Bajaj Pulsar NS 160 মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাইজুল কাবীর নীরব)

আসসালামু আলাইকুম,
আমি ফাইজুল কাবীর নীরব। আমি ২০১৮-২০১৯ ব্যাচ এর ইন্টার পরিক্ষার্থী,
আমি গত কয়েক মাস যাবত Pulsar NS 160 বাইকটি ব্যবহার করি। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার বাইক নিয়ে কিছু কথা। আমার বাসা ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া তে। আমি একজন স্টুডেন্ট কিন্তু ট্রাভেল করতে ভালোবাসি ছোট থেকেই। বাবার সাথে ছোটবেলায় নানান দূরের জায়গায় ঘুরতে যেতাম। আমার বাবাও বাইকার ছিলেন শুধু সরকারি চাকরী করতেন বিধায় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মুভ করতেন। আমি মটো ট্রাভেলিং টা কে নিজের শখ হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমার বাবা ক্লাস 6 এ থাকতে আমাকে বাইক চালানো শিখিয়ে ছিলেন। যাইহোক আমার বাইকটি আমি ৭৬০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। আমাদের দেশের রাস্তাগুলো যেমন – উঁচুনিচু, পাহাড়ি, লালমাটি, কাচা রাস্তা, পাকা রাস্তা সহ মোটামুটি প্রায় সকল রাস্তায় রাইড করেছি। আজকে সেই রাইডগুলোর পরে নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বাইকটির প্রায় সবগুলো ভালো আর খারাপ দিকগুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেস্টা করবো।
কেন আমি এই বাইকটি কিনলামঃ-
আমাকে অনেকে বলেছে যে – আমি বাইকের ব্রেকিং মোটামুটি, তবুও কেন নিলে? তখন আমি ঠান্ডা মাথায় বলেছি যে – এই বাইক টার চেয়েও বড় বাইক কিনার সামর্থ্য আছে কিন্তু এই বাইক এর মজা যে একবার পেয়েছে সে কখনো পারবে না এই বাইক না কিনে থাকতে, হ্যা আপনার কথা অনুযায়ী ব্রেকিং আর কন্ট্রোল ভালো না, কিন্তু একেবারেই যে খারাপ তা কিন্তু নয়, আমি সর্বদা একটা কথা ই মেনে এসেছি – “একজন রাইডার এর ওপর একটি বাইক নির্ভর করে, বাইকের ওপর রাইডার নির্ভর করে না”। এখন রাইডার যদি নিজের দোষে এক্সিডেন্ট করে তখন তো বাইকের দোষ হবেই। এটাই স্বাভাবিক। বাজেট এর জন্য না, আমি রাইড করে অভ্যস্ত হয়ে মজা পেয়েছিলাম তাই আবার কিনেছি। আমার খুব ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিলো এই বাইক কিনার, অন্যরকম আকর্ষন তৈরী হয়েছিলো। আমরা যখন কোন বাইক কিনি বা কিনার জন্য লক্ষ্য স্থির করি তখন আমরা সেই বাইকের পার্ফরমেন্স নিয়ে আগে কথা বলি, পরবর্তীতে আউটলুক, ব্রেকিং সিস্টেম, বিল্ড কোয়ালিটি, মাইলেজ, হেডলাইট এবং ব্যাটারী, পার্টস, সার্ভিস এবং আরো অনেক কিছু নিয়েই কথা বলে থাকি,
আজ এই বাইকের ব্যাপার এ সকল কিছু শেয়ার করবো ধীরে ধীরে।
1. Performance :
একটি বাইকের মুখ্য বিষয় বলতে আমরা বুঝি বাইকের পার্ফরমেন্স । এই বাইকটি তে রয়েছে 160.3 CC 4 Stroke, SOHC 4 Valve, Oil Cooled, Twin Spark BSVI DTS-i FI engine যার থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার 17.2 PS @9000 rpm এবং সেই সাথে এটি 14.6 নিউটন মিটার @7250 rpm টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
2. Outlook :
