Suzuki Gixxer SF এর ৩১০০০ কি.মি ইউজার রিভিউ লিখেছেন “শেখ রাকিব”

সুজুকি জিক্সার এস.এফ ৩১০০০ কি.মি ইউজড রাইড রিভিউ

২০১৭ এর আগষ্ট মাসে সুজুকি জিক্সার এস.এফ সিঙ্গেল ডিস্ক বাইক টা আমি ক্রয় করি। ২০০০ কি.মি. পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড সঠিক ভাবে মেইনন্টেইন করি। প্রথম থেকেই আমি sell advance 20w-40 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। প্রতি লিটার ফুয়েলে আমি সিটিতে ৩৭-৩৮ কি.মি. এবং হাইওয়েতে ৪২-৪৪ কি.মি মাইলেজ পেয়েছি।

Suzuki Gixxer sf এর কিছু ভাল দিক ও খারাপ দিক শেয়ার করছি

ভালো দিক :

১। বাইকটি ফুল ফেয়ার্ড হওয়ায় এর লুকিং বেশ ভালো।
২। বাইকটির থ্রোটল রিসপন্স (রেডি পিকআপ) খুবই চমৎকার হওয়ায় খুব সহজে এবং কনফিডেন্সের সাথে ওভারটেকিং করা যায়।
৩। বাইকটির অসাধারন ব্যালেন্স ও কন্ট্রোল রাইডিংয়ের সময় আমাকে পর্যাপ্ত কনফিডেন্স যুগিয়েছে।
৪। বাইকটির সামনে ও পেছনের চাকা মোটা হওয়ায় এর ব্রেকিং খুবই ভালো ফিডব্যাক দেয়। রাফলি ব্রেক ব্যবহারে চাকা স্কীড করার প্রবণতা খুব কম।
৫। সুজুকি জিক্সার এস.এফ – এ প্রতি লিটার ফুয়েলে এভারেজ ৪০ কি.মি মাইলেজ পাওয়া যায়।
৬। টপ স্পীডে বাইকটি কোন রকম ভাইব্রেশন করে না,এবং এর অ্যরোডায়নামিক সেপের জন্য হাই স্পীডে বাতাসের কোন রকম চাপ পেতে হয় না বরং খুব ইজিলি ১১০+ গতিতে রাইড করা সম্ভব।
৭। বাইকটির সর্বোচ্চ গতি পয়েছি ১২৬ kmph. খুব সহজেই ০-৯০ kmph গতি তোলা যায়।
৮। বাইকটি থেকে স্পোর্টি সাউন্ড অনুভব করা যায়।
৯। বাইকটি পিলিয়ন সহ রাইড করলে এর ইঞ্জিনের পাওয়ারলেস হয় না।
১০। বাইকটির সামনে ও পিছনের সাশপেনন্সন থেকে যেকনো ধরনের রাস্তায় খুবই ভালো ফিডবেক পাওয়া যায়।
১১। বাইকটির পারফরমেন্স সত্যি ফিল করার মত।

খারাপ দিক:

১। বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে খুব ভালো মনে হয়নি।
২। বাইকটির হেডলাইটের আলো রাতে রাইড করার জন্য পর্যাপ্ত না।
৩। বাইকের পিলিয়ন সিট একেবারেই আরামদায়ক না। বাইকে পিলিয়ন নেয়ার চাইতে আর্থিক ঋণ থাকা অনেক ভালো।
৪। বাইকের লুকিংগ্লাস বার বার লুজ হয়ে যায়।
৫। বৃষ্টিতে বাইক রাইড করলে, সামনের চাকার ছিটা পানি সব পায়ে এসে পরে।
৬। বাইকের চেন স্পোকেট খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে সামনের স্পোকেটটি।
৭। বাইকের বিল্ট ইন হর্ণ, ইজি বাইকের হর্ণের চেয়েও বাজে।
৮। কোন কোন সময় হঠাত বাইকের সাউন্ড বিকৃত হয়ে যায়। তবে সেটা পরে একা একাই ঠিক হয়ে যায়।
৯। বাইকের অপারেট সুইচের মান জঘন্য।
১০। হাই স্পীডে অনেক সময় বাইকের তেল ছেড়ে দেয়। কিছুক্ষণ রাইড করার পর আবার একাই ঠিক হয়ে যায়।(কার্বুরেটরে ময়লা জমলে নাকি এমন হয়)।
১১। এর যন্ত্রাংশের দাম তুলনামূলক বেশি।
১২। বাইকটির ইন্জিনে নরমাল গেসকেট ব্যবহারের জন্য, অনেক বাইক থেকে ইঞ্জিন অয়েল লিক করার অভিযোগ আছে। কিন্তুু আমার এখন পর্যন্ত এই সমস্যা হয়নি। কোম্পানির এই সমস্যা খুব জোর দিয়ে নির্মূল করা উচিত বলে মনে করি।

