বাইকে চেপে মুস্তাং ভ্যালী, নেপাল (অভিজ্ঞতা শুনুন আসিফ খান সূর্য’র মুখেই)

নেপাল মুস্তাং ভ্যালী রাইড ২০২০

অন অফ দ্যা মোস্ট এডভেঞ্চারিয়াস এন্ড ডেঞ্জারাস রোড ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।

বাইক নিয়ে বিদেশ ভ্রমনের ইচ্ছা আমাদের দেশের সব বাইকারদেরই আছে কমবেশি। অনেকে ইতিমধ্যেই বিশাল মাপের ভ্রমন করেছে দেশের বাইরে।

কিন্তু সবকিছুর পরেও দেশের বাইরে বাইক চালানোর ব্যাপার টা এখোনো কেউ ক্লিয়ার করে পোস্ট দেয় নি। যেমন কেউ যদি ভুটান যায় সে যদি ভুটানের বিস্তারিত একটা পোস্ট দেয়, কেউ যদি ইন্ডিয়া যায় সেটার বিস্তারিত একটা পোস্ট দেয় তাহলেই কিন্তু জিনিস টা একদমই ইজি হয়ে যায় আর অনেকেই সেই পোস্ট ফলো করে যেতে পারবে আর পূরন করতে পারবে তার সপ্ন।।

গত ১৬/০২/২০২০ তারিখে আমি নেপাল গিয়েছিলাম আর এসেছি ২৬/০২/২০২০। আজ আমি আবার ভ্রমনের সব টুকু শেয়ার করার ট্রাই করছি যতটুকু আমি পারবো।

প্রথমত আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ঐখানে যেতে গেলে আপনার হিল রাইড আর অফরোড রাইডিং এর একটা ভালো অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নাহলে হুট করে গিয়ে আপনি ঐ রোডে সারভাইভ করতে পারবেন না। আর সাজেস্ট করবো সামারে যাওয়ার কারন আমি ফেব্রুয়ারি তে গিয়ে মাইনাস ১২ ডিগ্রী তাপমাত্রা আর স্নো ফল পেয়েছি যার ফলে আমার জন্য রাস্তা টা আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। টিভিতে বা স্ক্রীনে স্নো ফল দেখতে যত টা আনন্দদায়ক বাস্তবে স্নো ফল এরচেয়ে অনেক বেশি ভয়ানক তাই আমি বলবো এই তাপমাত্রা আর এই সময় ইগনোর করুন। কারন স্নো ফলে ঝিরিপথে পানি অনেক বেশি থাকে আর বাইক পানির ধাক্কায় বাইক পড়ে গেলে বড় বিপদ হতে পারে। তাছাড়া এতো কম তাপমাত্রায় হাতে বা পায়ে পানি লাগলে হাত বা পা কাজ করবে না আর। তাই এই ব্যাপারে খুব কেয়ারফুল থাকবেন।

Bangladeshi Rider at Nepal

এবার আসুন কি লাগবে আপনার ঐখানে যেতে। প্রথমত পাসপোর্ট তো অবশ্যই আর সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় নেপালের ভিসা ফ্রি বাংলাদেশীদের জন্য। ঐখানের এয়ারপোর্ট এ নেমে ওদের ম্যাশিনে সব ইনফো ইনপুট করলে একটা স্লিপ পাবেন। সে স্লিপ নিয়ে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই ফ্রি ভিসা পেয়ে যাবেন।
সাথে শীতের প্রোটেকশনের জন্য ভালো রাইডিং জ্যাকেট, ওয়াটারপ্রুফ জুতা ও গ্লাভস অবশ্যই নিবেন। আর ঐখানের খাবার কিছুই খেতে পারবেন না। তাই পারলে শুঁকনো খাবার কিছু নিয়ে যাইয়েন লাইক বিস্কুট, রুটি এইসব। আর অবশ্যই ডলার নিয়ে যাবেন। বাংলা টাকা নিলে এক্সচেঞ্জ করলে রেট অনেক কম পাবেন।

