“Resale Value” বলতে একটি পণ্য কেনার পর তা ২য়, ৩য় কিংবা যে কোন পক্ষের কাছে বিক্রির সময় তুলনামূলক কি পরিমাণ দামে বিক্রি করা যায় সেটিকে বোঝানো হয়। প্রতিটি ব্রান্ডের ভ্যালু অনেকাংশে নির্ভর করে এই রিসেল ভ্যালু’র উপরে। আর তাই প্রতিটি পন্য কেনার সময় একজন ক্রেতা চায় যাতে সেটি ব্যবহার করার পর বিক্রি করলে যাতে তুলনামূলক বেশি দাম পাওয়া যায়। আর তাই যে ব্রান্ডের রিসেল ভ্যালু যত বেশি, বাজারে সেই কোম্পানির পন্যের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশের বাজারে সেরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ব্রান্ডের নাম যদি বলতে হয় তবে ৭টি ব্রান্ডকে অবশ্যই জায়গা দিতে হবে। যার মধ্যে জাপানীজ ব্রান্ড ৩টি হচ্ছে ইয়ামাহা, হোন্ডা এবং সুজুকি। যারা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে এবং গুণগত মানের দিকে থেকেও স্বনামধন্য। অন্যদিকে বাংলাদেশে মার্কেট চাহিদার বড় অংশ ধরে রাখা ইন্ডিয়ান টু-হুইলার প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাজাজ, টিভিএস এবং হিরো’কে অবশ্যই সেরা ৭টি কোম্পানীর তালিকার রাখতে হবে। এই ৭টি ব্রান্ডের মধ্যে অবশ্যই জায়গা করে নেবে বাংলাদেশি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রানার। কারণ আমাদের দেশে রানার মোটরসাইকেলের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৭% যা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মার্কেট শেয়ার নয় বরং রিসেল ভ্যালু যা ব্রান্ড ভ্যালু’র সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বের অনেক নামকরা কোম্পানি আছে যাদের বিশ্বব্যাপী মার্কেট শেয়ার অনেক কম কিন্তু তাদের ব্রান্ড ভ্যালুকে তারা নিয়ে গেছে সুউচ্চ লেভেলে। উদাহরণস্বরূপ আমরা ডুকাটি, রয়েল এনফিন্ড, হার্লে ডেভিডসন, বি.এম.ডাব্লিউ’র নাম বলতে পারি। সুতরাং মার্কেট শেয়ার বেশি মানেই সুনাম বা খ্যাতি বেশি তা নয়।
গত ৩১ শে মার্চ দেশি-বাইকার ডট কম’এর অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে আমরা একটি পোল তৈরী করি, যেখানে ভোটিংয়ের বিষয়বস্তু ছিল “কোন ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের রিসেল ভ্যালু তুলনামূলক বেশি? (Say Honestly)” এবং উক্ত ৭টি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আমরা শুরুতে ভোটিংয়ের অপশন হিসেবে রাখি। তবে আরো অপশন (ব্রান্ড) যুক্ত করার জন্য অনুমতি রেখে আমরা পোলটি গ্রুপ মেম্বারদের সামনে নিয়ে আসি। ৩ দিন ব্যাপী এই ভোট চলতে থাকে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল প্রেমিদের অন্যতম জনপ্রিয় এই ফেসবুক গ্রুপে।
প্রথম ১ ঘন্টায় হোন্ডা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও এরপর উপরের দিকে উঠতে থাকে বাজাজ এবং ইয়ামাহা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ইয়ামাহা (১৪১৫ ভোট) বিরাট ব্যবধান তৈরী করে ২য় এবং ৩য় স্থানে থাকা হোন্ডা (৫৫১ ভোট) এবং বাজাজের (৪৭৪ ভোট) সাথে। বাইকারদের ভোটে শেষ পর্যন্ত ৪র্থ, ৫ম এবং ৬ষ্ঠ স্থান দখল করে সুজুকি (১৭১ ভোট), টিভিএস (৯৫ ভোট) এবং হিরো (৬১ ভোট)। পোলে অপশন থাকার পরেই রানার মাত্র ১৩টি ভোট পেয়ে ১০ম স্থানে জায়গা করে নেয়, যা আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে।
রিসেল ভ্যালু বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে একটি মোটরসাইকেলের আয়ুস্কাল, ভাল রাইড এক্সপেরিয়েন্স, মাইলেজ, স্পেয়ার পার্টস এর সহজলভ্যতা এবং সেলস আফটার সার্ভিসের সহজলভ্যতা। মোটরসাইকেলিস্টদের ভোটে ইয়ামাহা ব্রান্ডটি উঠে এসেছে তালিকের শীর্ষে এবং যার পেছনে উল্লেখিত কারণ উপরের গুলো।
যদিও রিসেল ভ্যালু শুধুমাত্র একটি ব্রান্ডের উপর নয় বরং একেকটি বাইকের মডেলের উপরও নির্ভর করে। কিন্তু এই ভোটিং এর উদ্দ্যেশ্য ছিল গড়ে কোন ব্রান্ডের বাইকগুলো বিক্রি করতে গেলে তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি করা যায়। যদিও এই ভোটে হয়তো অনেকে রিসেল ভ্যালু’র কথা না ভেবেই নিজের পছন্দের ব্রান্ডকে ভোট করেছেন কিন্তু সেটিও পরোক্ষভাবে উক্ত ব্রান্ডের রিসেল ভ্যালুকেও মেনশন করে।
এই ভোটে আনুমানিক সর্বমোট ২৮৭৩ জন মোটরসাইকেলিস্ট অংশ নিয়েছেন। যদিও ভোটারের অংকটা খুব বেশি নয় কিন্তু সম্ভাবতার গাণিতিক সূত্র মতে শীর্ষে থাকা ব্রান্ডগুলোরই রিসেল ভ্যালু যথাক্রমে বেশি হবে সেটি বলা যায়। ভোটারের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে শতাংশ অনুযায়ী উক্ত ব্রান্ডগুলোই শীর্ষ স্থানে থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়।
৬ষ্ঠ – ১২তম (ভোটের পরিমান)
দেশি-বাইকার ডট কম অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপটির মেম্বাররা কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডের মোটরসাইকেল চালায় না বরং এখানে সব ব্রান্ডের মোটরসাইকেল প্রেমি রয়েছে। যদি এই পোলটি কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডের মোটরসাইকেলিস্ট গ্রুপে আয়োজন করা হত তবে উক্ত ব্রান্ড সব দিক থেকে সব সময় এগিয়ে থাকতে পারত। দেশি-বাইকার কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডকে বহন করে না এবং বাইকাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নিয়েছেন।
সুতরাং সব মিলিয়ে নিঃস্বন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশে বিক্রিত মোটরসাইকেল ব্রান্ডগুলোর মধ্যে ইয়ামাহা, হোন্ডা, বাজাজ, সুজুকি, টিভিএস এবং হিরো’র রিসেল ভ্যালু সবচেয়ে বেশি।