এই বাইকের আউটলুক টা আমার কাছে অনেক বেশিই ভালো লেগেছে । এই বাইকের লুকটা আমার কাছে বেশ ড্যাশিং আর স্পোর্টি মনে হয়েছে। তবে এই বাইকটির স্পিড অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের ১৫০ বা ১৬৫ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করা যায়। এমনকি স্পিড অনুযায়ী এই বাইকটি ১৮০ সিসি বাইকের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
3. Braking System :
আমার এই বাইকের সামনে 260mm Disc Brake এবং পেছনে 230mm Disc Brake । অন্য রাইডার রা বলেছে যে – এই বাইকের ব্রেকিং নাকি তেমন ভালো না, আমি বলি – সব কাজ শুরুতেই সহজ হয় না, তেমনি একবার আয়ত্তে এসে গেলে আলহামদুলিল্লাহ একেবারে সেটিসফাই হওয়া যায়। তবে আমি ব্রেকিং এ খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি কিন্তু চাকা আরেকটু মোটা হলে মনে হয় আরো ভালো ব্রেকিং সাপোর্ট পাওয়া যেতো।
4. Build Quality :
বিল্ড কোয়ালিটি আমি মোটামুটি ভালো পেয়েছি, বাইকের কালার এবং ফিনিশিং থেকে শুরু করে পুরো বাইকের লুক টা আমাকে আকৃষ্ট করেছে, আমি ছোটাখাটো কিছু কারনবশত ২-৩ বার পড়েছিলাম কিন্তু তেমন কোন ক্ষতি হয় নি বাইকের,
এক কথায় বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
5. Mileage:
এই বাইকে আছে ১২ লিটার ক্যাপাসিটিভ ফুয়েল ট্যাংক । এই বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি মোটামুটি ভাবে সন্তুষ্ট । সিটি রাইড এ আমি পাই ৩৮-৪০ কিলোমিটার এর মতো এবং হাইওয়ে তে পাই ৪২-৪৫ কিলোমিটার এর মত। আসলে মাইলেজ এর ব্যাপার টা কিছুটা বাইক মেইনটেইন এর ওপর নির্ভর করে থাকে।
6. Head light & Battery :
এই বাইকের ব্যাটারি 12V Full DC MF, ব্যাটারি পার্ফরমেন্স মোটামুটি ভালো পেয়েছি এই ১ বছরের ওপর ব্যবহার করতেছি, কোনরকম ব্যাটারির কোন সমস্যায় পড়তে হয় নি এখনো। হেডলাইট H4 (12V 55/60W), এই লাইট নিয়ে আমি মোটামুটি অনেকটা ই অসন্তুষ্ট ছিলাম, রাতে চলাফেরা করার সময় মোটামুটি ভালো সাপোর্ট পাই নি, তারপর আমি নিজে স্টক লাইট চেঞ্জ করে LED লাইট লাগিয়ে নিয়েছি, তবে খুব ভালো সাপোর্ট পাই এই ব্যাটারি এবং হেডলাইট থেকে।
7. Service & Parts :
এই বাইকের কিছু পার্টস ব্যতীত প্রায় সব পার্টস গুলো আমি পেয়েছি, আমি আমার বাইক নিয়মিত সার্ভিস করিয়েছি এবং সময়মত ব্রেক প্যাড , এয়ার ফিল্টার , মবিল ফিল্টার, চেইন স্পকেট ইত্যাদি সহ আরো নানান পার্টস চেঞ্জ করেছি, কিন্তু আমার কাছে বাইকের কিছু পার্টস এর দাম একটু তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হয়েছে। তাছাড়া বাইক এ রয়েছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার, 3 Part Handle, সামনে Telescopic suspension with Anti-friction Bush এবং পিছনে Nitrox mono Shock absorber with Canister , টিউবলেস চাকা, সামনে পেয়েছি ৯০/৯০× ১৭ এবং পিছনে পেয়েছি ১২০/৮০× ১৭ সাইজের টায়ার যা এই বাইক এর সবকিছুর সাথে আআলহামদুলিল্লাহ সুন্দর মানানসই। বাইকটির ওজন ১৫১ কেজি। রয়েছে LED ইনডিকেটরস। ক্লিয়ার লুকিং গ্লাস, পিলিয়ন গ্র্যাভ রিল। আমি আমার বাইকে হালকা মডিফাই করেছি, হ্যান্ডেল বার এর ২ মাথায় লাইট লাগিয়েছি, বাইকের চাকা এবং সাসপেনশন এ হালকা স্টিকার মডিফাই করেছি।