আপনার ট্যুরের ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে এখন থেকে।

১ম দিন : এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিবেন। এয়ারপোর্টে মানি এক্সচেঞ্জ করবেন না বা কোনো হোটেলের এজেন্টের যাওয়ার দরকার নেই। ট্যাক্সি ভাড়া ৪০০-৫০০ নেপালি রুপি। (১ নেপালি রুপি = বাংলা ১.৩৩ টাকা)। টেক্সি যাবে থামেল শহরে। ঐখান থেকে ৩০ মিনিটের রাস্তা। থামেল ট্যুরিস্ট এড়িয়া এখানে কেউ কারো না। নিজের মতো ঘুরে হোটেল খুজে নিতে পারেন বা চাইলে Rajan Sedai ভাইয়া কে নক দিতে পারেন। আমি উনার নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি। উনি OYO HOTEL BELI NEPAL এর মালিক। থামেলের মতো এড়িয়ায় উনার মতো ভালো আর জলি মাইন্ডেড লোক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। উনার কাছে আপনারা আপনাদের লাগেজ সব অন্যান্য জিনিস রেখেও ট্যুরে বের হতে পারবেন আবার এসে ব্যাক নিতে পারবেন। উনার নাম্বার আমি দিয়ে দিচ্ছি।
রাতে উনার হোটেলের সামনেই একটা মুসলিম রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে ৮ টায় ডিনার করে নিন পরোটা আর মুরগী। নেপালি কোনো খাবার ট্রাই না করাই ভালো কারন খেতে পারবেন না ওদের মসল্লার জন্য। তারপরেও যদি খেতে পারেন ডিফরেন্ট। মুসলিম হোটেল টার ছবিও আমি দিয়ে দিচ্ছি।

২য় দিন : সকালে ঘুম থেকে উঠুন। ঐখানে অনেক মটোরবাইক রেন্ট পাবেন। তবে সবচেয়ে ক্লাসি বাইক পাবেন BS Motorbike এ। গুগল ম্যাপ করে তার কাছে যান গিয়ে বলুন আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এই পোস্ট দেখে। মটোরবাইক ভাড়া নিচ্ছেন তার মানে কোনোটারই কন্ডিশন আহমরি ভালো না। বেছে দামের মধ্যে যা হয় ১ সপ্তাহের জন্য ভাড়া নিন। Fzs V2, Hornet 150 1200-1500 রুপি, Fzs 250 2200-2500 রুপি তাছাড়া KTM, Royal Enfeild সব আছে আলাদা আলাদা দামে। ৮ টার মধ্যে বাইক নিজের মতো করে চালিয়ে সিলেক্ট করে নিন। ঠিক ৯ টায় সরকারি ট্যুরিজম অফিসে চলে যান। সেখানে আপনার ছবি ও পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ২ টা পারমিশন মিতে হবে মুস্তাং ভ্যালী (মুক্তিনাথ) যাওয়ার জন্য। একটার জন্য ১০০০ নেপালি রুপি আরেকটার জন্য ৬০০ নেপালি রুপি = ১৬০০ নেপালি রুপি লাগবে। টোটাল ১০ মিনিট লাগবে পারমিশন নিতে। এরপরে রওনা দিন পোখারার উদ্দেশ্যে। পোখারা পিচঢালা ভালো নরমাল হিল রোড। টোটাল ২১০ কিলো রাস্তা। নিজের মতো ছবি তোলা সহ ঘুরে, লাঞ্চ করে যেতে ৬ ঘন্টা সময় লাগবে আপনার মোটামোটি কাঠমুন্ডু থেকে পোখারা যেতে। পোখারা গিয়ে লেইক সাইড চলে যান। সেখানে অনেক হোটেক পাবেন। খুব ভালো গুলো ১৫০০-২০০০ রুপি। আর মিডিয়াম ১০০০ রুপি। আপনারা চাইলে হোটেল ওয়ো প্রিসিডেন্ড বা Hotel White In এ থাকতে পারেন। ১ হাজার রুপিতে ডবল বেডের ভালো রুম পাবেন সাথে গিজার-ও পাবেন। আর এখানে হোটেল প্রিসিডেন্টের পাশে একটা রেস্টুরেন্ট আছে যেটার ছবি আমি দিয়ে দিবো। এটাতে আপনারা ডিনার, ব্রেক ফাস্ট করতে পারবেন কারন এখানে বাংগালী টেস্ট পাবেন । অন্য জায়গায় খেতে পারবেন বলে মনে হয়না আর পারলেও অনেক এক্সপেন্সিভ হয়ে যাবে। আর ওয়ো হোটেল প্রেসিডেন্টের ব্যবহার অসাধারণ বাংলাদেশিদের প্রতি।

