সবাইতো রিভিউ দেয় হাইওয়েতে বাইকটি কেমন পারফর্মেন্স দিল সেই ব্যাপারে। আমি একটু ভিন্ন দিব, কারন এখন পর্যন্ত আমি এই বাইক নিয়ে কোন হাইওয়ে রাইড করিনি, আমার ৩৫০০ কিলো সম্পূর্ণ ঢাকা সিটিতে রাইড করা। তাই আমার মত যে অল্প কিছু লোক আছে যারা আমার মত শুধু সিটিতেই রাইড করেন তাদের জন্য এই লেখা। বিশেষ ভাবে দ্রষ্টব্যঃ এখানে শুধু মাত্র আমার অভিজ্ঞতার আলোকেই বলব, মানে, আমি যে সমস্যা আর সুবিধা পেয়েছি সেগুলোই বলব, কিছু ব্যাপার থাকতে পারে অন্য কেউ ফেস করেনি শুধু আমিই করেছি, আবার কিছু ব্যাপার থাকতে পারে কমন। আমি যে সমস্যা ফেস করেছি আর কেউ না করেও থাকতে পারে সো এটা নিয়া দয়া করে পচাপচি খেলা খেলবেন না।
আমি প্রথম বাইক কিনি ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে, হিরো হোন্ডা সিবিযেড, ২২০০ কিলো চলা অবস্থায় বাইকটি আমি কিনি এবং সেটা দিয়েই মুলত আমি বাইক চালানো শিখি। ১৮০০০ কিলো রান করার পর গত মার্চ মাসে সেটি বিক্রি করে কেপিয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেই। কেপিয়ার বাইক টি বাজারে আসার পর থেকেই বাইকটির প্রতি অনলাইনে নজর রাখা শুরু করি কারন প্রথম দেখাতেই কেপিয়ার এর লুক এর প্রেম এ পড়ে যাই, যেই প্রেম এখনো অটুট আছে, লুক এর দিক থেকে এটা আমার কাছে প্রথম ৩ এই থাকবে। যেহেতু আমার সার্মথ ২ লাখ বা এর আশে পাশে, সো সিবিয়ার বা আরওয়ান ফাইভ এর কথা কখনো মাথায় আনিনি। তবে স্পোর্টস বাইকের ইচ্ছা ছিলর অনেক। যাই হোক গত ২ বছর ফেসবুক, ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে মুটামুটি আশ্বস্ত হই যে, কেপিয়ার খুব আহামরি ভালো না হলেও খারাপ হবে না। তাই মার্চ মাসের ৯ তারিখে বুকিং দিয়ে এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ হাতে পাই, সেদিনের আগ পর্যন্ত কেপিয়ার সামনে থেকে দেখেছি কিন্তু রাইড করে দেখা হয়নি।
যাই হোক, অনেক দিন অপেক্ষা করার পর কেপিয়ার সাদা মাল্টি কালার বাইকটা হাতে পাই। হাতে পাওয়ার পর অবশ্যই অসম্ভব খুশী ছিলাম, শোরুমের সামনে টেস্ট ড্রাইভ দিয়ে দেখলাম গিয়ার হার্ড ছাড়া আরা কোন সমস্যা নেই। ওহ, তবে আমার হাটু বাইকের কীট এ লাগছে আর সামান্য ব্যাথা লাগছিল। ৬ ফুট আমার হাইট তবে ৭ দিনের মধ্যে সমস্যাটা চলে গেছে, আই মিন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। নেকেড বাইক থেকে র্স্পোটস বাইকে শিফট হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু ১০ দিনের মধ্যেই সব ওকে মনে হয়েছে। এখন আলোচনা করি এই বাইকে আমার প্রাপ্ত সুবিধা আর অসুবিধা নিয়ে।
সুবিধাঃ
১। অসাধরন লুক। ১০০-তে ৯২।
২। হাই বিম এর আলো যথেস্ট ভাল, লো বীমটা আরেকটু ভাল হতে পারত মনে হয় কারন আমাদের দেশের রাস্তাঘাট এর যে অবস্থা।
৩। জোশ কন্ট্রোল, ব্যালন্সিং এ সমস্যা হয় এমন কথা মনে হয় কেউ বলতে পারবে না।
৪। যথেষ্ট ভাল ব্রেকিং। ডাবল ডিস্ক এর এই বাইকটি অন্যান্য যেকোন ভাল ইন্ডিয়ান বাইকের মতই ব্রেকিং দেয়। তবে ঝুম বৃষ্টি তে ব্রেক সে রকম ধরে না। তবে ব্রেক প্যাড চেঞ্জ করে দেখা যেতে পারে, আমি এখনো চেঞ্জ করিনি। তবে সাবাই বলে যে চেঞ্জ করে নেয়াই ভালো, ডিস্ক ভাল থাকে।
৫। ভাইব্রেশন ফ্রী মোটামুটি। যদিও, আপনি বলতে পারেন, আমি চালিয়েছি শুধু ঢাকায়, এখানে স্পিড এ উঠিয়েছি কত… হুম কথা সত্য।আমি বেশ ভদ্র ড্রাইভার, মিটারে ৮০ দেখলেই বুকটা জানি কেমন করে উঠে। তারপরও আমি এখানে ১০২ কিঃমি উঠিয়েছি। স্পিড যত বারে এর স্মুথনেস ততোই বারে।
