ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ কি? ফ্ল্যাশ অয়েল ব্যবহার করা কি জরুরী? (বিস্তারিত)

একটি ইঞ্জিনকে তুলনা করা হয় মানবদেহের হৃদপিন্ডের সাথে। কেননা একটি ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন থাকলেই, একটি গাড়ি সচল থাকে, তা থেকে পাওয়া যায় আশানুরূপ পারফর্মেন্স। একটি গাড়ির ইঞ্জিনকে দীর্ঘদিন ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য তা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্নের প্রয়োজন হয়। ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ এমনই একটি মেইনটেনেন্স এক্টিভিটি যা একটি গাড়ির ইঞ্জিন কে ভালো ও ত্রুটি মুক্ত রাখার জন্য করা হয়। আজকের এই লেখাটিতে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

এই লেখাটি পড়লে জানতে পারবেন:

১) ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ কি?

২) কেন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা হয়?

৩) কখন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ দিতে হয়?

৪) কি ভাবে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা হয়?

৫) ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা।

আসুন বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।

১) ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ কি?

চলতে চলতে একটি গাড়ির ইঞ্জিনের ভিতরে গাদ টাইপের ময়লা জমে যায়। কারণ, গাড়ির ওয়েল ফিল্টার ২৫ মাইক্রনের চেয়ে ছোট ময়লা ও ধূলি কনা ফিল্টারিং করতে পারে না। তাই ইঞ্জিন ওয়েল ড্রেন করার পরও এর ভিতরে থেকে যায় নানা রকম ছোট ছোট ধাতব কনা, ধুলি কনা ও চটচটে পদার্থ। সেই ময়লা কে রাসায়নিক তরল পদার্থ ব্যবহার করে বের করে ফেলাকেই ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ বলে। সঠিক সময়ে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা না হলে এই ময়লা জমে ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা টা খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা গাড়ির মেইনটেনেন্স এক্টিভিটিস এর মধ্যেই পড়ে।

২) কেন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা হয়?

সাধারণত একটি গাড়ির ইঞ্জিনকে ভালো রাখার জন্যই ইঞ্জিন ফ্লাশ করা হয়। অয়েল ফিল্টার সাধারণত ২৫ মাইক্রোন এর নিচের ময়লা বা ধূলিকণা গুলোকে আইডেন্টিফাই করতে পারে না। এই ছোট ছোট ধূলি কণা বা ধাতব কণাগুলো জমতে জমতে ইঞ্জিনের ভিতরে গাদ টাইপের ময়লা জমে যায়। এতে করে ইঞ্জিনের ভিতরের পার্টসগুলো পর্যাপ্ত জায়গা পায়না কাজ করার জন্য। তাই ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করে এই ময়লা গুলোকে বের করে ফেলতে হয়। ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করার পর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে তা অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে এবং এর থেকে বেস্ট পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। এছাড়াও ইঞ্জিনের পার্টসগুলো অবাঞ্ছিত ক্ষয় রোধে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা অত্যন্ত জরুরী।

জেনুইন ফ্ল্যাশ অয়েল কিনুন অনলাইনেঃ www.vovopip.com

৩) কখন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ দিতে হয়?

যদিও বা ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ বাধ্যতামূলক কোনো কাজ নয়। নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন করলে ও এর ড্রেন পিরিয়ড ঠিক রাখলে ইঞ্জিন ফ্লাশ এর খুব একটা দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করাটা খুবই জরুরী হয়ে যায়। যেমনঃ

• যদি দেখেন আপনার ভেইকেলটি অতিরিক্ত জ্বালানি কনজ্যুম করছে তাহলে অবশ্যই একবার ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করে নেয়াটা জরুরী। কারণ, ইঞ্জিনে ত্রুটির জন্য অনেক সময় অধিক জ্বালানির খরচ হয়।

• কোন গাড়ির ইঞ্জিন থেকে যদি আশানুরূপ পারফরম্যান্স পাওয়া না যায়। তাহলে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ এর মাধ্যমে এর পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করা সম্ভব।

• সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক বা গাড়ি কেনার পর, যদি বাইকটি সম্পর্কে আগে থেকে অবগত না থাকেন তাহলে অবশ্যই একবার ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করে নেয়া উচিত।

• যে বাইক ও গাড়ি গুলোর মেইনটেনেন্স এর রেকর্ড থাকে না সে সকল বাইকগুলো চালানোর ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করাটা জরুরী।

• যে সকল ভেইকেলগুলোতে ইঞ্জিনের কাজ করা হবে, সেগুলোতে অবশ্যই একবার ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করে নেয়াটা জরুরী। কারণ, ইঞ্জিনের কাজ করার পরে অনেক রকম ছোট ছোট পার্টিকেল ইঞ্জিনের ভিতর থেকে যায়। যা ইঞ্জিন চলার সময় ঘর্ষণের ফলে ইঞ্জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এর সময় অবশ্যই একবার ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করে নেওয়া উচিত।

• যে গাড়ি বা বাইকগুলোতে ইঞ্জিন অয়েল সঠিক সময়ে ড্রেন করা হয় না বা ইঞ্জিন অয়েলের ড্রেন পিরিয়ড মেইনটেইন করা হয় না, সেগুলোতে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা জরুরি।

 

৪) কি ভাবে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা হয়?

ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করার জন্য ঠান্ডা অবস্থায় ও ইঞ্জিন ওয়েল থাকা অবস্থায় একটি গাড়ি বা বাইকের ইঞ্জিন ওয়েল ঢুকানোর রাস্তা দিয়ে ফ্ল্যাশ ওয়েল দিতে হবে এবং তা ইঞ্জিন ওয়েল এর সাথে মিশে যাওয়ার জন্য কিছু টা সময় দিতে হবে। এরপর কিছু সময়ের জন্য ইঞ্জিনকে অন করে নিতে হবে। এ সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাইক বা গাড়ির পিছনের চাকা ঘুর্ণয়মান থাকে। এতে করে ইঞ্জিনের ভিতরে জমে থাকা ময়লা গুলো খুব ভালো ভাবে ইঞ্জিন ওয়েলের সাথে মিশে যাবে। এ সময় থ্রোটল না করে হালকা ভাবে গিয়ার সিফট করা যেতে পারে। তারপর ইঞ্জিন ওয়েল ভালো ভাবে ড্রেন করে ফেলতে হবে এবং অবশ্যই ওয়েল ফিল্টারটি পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। ব্যাস হয়ে গেল ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ। এরপরে নতুন ইঞ্জিন ওয়েল ও ওয়েল ফিল্টার দিয়ে বাইকটি ব্যবহার করতে হবে।

 

৫) ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো হল:

• গাড়ি বা বিশেষ বাইকটি এমন জায়গায় রাখত হবে যেন পিছনের চাকা ঘুর্ণমান থাকে।

• ১০০ মিলির বেশি ফ্ল্যাশ ওয়েল

• ঠান্ডা অবস্থায় ফ্ল্যাশ ওয়েল ব্যবহার করা উত্তম।

• ঘন ঘন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা যাবে না।

• ইঞ্জিন ফ্ল্যাশের পর অবশ্যই ওয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করে নিতে হবে।

আশা করি, লেখাটি পরে উপকৃত হবেন।

অলি আহাদ খান

Related Posts

Add Comment

রিপ্লে দিন

error: Content is protected !!