উৎপাদনে উৎসাহ, দাম বাড়বে বিদেশিগুলোর

বিদেশ থেকে খোলা অবস্থায় (সিকেডি) আমদানি করার পর সংযোজন করে যেসব মোটরসাইকেল দেশে বিক্রি হয়, সেগুলোর দাম বাড়বে। কারণ, এসব মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে হোন্ডা, বাজাজ, টিভিএসের মতো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে জানিয়েছে এসব বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে মোটরসাইকেলের সিকেডি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক দুই বছরের জন্য ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে। এ বিষয়ে গত বছরের ১ জুন একটি পরিপত্র জারি করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাতিল করে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ করে ১ জুন নতুন করে পরিপত্র জারি করা হয়।
সম্পূরক শুল্ক কমে যাওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মোটরসাইকেলের দাম সিসিভেদে (ইঞ্জিনের ক্ষমতা) ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কমে। যেমন টিভিএস ব্র্যান্ডের আরটিআর অ্যাপাচি (সিঙ্গেল ডিস্ক) মোটরসাইকেলের দাম আগে ছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। সেটি এখন ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হলে এটির দাম আবার ২ লাখ টাকা হবে।
আমদানিকারক ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেলের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কম কমায় মোটরসাইকেলের বাজারে যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, সেটি থেমে যাবে। আমদানি হওয়া মোটরসাইকেলের দাম এখনো না বাড়লেও নতুন করে সিকেডি আমদানির ঋণপত্র কোম্পানিগুলো এখন খুলছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী মাস থেকে বাজারে পড়বে।
জানতে চাইলে টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো শিল্প উন্নয়নের জন্য একটা গঠনমূলক নীতিমালা দরকার। এ বিষয়ে যখন একটা অগ্রগতি হচ্ছে, তখন ছয় মাসের মাথায় এসে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হলো। আগের পরিপত্রে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রগতিশীল উৎপাদকদের দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। সে পরিকল্পনামাফিক কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক সময় দেওয়া হলে বাজার বড় হতো, সহযোগী শিল্প উন্নত হতো—সবকিছু মিলিয়ে একটা উৎপাদনে যাওয়ার একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হতো।
দেশে মোটরসাইকেলের উৎপাদন উৎসাহিত করতে এনবিআর গত বছরের পরিপত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দুই বছরের মধ্যে উৎপাদক হিসেবে দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করতে হবে। এই শর্তেই বাজাজ, টিভিএস, হিরো, হোন্ডাসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি ব্র্যান্ড প্রগতিশীল উৎপাদক হিসেবে অনুমোদন নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য কারখানা তৈরির কাজও শুরু করেছে।
তবে দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিকেডি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি মূল্য কমিয়ে সাময়িকভাবে বিক্রি বাড়লেও দেশে মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠবে না। এতে দেশের মানুষকে কম দামে মোটরসাইকেল দেওয়ার মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না।
বর্তমানে দেশে মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে তিন ধরনের কর ব্যবস্থা আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ এনে দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করে, তাদের সব মিলিয়ে ৩৮ শতাংশ কর দিতে হয়। দেশীয় ব্র্যান্ড রানার এই হারে তাদের কাঁচামাল আমদানি করে। যারা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনসহ সব যন্ত্রাংশ আলাদা এনে দেশে সংযোজন করে, তাদের ৮৯ শতাংশ কর দিতে হয়। বাজাজ, টিভিএস, হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সাধারণত এ পদ্ধতিতে দেশে আমদানি করে বিক্রি করা হয়। আর যারা সম্পূর্ণ তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়। জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকির মোটরসাইকেল এ পদ্ধতিতে দেশে আমদানি করা হয়। এ জন্য এসব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম বাজারে সবচেয়ে বেশি।

 

সূত্র: প্রথম আলো