৩য় দিন : আজ আপনার কিছুটা অফরোড রাইড করতে হবে। সকাল সকাল বের হয়ে যাত্রা করুন বেনির উদ্দেশ্যে। কাচা, পাকা দুই ধরনের রাস্তাই পাবেন বেনি যেতে। কিছুটা অফরোড এখানে করে হাত কে পাকিয়ে নিন কারন সামনে আপনার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। বেনি পৌছিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেড়ে নিন। কিছুক্ষন রেস্ট নিন।
আপনার ট্যুরের জার্নি শুরু হতে যাবে আজ এইখান থেকে। বেনির পর আর কোনো রাস্তা নেই, সব দুর্গম অফরোড। আপনাকে আজকে তাতোপানি যেতে হবে যার ডিস্টেন্স মাত্র ১৫ কিমির মতো সেখান থেকে কিন্তু সময় লাগবে ১ ঘন্টার বেশি। কেউর ২ ঘন্টাও লাগতে পারে ছবি তুলতে গেলে। এখান থেকেই শুরু পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক আর এডভেঞ্চারিয়াস রোডের মধ্যে একটি মুস্তাং ভ্যালী যাওয়ার রাস্তা। তাতোপানি গিয়ে প্রথম যে হোটেল টা পড়বে হাতের বামে সেটাতে পার্কিং ফেসালিটি ভালো পাবেন তবে রুপ ছোট, ২ টা বেড আছে এখানে। ৯০০-১০০০ রুপি ভাড়া। রাতে যদি পারেন খেতে তাহলে তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে খেতে পারেন। তবে আমার সাজেশন থাকবে আগে খাবারের ঝোল টেস্ট করে দেখবেন। যদি ভালো লাগে আর খেতে পারেন তবেই খাবেন। রুটি খাওয়াই বেটার। শীত থাকলে এখানেই রাতে মাইনাস ৩/৪ তাপমাত্রা পাবেন।

৪র্থ দিন : সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন কারন আজ পাথরের দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা, নদী, ঝিরিপথ সব কিছুর উপর দিয়েই চালাতে হবে। খুব সাবধানে রাইড করুন। আজকে আপনার গন্তব্য হচ্ছে জমসম। এখানে কোনটা রোড আর কোনোটা রোড না সেটা বুঝার কোনো উপায় নেই। সিমে নেটওয়ার্ক থাকবে না তাই নেটেও কিছু তেমন করতে পারবেন না। আর দুর্গম রাস্তায় যদি কেউকে পান তাকেই জিজ্ঞেস করে যেতে হবে। সবচেয়ে বেটার ঐ পথে চলা গাড়িকে জিজ্ঞেস করেন জমসম কোনদিকে। ক্লান্ত হলে ব্রেক নিন তারপর আবার শুরু করুন কারন এই রাস্তায় এমনো হতে পারে যদি স্নো ফল হয় এক ঘন্টায় আপনি ৪ কিলো যেতে পারবেন না। সো আপনাকে খুব বুঝে এই রাস্তায় আগাতে হবে আর শরীরে প্রচুর শক্তি রাখতে হবে। জমসম গিয়ে হোটেল নিন দুইদিনের জন্য, কারন আজকের দিন আপনি থাকবেন আর কালকের দিন রাইড + রেস্ট করবেন।

