখি।

RTR Rear tyre

অষ্টম – অনেকেই আরটিআর এর ব্রেকিং নিয়ে কমপ্লেইন করেন। আমার কাছে মনে হয় এক্ষেত্রে ব্রেকের ত্রুটি যতটা তার চেয়ে রাইডারের সমস্যা বেশি। স্টক টায়ার তুলনা মূলক কম গ্রিপ দেয় সেজন্য সেটা পরিবর্তন করে এমআরএফ ব্যবহার করা উচিত। এবং ততটুকু স্পীডে রাইড করা দরকার যতটুকু আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন। অধিক স্পিড সবসময় ক্ষতিকর। আমি আমার বাইকের স্পিড প্রায় সবসময়ই ৬০ – ৭০ কিমি/ঘন্টা রাখি বা রাখার চেষ্টা করি। একদম ফাকা রাস্তা হলে ভিন্ন কথা। ভালো ব্রেক পাওয়ার জন্য ফ্রন্ট এবং রিয়ার ব্রেক দুটাই ব্যবহার করা দরকার। সাধারণত সামনের টায়ারে হাওয়া বেশি থাকলে ফ্রন্ট ব্রেকে বাইক স্কিড্ করার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই সামনের চাকায় হাওয়া কম রাখবেন।

RTR Disk Brake

নবম – এবার আসি ভাইব্রেশন এ। এটা আর টি আর এর একটু বড় ফ্যাক্ট। যদিও বাইক ক্রয়ের আগে আমি এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সঠিক জানতাম না। আমি যতটুকু বুঝি, ৯০ কিমি/ঘন্টা স্পিড এর পর আরটিআর বাইক কিছুটা ভাইব্রেট করে কিন্তু এটি পরে অভ্যস্থ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে খুব সামান্যই ভাইব্রেট অনুভূত হয়। কিন্তু আসলে মানুষ যতটা বলে তার কিছুই কিন্তু নাই। তারা বলে এটা নাকি একটা ভাইব্রেট মেশিন।  কথাটি কোন ভাবেই যুক্তিসংগত নয়। যারা আর টি আর চালিয়েছে তাদের কাছ থেকে সত্যটা জানতে পারবেন বলে আশা করি। দুই একদিন রাইড করে ভালো এবং মন্দ সার্টিফিকেট দেয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তার বিচারের ভার আপনার।

দশম – এবার আসি আরটিআর এর ফিচারে। এর রয়েছে ডিজিটাল স্পীডোমিটার এবং এনালগ ট্যাকোমিটার। ডিজিটাল মিটারে ওডোমিটার, ট্রিপ মিটার, ফুয়েল গেজ, ডিজিটাল ক্লক সবই রয়েছে। যদিও ঘড়িটি মাঝে মাঝে স্লো হয়ে যায়। আমাকে এ পর্যন্ত দুবার সময় ঠিক করতে হয়েছে।

Apache RTR Dashboard Meter

একাদশতম – এর ফুয়েল ট্যাঙ্ক অর্থ্যাৎ বডি কিট খুব শক্তিশালী নয়। একবার বাসার পিলারের সাথে হালকা লেগেছিলো তাতেই একটুখানি বেঁকে গেছে। আমি দুর্বল ফুয়েল ট্যাংক এর জন্য খুবই অসুন্তষ্ট।

দ্বাদশতম – এবার আসি টিভিএস এর সার্ভিসের বর্ণনায়। এক বছরে চারটা ফ্রি সার্ভিস দেয় টিভিএস কোম্পানি। এর সাথে রয়েছে চারটা পেইড সার্ভিস যেখানে ২০০/- টাকা জমা দিয়ে যেকোনো কাজ করিয়ে নিতে পারবেন তবে পার্টস এর খরচ অবশ্যই আলাদা দিতে হবে। এছাড়াও রয়েছে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ফ্রি সার্ভিসিং ক্যাম্পেইন কোম্পানির পক্ষ থেকে। আমার কাছে ওদের সার্ভিস যথেষ্ট আন্তরিক মনে হয়েছে। আমি ওদের প্রত্যেকটি সার্ভিস গ্রহণ করেছি এবং করছি।

rtr user review

সবশেষে বলতে হয়, নিয়ত গুনে বরকত। অর্থাৎ ব্যবহার ঠিকমতো জানলে অ্যাপাচি আর টি আর আপনাকে মনের মতো সার্ভিস দিতে সক্ষম যদিও এর দ্বারা আপনি আর১৫ এর মজা পাবেন না। কিন্তু এই সেগমেন্টে ন্যাকেড এডিশন স্ট্যান্ডার্ড বাইকগুলোর মধ্যে আরটিআর যে একটি অন্যতম বাইক তা বলাই বাহুল্য।

 

লিখেছেনঃ অপু