এডভেঞ্চার এবং রোমান্সের এক অনন্য সমন্বয় হচ্ছে মোটরসাইকেল। দুই চাকার এই যানটির প্রতি প্রায় সকল বয়সী মানুষের একটা আলাদা ভাললাগা কাজ করে। শুধুমাত্র শখ মেটানোই নয়, বর্তমানে মোটরসাইকেল হয়ে উঠেছে দৈনন্দিন পরিবহন এবং অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার। তবে বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চালানোর কারনে অনেকেই দূর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তবে এই প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় ঈদের সময়। প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমান মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা হয়ে থাকে তার বেশির ভাগই হয়ে থাকে এই ঈদের সময়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতি বছর সড়ক দূর্ঘটনায় যে পরিমান মানুষ আহত/নিহত হন তার ৩৫ শতাংশই হয়ে থাকে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কারনে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট ১৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এবং গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৩ জন নিহত হয়েছিলেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, গত বছরের তুলোনায় এই বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ আর প্রাণহানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ এবং এই সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বুয়েটের এআরআইয়ের হিসাবে, ২০১৬ সালে ২৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন মারা যান। ২০২০ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮টিতে, মারা যান ১ হাজার ৯৭ জন।
বাংলাদেশে ঈদ হল সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই ছুটির সময় ছোট-বড় অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে থাকেন। তবে এই সময় কিশোর বয়সী রাইডারদের বেশি লক্ষ্য করা যায় যাদের বেশির ভাগেরই বৈধ কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের বয়সই হয়নি। চলুন জেনে নেয়া যাক ঈদের সময় মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কারন এবং প্রতিকার সম্পর্কে।
কারনঃ
- এই সময় দূর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক রাইডার। অনেকেই এই সময় বাবা, চাচা, মামা কিংবা বড় ভাইয়ের বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হন যাদের অধিকাংশরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই কিংবা সঠিকভাবে চালান শেখেনি।
- দ্বিতীয় এবং অন্যতম কারনটি হচ্ছে অভার স্পিডিং। ঈদের সময় সাধারনত অন্যান্য পরিবহনের চলাচল কিছুটা সীমিত থাকে এবং অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকে। তাই অনেকেই রাস্তা খালি পেয়ে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালান। যার ফলে হঠাত সামনে কিছু চলে আসলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হন এবং দূর্ঘটনায় পড়েন।
- রাস্তায় চলাচলকারী ভ্যান, অটো-রিকশা, নসিমন ইত্যাদি যানবাহনগুলোর কারনে অনেক সময় দূর্ঘটনা হয়ে থাকে। এই ধরনের যানবাহনগুলোর ব্রেকিং ক্ষমতা অনেক দূর্বল হয়ে থাকে। তাই হঠাত সামনে মোটরসাইকেল চলে আসলে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
- অনেক সময় ট্রাফিক সিগিনাল এবং নিয়ম না মানার কারনেও দূর্ঘটনা হয়ে থাকে। যারা নতুন রাইডার তারা ডানে কিংবা বায়ে টার্নিংয়ের সময় ইন্ডিকেটর লাইট ব্যবহার করে না। ফলে পেছনের যানবাহনের জন্য ঐ বাইকারের গতিবিধি বুঝে উঠা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পরে। এছাড়া যে যায়গাগুলোতে টার্নিং পয়েন্ট কিংবা মোড় রয়েছে সেই যায়গায় গতি নিয়ন্ত্রন না করাও দূর্ঘটনার অন্যতম কারন।
- অনেকেই ঈদের সময় এক জনের বেশি পিলিওন নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে থাকেন। ফলে বাইকের নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কমে আসে এবং দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
সাধারনত কিছু রাইডিং কৌশল এবং ট্রাফিক সিগনাল মেনে চললে সহজেই যে কোন ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। নিম্নে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম আলোচনা করা হল।
- যারা এখনও অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা ভালভাবে বাইক চালান শেখেনি তাদের হাতে কখনই বাইক দিবেন না।
- রাস্তা যতই ফাঁকা থাকুক না কেন সর্বদাই নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন যেন জরুরী সময়ে খুব সহজেই ব্রেক করতে পারেন।
- রাস্তায় চলাচলকারী ভ্যান, অটো-রিকশা, নসিমন ইত্যাদির গতিবিধি লক্ষ্য করে বাইক চালান।
- ট্রাফিক সিগনাল এবং নিয়ম মেনে চলুন। ডান কিংবা বাম যেদিকে টার্ন নিতে চান সেদিকের ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে দিন।
- দুই জনের বেশি মোটরসাইকেলে রাইড করবেন না।
- রাইডের সময় অবশ্যই ভাল মানের সার্টিফাইড হেলমেট এবং সম্ভব হলে রাইডিং গিয়ার পরে রাইড করুন।
- ফাঁকা রাস্তায় কখনই অন্য বাইকের সাথে প্রতিযোগিতা করবেন না।
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.