Yamaha FZs V3 বনাম Suzuki Gixxer DD: কোনটি সেরা? (বিস্তারিত আলোচনা)

ইয়ামাহা এবং সুজুকি এই দু’টি জাপানী ব্রান্ড বরাবরই একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে। প্রায় প্রতিটি সেগমেন্টে তারা প্রতিযোগিতা করে থাকে। ঠিক তেমনি ১৫০ সিসি নেকেড স্পোর্টস সেগমেন্টে ইয়ামাহা’র FZs এবং সুজুকি’র Gixxer বরাবরই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

কিন্তু ইয়ামাহা তো কিছু দিন আগে FZs এর একেবারে নতুন ভার্সন ৩.০ বাজারে নিয়ে এসেছে, তার সাথে প্রতিযোগিতা করে কি Gixxer পারবে? হ্যা, অন্যদিকে সুজুকি তাদের বাইকগুলোর দাম বেশ কমিয়ে এনেছে যা বেশ লোভনীয় অফার।

ইঞ্জিনের শক্তি এবং পারফর্মেন্স, এক্সিলারেশন এবং টপস্পীড, ব্রেকিং, মাইলেজ, কম্ফোর্ট, রিসেল ভ্যালু, দাম অনুযায়ী মান ইত্যাদি সব কিছু মিলে কোনটি আসলে সেরা? আজ আমরা চেষ্টা করব ইয়ামাহা এবং সুজুকি’র বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই বাইক দু’টির প্রতিটি বিষয় নিয়ে তুলনামূলক বিচার, বিশ্লেষণ করার।

প্রথমে হাতে কলমে এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিবেচনা করা যাক এবং এরপরে বাইক দু’টির পারফর্মেন্স নিয়ে আলোচনা করব।

তুলনা Suzuki Gixxer DD
Yamaha FZs V3
ইঞ্জিন টাইপ সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, ২ ভাল্ব সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, ২ ভাল্ব
ইঞ্জিন ১৫৪.৯ সিসি ১৪৯ সিসি
কুলিং সিস্টেম এয়ার কুলড এয়ার কুলড
ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১৪.৬ বিএইচপি ১৩ বিএইচপি
ম্যাক্সিমাম টর্ক ১৪ নিউটন মিটার ১২.৮ নিউটন মিটার
বোর*স্ট্রোক ৫৬ * ৬২.৯ (মিঃমিঃ) ৫৭.৩ * ৫৭.৯ (মিঃমিঃ)
ফুয়েল সিস্টেম কার্বুরেটর ফুয়েল ইঞ্জেকশন
গিয়ার ৫টি ৫টি
ফ্রন্ট ডিস্ক সাইজ ২৬৬ মিঃমিঃ ২৮২ মিঃমিঃ
রেয়ার ডিস্ক সাইজ ২৪০ মিঃমিঃ ২২০ মিঃমিঃ
এবিএস (সিঙ্গেল চ্যানেল)
ফ্রন্ট সাসপেনশন টেলিস্কোপিক টেলিস্কোপিক
রেয়ার সাসপেনশন মনোশক মনোশক
টায়ার সাইজ

১০০/৮০-১৭ (ফ্রন্ট)

১৪০/৬০-১৭ (রেয়ার)

১০০/৮০-১৭ (ফ্রন্ট)

১৪০/৬০-১৭ (রেয়ার)

দৈর্ঘ্য*প্রস্থ*উচ্চতা ২০৫০*৭৮৫*১০৩০ (মিঃমিঃ) ১৯৯০*৭৭০*১০৫০ (মিঃমিঃ)
সিটের উচ্চতা ৭৮০ মিঃমিঃ ৭৯০ মিঃমিঃ
ওজন ১৩৬ কেজি ১৩৭ কেজি
ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি ১২ লিটার ১২.৮ লিটার
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬০ মিঃমিঃ ১৬৫ মিঃমিঃ
মাইলেজ ৪০ কিঃমিঃ/লিটার ৪২ কিঃমিঃ/লিটার
টপ স্পীড ১৩২ কিঃমিঃ/ঘন্টা ১১৭ কিঃমিঃ/ঘন্টা
বর্তমান মূল্য

২২৯,৯০৫/-

২১৭,৯৫০/- (ঈদ অফার)

২৯৫,০০০/-

২৯০,০০০/- (ঈদ অফার)

আশা করছি, উপরের তালিকাটি আপনাদের সহায়ক হয়েছে বাইক দু’টির বিভিন্ন দিক তুলনা করতে। এবার আমরা চেষ্টা করব, জিক্সার ডাবল ডিস্ক এবং এফজেড ভি৩ এর পারফর্মেন্স নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে।