Good & Bad Sides :
ভালো দিকগুলোর মধ্যে হলো যে – মাইলেজ মোটামুটি ভালোই পাওয়া যায়, সিটি রাইড এ ভালো মজা পাওয়া যায়, ইঞ্জিন এর পার্ফরমেন্স ভালো তবে একটু বেশিই গরম হয়ে যায় মাঝে মধ্যে, বিল্ড কোয়ালিটি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, এই বাইকের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এক্সস্ট সাউন্ড টা এবং রেডি পিকাপ, কর্নারিং গুলো মোটামুটি খুব ভালোভাবে করা যায় একটু হালকা কৌশল অবলম্বন করে এবং এই দামের তুলনায় এই বাইক আলহামদুলিল্লাহ কিনে ফেলা যায়,
খারাপ দিকগুলো হচ্ছে – চাকা চিকন হওয়াতে বৃষ্টি বাদলের দিনে একটু বেশিই সমস্যায় পড়তে হয়, মোটামুটি ভালো স্পিড উঠলে বাইক পাতলা হয়ে যায়, নাড়াচাড়া শুরু করে দেয়, তখন কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে যায়, প্রায় অনেকটা দক্ষতার প্রয়োজন। এই বাইকের টপ স্পিড আমি পেয়েছি – ১২৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।
Personal Opinion :
আমি প্রায় ৮-৯ টি জেলায় রাইড করেছি আমার বাইক নিয়ে, কোন প্রকার হতাশ বা কোনরকম বিপদে আল্লাহ এখনো ফালান নি, আমি যখন হাইওয়ে তে রাইড করি তখন বাইক টির রেডি পিকাপ আমাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দেয়, বিশেষ করে ওভারটেকিং এ, মোটামুটি খুব অল্প সময়ে ভালো স্পিড এর মাধ্যমে ওভারটেক করে ফেলতে পারি,
ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে আমি –Shell Advance Full Synthetic ব্যবহার করি, যা আমাকে দোকান থেকে বলা হয়েছে ১৮০০-২০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে পরিবর্তন করতে কিন্তু আমি ১৩০০-১৫০০ এর মধ্যেই পরিবর্তন করে ফেলি, এই ইঞ্জিন ওয়েল টায় বাইক এর স্মুথনেস এর কমতি নেই! নতুন বাইক কিনার পর আমি ৪টা ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি টাইমলি এবং একটা পেইড সার্ভিস করিয়েছি, বাসার পাশেই শোরুম তাই আমার তেমন কোন সমস্যা হয় নি বাইক এ এখন পর্যন্ত,শোরুম এর পুলাপান রা ই ছোটখাটো সমস্যা গুলো সমাধান করে দেয়, বাইক টা আমার হলেও ওরা যত্ন বেশি করে, ওরা বেশি ভালোবাসে আমার বাইক টা কে, আর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে আমার বাবা আমার বাইক কে,বাবা সরকারি চাকরি করে তাই সময় কম পায়, তবুও অনেক টা ই করে, সর্বশেষ এ একটা কথা বলতে পারি – সব জিনিস এর ভালো এবং খারাপ দিক ছিলো আছে এবং আজীবন থাকবেই, একেবারে ১০০% ভালো করে কোন জিনিস এখনো দুনিয়া তে আসে নি আর আসবেও না, তবে যারা মধ্যম বাজেট এ এই বাইক কিনতে চান তারা কিনতে পারেন, আমি মনে করি না খারাপ হবে কারন একটা বাইক কে একটা রাইডার এর চেয়ে ভালো কেউ বুঝে না, তাই আমি বলবো কিনতে পারেন যদি ভালো লেগে থাকে। সকলের উদ্দেশ্যে আমার একটি কথা –
সকলে সর্বদা হেলমেট পড়ে বাইক চালাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন কারন আমি আমার বাইক নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। সকল কে ধন্যবাদ, লেখায় কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।

Related Posts

error: Content is protected !!