৩১০০০ কি.মি রাইড করে আমি সুজুকি জিক্সার এস.এফ এর এই ভালো ও খারাপ দিক গুলো লক্ষ্য করেছি।

স্বভাবতই আমি একজন রুড রাইডার। বাইকের যত্ন তেমন ভাবে করি না। ভালো ভাবে যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে হয়তো আরো ভালো ফিডব্যাক পাওয়া সম্ভব হতো।
বাইকটি নিয়ে আমি কয়েকটি লং ট্যুর দিয়েছি।
ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-শেরপুর, শেরপুর-সিরাজগন্জ, ঢাকা-নেএকোনা।
suzuki gixxer sf বাইকটি নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞাত হলো ১ দিনে(১৯ঘন্টায়) প্রায় ৮৪০ কি.মি রাইড করা (ঢাকা-রাজশাহী-শেরপুর)। এই ৮৪০কি.মি পথে বাইকটি কনো রকম সমস্যা করেনি। আমি অবাক হয়েছি যে আমি বাইকটি যত চালিয়েছি আমার কাছে ততই স্মুথ মনে হয়েছে। এক মূহর্তের জন্য মনে হয়নি বাইকটি ক্লান্ত।সত্যি বলছি, এই ট্যুরটি সম্পন্ন করার পর আমার বাইকের প্রতি ভালবাসার জায়গাটা অনেক টুকু বেড়ে গেছে। অনেকের কাছে শুনেছি সুজুকি জিক্সার এস.এফ সিটি রাইডিং এর জন্য ভালো, কিন্তু লং রাইডের জন্য ভালো না।কিন্তু, আমার কাছে মনে হয় সুজুকি জিক্সার এস.এফ লং রাইডের জন্য অন্যতম একটি বাইক।

(ঢাকা-রাজশাহী-শেরপুর) ১ দিনে ৮৪০কি.মি লং রাইডের ভিডিও চাইলে দেখতে পারেন।

(ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)

এই ১০০০ কি.মি চালিয়ে আমি বাইকের যে যন্ত্রাংশ গুলো পরিবর্তন করেছি: 

১। চার বার উভয় ব্রেক সো পরিবর্তন করেছি।
২। বাইকের বল রেসার একবার পরিবর্তন করেছি।
৩। বেক চেসিস বুস পরিবর্তন করেছি।
৪। চেন স্পকেট পরিবর্তন করেছি ২ বার।
৫। ক্লাচ ক্যাবল ও পিকাপ ক্যাবল পরিবর্তন করেছি।
৭। তিন বার এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি।
৮। সামনে ও পেছনের উভয় টায়ার পরিবর্তন করেছি।(২০০০০ কি.মি.তে..)
৯। ট্যাপিড মিলানো ছাড়া বাইকের ইন্জিনের একটা নাটও খোলতে হয়নি। ইন্জিনে এখনো নতুনের মতো কাঙ্খিত স্মুথনেস বজায় আছে।
১০। আমি সবসময় ৬০০-৭০০ কি.মি চালিয়ে মবিল পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেছি।

বাইকের রিভিউ একেবারে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে করেছি।
সমস্ত বাইকারদের জন্য অনেক ভালোবাসা রইলো।
ধন্যবাদ।

 

লিখেছেনঃ Sheikh Raqib