জাপানি মোড়কে নকল ইয়ামাহা মোটরসাইকেল দেশে ঢুকছে ভারত থেকে

‘জাপানি মোটরসাইকেল’ নাম দিয়ে ভারত থেকে অভিনব কৌশলে দেশের বাজারে ঢুকছে নকল ও নিম্নমানের মোটরসাইকেল। ঢাকাভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় একটি কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে নিম্নমানের ইয়ামাহা মোটর সাইকেল আমদানি করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। অবৈধ ওই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের জারি করা মেধাস্বত্ব বিধিমালা ভঙ্গ করে ভারত থেকে অবৈধভাবে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল আমদানি করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের এএমএস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভারতের একটি কোম্পানি থেকে এসব ইয়ামাহা মোটরসাইকেল অবৈধভাবে আমদানি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জাপানের তৈরি করা মোটরসাইকেল আমদানির অনুমোদিত কোম্পানি এসিআই মোটরস। কিন্তু বৈধ এই প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে ঢাকার এএমএস ইন্টারন্যাশনাল ভারত থেকে নকল ও নিম্নমানের ইয়ামাহা মোটর সাইকেল আমদানি করে চলেছে— যা কাস্টমস আইনে নিষিদ্ধ।

জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকেই জাপানের ইয়ামাহা মোটরসের অনুমোদিত ডিলার এসিআই মোটরস। গত ২ মার্চ জাপানি ইয়ামাহা কোম্পানির সাথে এসিআই মোটর্সের চুক্তি আরও দুই বছরের জন্য নবায়ন করা হয়।

এদিকে মেধাস্বত্ব জালিয়াতির এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এসিআই মোটর্সের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার বরাবর গত বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) একটি আবেদন করা হয়। এতে কাস্টমস আইনে অবৈধ ওই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বিষয়টি ‘অতি জরুরি’ উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন জয়েন্ট কমিশনার (জেসি) জেটি তোফায়েল আহমদ ও সহকারী কমিশনার (এসি) এআইআর মোহাম্মদ রেজাউল করীমকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসিআই মোটর লিমিটেডের বিজনেস ম্যানেজার মোহাম্মদ রবিউল হক বলেন, ‘ইয়ামাহা মোটর সাইকেল আমদানির জন্য আমরাই একমাত্র ডিলার। জাপান থেকে সঠিক পণ্যটা আমদানি করে এসিআই মোটর্স। কিন্তু ভারত থেকে একই ব্রান্ডের ইয়ামাহা মোটরসাইকেলগুলো নকল। অবৈধভাবে আমদানি করা নকল ইয়ামাহা মোটর সাইকেল কিনে ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের এএমএস ইন্টারন্যাশনাল ভারতের রপ্তানিকারক কোম্পানি ইন্ডিয়ান মোটর্স থেকে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল আমদানি করছে। এ জন্য সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে এলসি (০০০০১২২০২০০১০১৭১) করে ৫৮ হাজার ৫০০ ডলার পরিশোধও করা হয়েছে। এতে ৫০টি ইয়ামাহা এফ জেড ১৫০ সিসির মোটর সাইকেল কেনার কথা উল্লেখ করা হয়।

এ চালানটি ছাড় নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসে গত ১৩ নভেম্বর বিল অব এন্ট্রি (সি নং ১৫৬১৬৮২) দাখিল করে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বারেক ব্লিডিংস্থ সাবের প্লাজার সিএন্ডএফ এজেন্ট এইচএম ইন্টারন্যাশনাল। ওই সিএন্ডএফের মালিক হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘মেধাস্বত্ব যাদের অনুকূলে থাকবে, তারাই কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনা করবে— এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এসিআই কোম্পানির কাছে সেটি আছে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। তবে কাস্টমসই সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক।’

এ বিষয়ে কাস্টমস হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ টিম (এআইআর) সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ রেজাউল করীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেধাস্বত্ব যে কোম্পানির অনুকূলে, সেই কোম্পানিই মোটরসাইকেল আমদানি করতে পারবে। এর বাইরে কেউ আমদানি করলে তা হবে অবৈধ। তবে কাস্টমস হাউসের সংশ্লিষ্ট গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে অবগত করা হলে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতো। এসিআই মোটর লিমিটেডের আবেদনের বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্রঃ চট্রগ্রাম প্রতিদিন।