৬। বিল্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো, মানে বডি কীট বেশ হেভি। আমার বাইক যদিও এখনো পরেনি, তবে যাদেরটা পরেছে কারওরি তেমন ক্ষতি হয়নি। ইন্ডিকেটর অন্য গাড়ীর সাথে ১০০% চেপে লেগে থাকার পরেও কিছুই হয়নি।
৭। মাইলেজ এখনো পর্যন্ত ৩৫ এর মত পাচ্ছি, অনেকেই এর চেয়ে অনেক বেশী পায়। আমার জ্যামের ঢাকাতে এই মাইলেজে মুটামুটি খুশী আমি।
অসুবিধাঃ
১। গিয়ার নিয়ে কম বেশী সমস্যায় পরে নি এমন কোন কেপিয়ার ইউজার আছে বলে মনে হয় না। প্রথমে গিয়ার শিফট আসলেই অনেক হার্ড। কয়েক জোড়া জুতো নষ্ট হতেই পারে এই জন্য। তবে আস্তে আস্তে কিছুটা নরম হয়ে আসে তবে আমার সিবিযেড এর মত এখনো হয়নি। আমি গিয়ার সম্পর্কিত আরেকটি সমস্যায় পরেছিলাম, সেটা হলো গিয়ার শিফট করতে গিয়ে আটকে যেত। ৫ গিয়ার থেকে ৪ গিয়ার এ যেতে যাই গিয়ার আটকে যেত, তখন ক্লাচ হাল্কা ছেড়ে দিয়ে শিফট করতে হত। সার্ভিস সেন্টারে অনেক বার বলেছি সমাধান হয়নি। পরে আমার মনে হল যে সমস্যাটা ক্লাচ এ। ক্লাচ ক্যবল চেঞ্জ করার পর আটকে যাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়েছে। তবে চেঞ্জ না করে কেবলটি খুলে আবার নতুন করে লাগালেও হত। যেহেতু কেপিয়ার সব সময় বুকিং এর ওপর থাকে সো ওরা হয়ত খুব তারাহুরা করে কাজ করে।
২। ইঞ্জিন গরম হওয়া টাও কেপিয়ার এর কমন সমস্যা। তবে যত দিন যায় ততই সেটার মাত্রা কমে আসে। তবে ফ্রি রোড এ আপনি যতই চালান খুব গরম হবে না বাট জ্যামে ১০ মিনিট ১/২ গিয়ার এ চালালেই ফ্যান চালু হয়ে যাবে, মানে ইঞ্জিন গরম হয়ে যাবে। ফ্যানের বাতাস কীট এর ভিতর দিয়ে পায়ের থাইতে এসে লাগে। আর বেশী গরম হলে ট্যাঙ্কের সাইড গরম হয়ে যায়।
৩। টার্নিং রেডিয়াস অনেক কম, একটা প্রাইভেট কারের যত জায়গা লাগে ইউটার্ন নিতে এই বাইকেরও প্রায় একি জায়গা লাগে। ঘিঞ্জি ঢাকায় এটা একটা সমস্যা।
৪। হর্ন এর শব্দ একেবারে কম। তাও আবার সিঙ্গেল হর্ন। চেঞ্জ করে পালসারেরটা লাগিয়েছি তাও মনঃপুত হয়নি।
৫। এই সমস্যাটা হয়ত খুব বেশী মানুষ ফেস করেনি বা আদৌ কেউ করেছে কিনা জানিনা। কিছুদিন আগে আমার আরপিএম মিটারের লাইট কখনো কখনও জ্বলত না। সার্ভিসে নিয়ে গেলাম, ওরা ঠিক করে দিল। বলল তার ছিরে গেছে, আসলে ছিড়েনি।ওরা ক্যাবল ছিড়ে জোড়া লাগায় দিল (পরে বুঝতে পেরেছি) । এরপর হঠাত দেখি হর্ন কখনও বাজে কখনও বাজেনা, হেডলাইট জলে আবার নিভে। এবার এলাকার মিস্ত্রির কাছে নিয়ে গেলাম, ওরা বাম চাপার ক্যবল গুলো বের করে দেখল যে ক্যাবলের টেম্পার চলে গেছে প্রায়। মানে ক্যাবল গুলো বলে (লম্বা হয়ে) গেছে। তখন সে সার্ভিস সেন্টারের মতই ক্যাবল ছিরে আবার জোড়া দিয়ে দিল। এখন ওকে, বাট তার গুলো এত নিম্ন মানের কেন দেয়া হল বুঝলাম না। ইঞ্জিনের সাইড কাভারে ইঙ্গিন ওয়েল চেক করার গ্লাস আছে, কিছুদিন আগে খেয়াল করলাম ওখান থেকে ওয়েল লিক করছে, পরের দিন সার্ভিস সেন্টার থেকে ঠিক করে আনতে হয়েছে।
৬। নিম্নমানের চেন স্পোকেট, ২০০০ কিলো হবার আগেই ঢিলা হয়ে গেছে, যতই টাইট দেই, কিছুদিন পরেই শব্দ করে।
৭। লুকিং গ্লাসের মানটা আরেকটু ভাল হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে হয়। গ্লাসের সাইজ টাও পছন্দ হয়নি।
৮। ইঞ্জিন সাউন্ডটা আরেকটু ভারিক্কি হলে ভালো লাগত।
৯। রিয়ার সাস্পেন্সন বেশ খারাপ, ফ্রন্ট সাস্পেনশন মোটামোটি ভালই।
ওপরের সব অসুবিধাই যে সমস্যা তা না, কিছু আছে বৈশিষ্ট্য যা মেনে নিতেই হবে। এই সব কিছু ছোট খাট সমস্যা অনেক সময় বড় ভোগান্তির সৃষ্টি করে। সুতরাং এই ছোট খাট সমস্যা গুলো রাসেল ইন্ডাস্ট্রিস দেখলে সবাই উপকৃত হত। প্রয়োজনে বাইকের দাম আরো ৫০০০ বাড়ানো যেতেই পারে।
লিখেছেনঃ স.ম্রা.ট
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.