৫ম দিন : জমসম থেকে শুরু করুন। আজকে আপনার গন্তব্য মুক্তিনাথ। ১ ঘন্টা প্রায় চালানোর পর দেখবেন পাকা রাস্তা। এতোদিন এই রকম ভয়ানক পাথরের হিলে অফরোড করে, নদীতে চালিয়ে যাওয়ার পর যখন পিচের রাস্তা দেখবেন ইমোশনাল হয়ে যাবেন আনন্দে। পিচঢালা রাস্তায় ছবি তুলে + চালিয়ে ৩০/৪০ মিনিটে পৌছে যাবেন মুক্তিনাথ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ হাজার ফিট উপরে আর ইতিমধ্যেই আপনি জয় করে ফেলেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক রাস্তার মধ্যে একটি মুস্তাং ভ্যালী, মুক্তিনাথ। শীতকালে এখানে মাইনাস ১৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা পাবেন। ফেব্রুয়ারির লাস্টের দিকে গেলে মাইনাস ১০/১২ পেতে পারেন। চলে আসুন আবার ব্যাক জমসম। আপনার হোটেলে উঠে শরীর কে রেস্ট দেন আর একদিন এনজয় করুন। জমসমে Neeru হোটেলে থাকতে পারবেন। খুব ভালো রুম (২ বেড) ১৫০০ রুপি। উনাদের সার্ভিস ভালো।
.
৬ নাম্বার দিন থেকে আপনার ব্যাক করার পালা। আপনি এতোদিনে এই রোডে ইউজড টু হয়ে গেছেন তাই এখন এই অফরোড, নদীপথ, ঝাকি আপনার গায়ে কম লাগবে। আর আপনি রাস্তাও চিনে গেছেন আর ছবি তোলার-ও কিছু তেমন নেই এখন আর। আপনারা এইবার আগের চেয়ে ইজিলি ব্যাক করতে পারবেন। আমি যেটা করেছিলাম সেটা হচ্ছে একবারে মুক্তিনাথ থেকে পোখারা চলে এসেছিলাম। তবে আমি অনুরোধ করবো খুব তারাহুরা না থাকলে এমন টা করার জন্য। কারন এতে ঐ রোডে আমার রাতে চালাতে হয়েছিলো যা খুবই ভয়ানক ছিলো আমার জন্য। এতো রিস্ক না নেওয়া বেটার। আপনারা জমসম থেকে বেনি চলে আসেন একদিনে। বেনিতে থেকে পোখারা চলে আসেন। তারপর সেখান থেকে কাঠমুন্ডু। এপ্রোক্স ৮০০/৯০০ কিলো রাইড হবে ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু এই রোডকে কিলো দিয়ে হিসাব করে ভুল করবেন না আশা করি।


.
এবার আসেন ফিনিশিং এ কিছু বলা যাক।
* টোটাল প্লেইন ফেয়ার সহ আমার ১৫০০০ + ৪০০ ডলার লেগেছে। কারন ঐখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। টোটাল ৪৫-৫০ হাজার টাকা। আমার বাইকে গিয়েছে ৯ হাজার রুপি, ১০ দিনে হোটেলে গেছে ৭ হাজার রুপির মতো, তেল ৩ হাজার রুপির মতো (কিছু কম-বেশি) আর প্লেইন। বাকি সব টাকা খাবারে কারন খাবারের দাম অনেক। লাইক কিছু জায়গায় ডিম ভাজি ২০০ রুপি, ২ পিস পাউরুটি ১০০ রুপি এমন। চা/কফি অলমোস্ট সব জায়গায় ৩০-৭০ রুপি।

  • টোটাল যা সময় লাগবে এরচেয়ে মিনিমাম ২ দিন এক্সট্রা সময় নিবেন কারন যে কোনো কিছু হতে পারে এই রাস্তায়। লাইক রাস্তা বন্ধ, তাপমাত্রা বেশি কমে গেছে, পাহাড় ধশ টাইপের যে কিছু। তাই ২ দিন হাতে রেখে রিটার্ন টিকেট কাটবেন। সেই ২ দিন সিটিতে চালিয়ে ৭১৩৬ ফিট হাইটের নাগারকট হিল টাও রাইড করতে পারেন।