ইঞ্জিনঃ Yamaha FZ & FZs V3 তে ব্যবহার করা হয়েছে ১৪৯ সিসি’র ইঞ্জিন যেখানে Suzuki Gixxer 155 এ ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৪.৯ সিসি’র ইঞ্জিন। তাই জিক্সারের ইঞ্জিন এফজেড ভার্সন ৩.০ এর থেকে কিছু বড়। শুধু তাই নয় জিক্সারের ইঞ্জিনটি তুলনামূলক বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। জিক্সারের ইঞ্জিন ১৪.৬ বিএইচপি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার এবং ১৪ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে, অন্যদিকে ইয়ামাহা এফজেড ভি৩ ১৩ বিএইচপি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার এবং ১২.৮ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।

ফুয়েল ইফিসিয়েন্সিঃ উভয় ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করার জন্য রাখা হয়েছে এয়ার কুলড সিস্টেম। কিন্তু ইয়ামাহা এফজেড ভি৩ তে ব্যবহার করা হয়েছে ফুয়েল ইঞ্জিনশন টেকনোলজি, যার ফলে এফজেড ভি২ এবং ভি৩ তে জিক্সারের তুলনায় কিছুটা বেশি মাইলেজ পাওয়া যায়। টেস্ট রাইড এবং বাইকগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে জানা তথ্য মতে সিটি এবং হাইওয়ে মিলে এফজেড এ মাইলেজ পাওয়া যায় ৪২ কিঃমিঃ/লিটার এবং জিক্সারে মাইলেজ পাওয়া যায় ৪০ কিঃমিঃ/লিটার।

এক্সিলারেশনঃ ইঞ্জিন ক্ষমতা কিছুটা বেশি হওয়ায় এবং ফুয়েল সিস্টেমে কার্বুরেটর ব্যবহার করায় জিক্সারের এক্সিলারেশন তুলনামূলক এফজেড এর থেকে কিছুটা বেশি। যদিও ইয়ামাহা তাদের এই নতুন ভার্সনটির ইঞ্জিন সেটিংস কিছুটা পরিবর্তন করেছে যার ফলে এখন সেটিতে এফজেড ভি২ এর থেকে কিছুটা বেটার এক্সিলারেশন পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু তা জিক্সারের তুলনায় কিছুটা কম।

টপস্পীডঃ সুজুকি জিক্সারের বোর, স্ট্রোক রেসিও ৫৬ মিঃমিঃ * ৬২.৯ মিঃমিঃ অন্যদিকে এফজেড ভি৩ এর বোর, স্ট্রোক রেসিও ৫৭.৩ মিঃমিঃ * ৫৭.৯ মিঃমিঃ। যা দেখলে বোঝা যায়, সুজুকি তাদের বাইকগুলোতে স্পীডের দিকে বেশি ফোকাস করে। প্রায় সমান আয়তনের ইঞ্জিন হলেও খেয়াল করে দেখবেন সুজুকির অন্যান্য বাইকগুলোর মত জিক্সারের ইঞ্জিনটিও কিছুটা লম্বা সাইজের। যা ফলে পিস্টনটি কিছুটা বেশি লম্বা জায়গা পায় শক্তি উৎপাদনের জন্য।

আর তাই এক্সিলারেশনের সাথে টপ স্পীডেও এগিয়ে থাকে জিক্সার। জিক্সারে টপ স্পীড প্রায় ১৩২ কিঃমিঃ/ঘণ্টা যেখানে এফজেড ভি৩ এর টপস্পীড ১১৭ কিঃমিঃ/ঘন্টা। আসলে একেক কোম্পানির ফোকাসের জায়গাটা একেক রকম। ঠিক তেমন ইয়ামাহা তাদের বাইকগুলোতে সবচেয়ে বেশি নজর দেয় কম্ফোর্ট এবং ব্রেকিংয়ে।

ব্রেকিংঃ জাপানীজ ব্রান্ডগুলো প্রত্যেকে তাদের বাইকের ব্রেকিংয়ের ব্যাপারে খুব সচেতন। কিন্তু যদি স্পেশালি কোন ব্রান্ডকে এগিয়ে রাখতে হয়, তবে ইয়ামাহাকে এগিয়ে রাখতে হবে। আর ইয়ামাহা এফজেড ভার্সন ৩ তে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস থাকায় এর ব্রেকিং আরো উন্নতি করেছে। উভয় বাইকের টায়ার সাইজ একই যা ১০০/৮০-১৭ (সামনে) এবং ১৪০/৬০-১৭ (পেছনে)। প্রসস্থ টায়ার বাইকের ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিংয়ে দারুণ ফিডব্যাক দেয়। জিক্সারের ব্রেকিংও ভাল এবং এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা, বিশেষ করে ডাবল ডিস্ক ভার্সনের। কিন্তু এই ধাপে এফজেডকেই এগিয়ে রাখতে হবে ফ্রন্ট ডিস্কে এন্টি লক ব্রেকিং ব্যবহার করার কারণে।