  • পর্যাপ্ত রেটি সহ শুকনা খাবার দেশ থেকে নিয়ে যাবেন যাতে খাবার ভালো না লাগলেও আপনি ঐগুলা খেয়ে সারভাইভ করতে পারেন।

  • নেপালের ট্রাফিক রুলস খুব করাকরি, লেন চেঞ্জ করলেও বড় এমাউন্ট জরিমানা গুনটে হয় অনেকের। তাই সেখানে এমন ভাবে চালাবেন না যাতে আপনার কারনে দেশ ছোট হয়।

  • সব জায়গায় এমন ভাবে চলাফেরা করবেন যাতে দেশের সম্মান অনেক উপরে থাকে। আর নেপালিরা বাংলাদেশিদের অনেক পছন্দ করে। সেই পছন্দের জায়গা টা ধরে রাখবেন।

  • হিন্দি সবাই জানে তাই যারা হিন্দি জানেন তাদের জন্য কমিউনিকেশন করা ইজি হবে। তাছাড়া ইংলিশ-ও বেশিরভাগ লোক জানে।

  • মদ প্রচুর এভেইলেবল কিন্তু খেয়ে ভুলেও ড্রাইভ করতে যাবেন না। রাস্তায় পুলিশ ডোপ টেস্ট করে। ধরা পরলে সমস্যায় পরবেন অনেক।

  • বাইক রেন্ট নিলে জামানত বাবদ আপনার পাসপোর্ট তারা রেখে দিবে যা বাইক ফেরত দেওয়ার পর পাবেন। বাইকে কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

  • বাংলাদেশে যারা মোটামোটি ৩/৪ বছর মিনিমাম রাইড করেছেন বিভিন্ন জেলায়, হিল রাইড করেছেন, এবং বিশেষ করে অফরোডিং করেছেন শুধুমাত্র তারাই যাবেন প্লিজ। কেউ এচিভমেন্ট আনলক করতে অভিজ্ঞতা ছাড়া ঐ রাস্তায় গেলে বিপদে পড়ে যেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সিনিয়র কেউকে সাথে নিয়েন।

  • বেশি মানুষ যাবেন না এতে চালালে সমস্যা হবে। আবার বেজোড় সংখ্যায় যাবেন না তাহলে থাকতে সমস্যা হবে। লাইক ২ জন বা ৪ জন যাবেন।

  • কোথাও গিয়ে বাইকিং গ্রুপের পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। শুধু বলবেন আমি একজন বাংলাদেশের বাইকার আর এটাই আপনার সবচেয়ে বড় পরিচিয় যাতে তারা আমাদের সবাইকে এক করে দেখতে পারে, আমরা যাতে উমুক রাইডার, তুমুক রাইডার নাম বলে নিজেদেরকেই আলাদা করে না ফেলি প্লিজ।

  • নেপাল খুব সেফ ও পরিস্কার কান্ট্রি ট্রাভেলের জন্য আর খুব পারফেক্ট।

  • কানে কম শুনলে নরমালি নিন ভয় পাবেন না। নিশ্বাস নিতে সমস্যা হলে নাক দিয়ে ইনহেলাল ব্যবহার করতে পারেন।

  • দেশ থেকে হেলমেট নিয়ে যাবেন।

  • দেশ থেকে ডলার নিয়ে যাবেন। ডাইরেক্ট টাকা নিয়ে যাইয়েন না কারন ওদের দেশে টাকার কোনো দাম নেই বললেই চলে।

  • সন্ধ্যা ৭ টার পরেই সব বন্ধ হয়ে যায় বলা চলে তাই ডিনার সহ রাতের বাইরের কিছু কেনার কাজ এই টাইমের মধ্যেই করে নিন।