কম্ফোর্ট এবং রাইডের উচ্চতা অনুযায়ী উপযোগীঃ উভয় বাইকের হ্যান্ডেলবার কিছুটা আপ-রাইট হওয়ায় এটি রাইডারকে লং রাইডে ভাল ফিডব্যাক দেয়। লং রাইডের জন্য উভয় বাইক পারফেক্ট হলেও, ট্যুরিং বাইক হিসেবে এফজেড ভি৩ এগিয়ে থাকবে। যদিও দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সিটের উচ্চতা উভয় বাইকের প্রায় সমান। কিন্তু আকৃতি, গঠন এবং এফজেড ভি৩ এর ফুয়েল ট্যাঙ্কটি কিছুটা মাস্কুলার হওয়ায় এটিকে সামনা সামনি দেখতে জিক্সারের থেকে বড় মনে হয়। রাইডারের কম্ফোর্টের পাশাপাশি পিলিওনের কম্ফোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইয়ামাহা এফজেড ভি৩ এর সিট কিছুটা প্রসস্ত এবং লম্বা হওয়ায় এটি তুলনামূলক পিলিওনের জন্য আরামদায়ক।

বিল্ট কোয়ালিটিঃ ইয়ামাহা তাদের এফজেড ভি৩ এর বিল্ট ইন কোয়ালিটি আগের থেকে উন্নত করেছে। বিল্ট ইন কোয়ালিটির দিক থেকে দু’টি বাইককেই প্রায় সমান রেটিং দিতে হবে।

সাউন্ডঃ টপ স্পীড এবং এক্সিলারেশনের পাশাপাশি সুজুকি যে বিষয়টিতে বেশ নজর দেয় সেটি হচ্ছে সাউন্ড। একই সেগমেন্টের সুজুকি’র বাইকগুলোকে যদি ইয়ামাহা এবং হোন্ডার বাইকগুলোর একজোস্টের সাউন্ডের সাথে তুলনা করা যায়, তবে দেখা যায়। সুজুকি’র বাইকগুলোর সাউন্ড কিছুটা লাউড এবং স্পোর্টি। এফজেড ভি৩ এর সাউন্ড নিয়েও আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন কিন্তু এই ধাপে আমরা জিক্সারকেই এগিয়ে রাখব।

দাম পর্যালোচনাঃ যেহেতু এফজেড ভি৩ সদ্য বাজারে লঞ্চ হয়েছে আর এই মুহুর্তে চাহিদা কিছুটা বেশি। অন্য দিকে বাংলাদেশে ইয়ামাহা’র অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর এসিয়াই মোটরস লিমিটেড বাইকগুলি সিবিইউ আকারে নিয়ে আসে, যার ফলে ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা বেশি। যেখানে সুজুকি বেশি কিছু দিন হল বাংলাদেশেই বাইক এসেম্বল করে। দামের দিক থেকে বিবেচনা করলে জিক্সার বেশ সাশ্রয় এবং নাগালের মধ্যে। যেমন এই ঈদে সুজুকি জিক্সার সিঙ্গেল টোন, সিঙ্গেল ডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৯১,৯৫০ টাকায়।

ব্রান্ড এবং রিসেল ভ্যালুঃ উভয়ই জাপানী ব্রান্ড এবং নামকরা। তাই ব্রান্ড ভ্যালু নিয়ে নতুন ভাবে কিছু বলার নেই। রিসেল ভ্যালু’র দিক থেকেও উভয় বাইককে সমান গুরুত্ব দিতে হবে কারণ বাজারে এর চাহিদাও প্রায় সমান।

তাহলে ভাল কোনটি? কোনটি সেরা?

কোনটি সেরা এটি মূলত নির্ভর করবে রাইডারের অভিরুচির উপর। কেউ যদি বাইকের এক্সিলারেশন, টপ, লাউড-স্পোর্টি সাউন্ড পছন্দ করে তবে তার জন্য জিক্সার পছন্দের তালিকায় এগিয়ে থাকবে। অন্যদিকে যারা কম্ফোর্ট, ব্রেকিং, ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি ইত্যাদি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তবে তার কাছে এফজেড ভি৩ বেশি মূল্যায়ন পাবে।

যদি আমাদের অভিমত জানতে চান, তবে দামের কথা বিবেচনা না করে আমরা এফজেড ভি৩ কে এগিয়ে রাখব শুধুমাত্র সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস যুক্ত থাকার কারণে। সুজুকি যদি বাংলাদেশে জিক্সারের ফুয়েল ইঞ্জেকশন এবং এবিএস ভার্সন নিয়ে আসে তবে আবার এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। অন্যদিকে যদি বর্তমানে বাজারের জিক্সারের দামের সাথে এফজেড এর দাম  তুলনা করেন, তবে সেটির ব্যবধান অনেক। এবং দামের সাথে মানের কম্পেয়ার করলে জিক্সার পুনরায় এগিয়ে থাকবে।

বাইক কেনার আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন নিজের পছন্দকে। বাজেট, পছন্দ ইত্যাদি বিবেচনা করে সেটিই কিনুন যেটি আপনার কাছে সেরা। তবে আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে সহায়তা করবে।

দেশি-বাইকার ডট কমের সাথেই থাকুন।

~ লীভ ফ্রী, রাইড সেইফ /.

Related Posts

error: Content is protected !!