  • থামেল থেকে ফুয়েল নিন, পোখারা গিয়ে আবার ফুল করুন। তাতোপানির পর কিছু দোকানে খোলা ফুয়েল পাবেন তবে দাম ২০-৪০ রুপি বেশি।

  • খাওয়ার পানি সহ ইমারজিন্সি সব মেডিসিন সাথে রাখুন।

  • বাই রোডে গেলে ৭০০০/৮০০০ টাকা কম খরচ হবে তবে একদিনে ৪৬ ঘন্টা বাস জার্নি করতে হবে + ইন্ডিয়ার ট্রাঞ্জিট ভিসা নিতে হবে। তাই অল্প টাকার জন্য বাই রোডে না যাওয়ার সাজেশনই আমার থাকবে। তারপরেও কেউ যেতে চাইলে জানাবেন আমি সেটার রুট প্ল্যান-ও দিয়ে দিবো।

  • টোটাল ১০০০-১১০০ কিলো চালানো হবে। তবে এই ১০০০-১১০০ কিলো রাইড আপনাকে বাকি জীবন চলার জন্য পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা দিয়ে দিবে। আর আমার মতে দেশে একই জায়গায় বার বার যাওয়ার চেয়ে দেশের বাইরে একবার বছরে যাওয়া অন্তত ভালো। কারন এইসব পাথরের রোড, পাথরের নদীতে চালানোর অভিজ্ঞতা ও ফিল আমাদের দেশের রোড থেকে আমরা নিতে পারছি না।

পরিশেষে বলতে চাই একটা রোড, একটা জার্নি সেটার ব্যাপারে বলে বা লিখে আসলে কখনই ১০০% বোঝানো সম্ভব না যেটা গেলে বোঝা যায়। তারপরেও শেয়ার করা যাতে অন্যান্য বাইকার ভাইরাও ট্রাভেলের স্বাদ টা নিতে পারে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কোনোদিন এচিভমেন্টের জন্য রাইড করি না বরং রাইড করি নিজের মন কে প্রকৃতির কাছে নিয়ে একটু তৃপ্তি দিতে।
আমি চাইলে বাংলাদেশ দিয়ে বাইক নিয়ে যেতে পারতাম যা কোনো ব্যাপারই না। লজিক্যাল ভাবে যে দুর্গম রাস্তা রাইড করতে পারে তার কাছে নরমাল রাস্তা দিয়ে চালিয়ে যাওয়া কোনো ইস্যুই না। কিন্তু আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী বাইক বিদেশ নিতে হলে বাইকের সমপরিমাণ টাকা কার্নেটে জমা রাখতে হয়। আমি আল্লাহর রহমতে এমন টাকা দিতেও এবল কিন্তু আমি জাস্ট এই নিয়ম টাকে হেট করি। কারন ইন্ডিয়ান বাইকার রা নেপাল বা ভুটানের গেটে যাচ্ছে, নাম মাত্র ২০০/৩০০ রুপি দিয়ে বাইকের পাশ কেটে ঢুকে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশ থেকে নিতে হলে লক্ষ টাকা কেনো জমা রাখতে হবে যা আমার পছন্দ হয়নি। তাই আমি ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে বাইকে যাই নি। নাহলে সেটাই যেতাম।

আশা করি এই পোস্ট অনেকটাই হেল্পফুল হবে। তারপরেও যদি কোনো ইনফো দরকার হয় আমাকে সরাসরি নক করবেন আমি হেল্প করার ট্রাই করবো।

এরপর আল্লাহ চাইলে হয়তো অন্য কোনো দেশের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো দ্রুতই।
আর অন্য কেউর সাথে আমার অভিজ্ঞতা নাও মিলতে পারে, কারন আমি আলাদা মানুষ। তাই ভিন্নমতাবলম্বীদের আমি সম্মান করি।

এভাবেই একদিন ইন-শা-আল্লাহ পুরো পৃথিবী জানবে বাংলাদেশেও অনেক কোয়ালিফাইড ও প্যাশিনিয়েট মটো ট্রাভেলার আছে

আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন

লিখেছেনঃ Asif Khan Surjo