টিভিএস এর RTR সিরিজের প্রতি ইয়াং জেনারেশনের বেশ আগ্রহ দেখা যায়। হর্নেট, এনএস এবং জিক্সারকে চ্যালেঞ্জ করতে টিভিএস বাজারে নিয়ে এসেছে TVS Apache RTR 160 4V যেটি দেখতে হুবহু RTR 200 এর ন্যায়।
বাইকটির নামকরনে 4V যুক্ত করার কারন, এর ইঞ্জিনে ৪টি ভালভ ব্যবহার করা হয়েছে যা এই সেগমেন্টে কিংবা অধিকাংশ প্রিমিয়াম বাইকেও দেখা যায় না। ফোর ভালভ এর ইঞ্জিন হওয়ায় এটি বেশি আয়তন জায়গা জুড়ে এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ করতে পারে। যার ফলে ইঞ্জিনটি তুলনামূলক বেশি পাওয়ার প্রোডিউস করতে পারে, ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি এবং এক্সিলারেশন বেটার হয়।
ধন্যবাদ টিভিএস অটো বাংলাদেশকে দেশি-বাইকার টিমকে এই বাইকটি দারুন এই বাইকটি টেস্ট করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে পাবলিশ করা RTR 160 4V এর ফার্স্ট ইমপ্রেশন রিভিউতে আমরা বলেছিলাম সুযোগ পেলে বাইকটির একটি টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সময় এসেছে বাইকটির লং রাইড পারফর্মেন্স আপনাদের সাথে শেয়ার করার।
ফোর ভালভ এর ইঞ্জিন হওয়ায় এটি এই সেগমেন্টে সর্বোচ্চ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। ১৫৯.৭ সিসি’র এই কার্বুরেটর ইঞ্জিনটি ১৬.২৮ বিএইচপি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার এবং ১৪.৮ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটিতে সেলফ এবং কিক স্টার্টার রয়েছে।
আমরা সাধারনত বাইকারদের অধিক গতিতে বাইক চালাতে নিরুৎসাহিত করি। কিন্তু এক্সিলারেশন একটি বাইকের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার যা আপনাকে অভার টেকিংয়ে বাড়তি কনফিডেন্স দেবে। আর এই ধাপে RTR বরাবরই এগিয়ে। এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা এক্সিলারেশন পাবেন এই বাইকটিতে। একেবারে ইনিশিয়াল এক্সিলারেশন আগের RTR 150 এর তুলনায় সামান্য কিছুটা কম হলেও ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে এটি রিকভার করে ফেলে।
RTR 4V তে রয়েছে ফাইভ স্পীড গিয়ার বক্স। তাই সিক্সথ গিয়ারের অভাব অনুভব করতে পারেন। তবে ইঞ্জিনের পাওয়ার অনুযায়ী এটিকে ৫টি ধাপে বিন্যস্ত করা অবশ্যই সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলে মনে হয়েছে।
TVS তাদের এই ন্যাকেট স্পোর্টস বাইকটিকে রেসিং মেশিন বলে আখ্যায়িত করে। আর সে অনুযায়ী দিয়েছে নানা ফিচার এবং অভারঅল ডিজাইন করেছে বেশ স্পোর্টি। নিঃসন্দেহে লুকসের দিক থেকে RTR 4V এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা। এটি দেখতে হুবহু RTR 200 এর ন্যায়, শুধুমাত্র ইঞ্জিন, সিট এবং এলয় প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটি অংশ খেয়াল করলে দেখবেন TVS তাদের এই মডেলটি ডিজাইন করতে কি পরিমান এফোর্ট দিয়েছে। প্রতিটি অংশকে তারা সাজিয়েছে দারুণভাবে আর তাই প্রতিটি এঙ্গেল থেকে বাইকটি দেখতে চমৎকার।
Snack fang কনসেপ্ট থেকে ডিজাইন করা হয়েছে এর ল্যাম্প এবং গ্রাবরেইল। ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন এটি দেখতে সাপের দাঁতের ন্যায়।
LED DRL পজিশন ল্যাম্প এবং LED টেইললাইট ব্যবহার করা হলেও। হেডলাইটটি হ্যালজেন এবং নাইট রাইডের জন্য এর আলো পর্যাপ্ত মনে হয়নি।
ফুয়েল ফিলার ক্যাপটি মাঝে না দিয়ে বরং কিছুটা ডানে দিয়েছে যা দেখতে বেশ স্টাইলিশ। শট গান কন্সেপ্ট থেকে এক্সজোস্টটি ডিজাইন করা। ডাবল ব্যারেল এই এক্সজোস্টটি দেখতে বেশ ইউনিক এবং স্পোর্টি।
মাস্কুলার ফুয়েল টাঙ্ক, এগ্রিসিভ এরোডায়নামিক ইঞ্জিন কাওল, ফ্রন্ট সাসপেনশনে স্টাইলিশ অয়েল সীল কাভার, ব্রেকিংয়ে রোটো পেটাল ডিস্ক, লুকরেটিভ স্টিকার সব মিলিয়ে সৌন্দর্য্যের কোন কমতি রাখেনি টিভিএস তাদের এই ১৬০ সিসি’র মোটরবাইকটিতে। সব মিলিয়ে এটিকে একটি দারুণ স্ট্রিট ফাইটার মনে হয়। আর বাইকটির বিল্ট ইন কোয়ালিটি নিয়ে আমরা বেশ সন্তুষ্ট। পালসার এনএস এবং আরটিআর ফোর ভি-তে এই সেগমেন্টে সেরা বিল্ট ইন কোয়ালিটি পাবেন।
ফুয়েল ট্যাংকে এয়ার ভেনটিলেশনের জন্য কিছু ছিদ্র রয়েছে এবং ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখার জন্য টিভিএস তাদের এই বাইকটিতে ব্যবহার করেছে Oil Cooled Combustion Chamber অর্থ্যাৎ O3C টেকনোলজি যার সাথে রয়েছে র্যাম এয়ার এসিস্ট. যেটি ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হাইওয়ে এবং সিটি রাইডে কখনই ইঞ্জিন ওভার হীট হয়েছে বলে মনে হয়নি। বাইকটিতে সেলফ এবং কিক স্টার্টার রয়েছে। যদিও ইদানিং স্পোর্টস বাইকগুলোতে কীক স্টার্টার উঠে যাচ্ছে কিন্তু এটি নানান সময় ভাল কাজে দেয়।
ন্যাকেট স্পোর্টস বাইক হওয়া সত্ত্বেও RTR 4V এর টার্নিং রেডিয়াস কিছুটা ওয়াইড যার ফলে সিটি রাইডে কিছুটা প্রবলেম ফেস করতে পারেন। তবে পাইপ হ্যান্ডেলবার হওয়ায় সিটিং পজিশন বেশ কম্ফোর্টেবল। টেস্ট রাইডের সময় আমরা বাইকটিতে লং ট্যুর করেছিলাম। ১ দিনে প্রায় ৩০০ কিঃমিঃ এর বেশি চালিয়েছিলাম, পিঠে বা কোমড়ে কোন ব্যাথা অনুভব করিনি। যারা বাইকে লং ট্যুর পছন্দ করেন তারা RTR এর এই নতুন ইডিশনটি বেশ ইনজয় করবেন বলে আশা করি।
আগের RTR 150 এবং 160 তে ভাইব্রেশন নিয়ে অনেকের কমপ্লেইন ছিল যা এই ভার্সনটিতে নেই। ৭০০০ আরপিএম পর্যন্ত হাইস্পীডেও স্মুথলি রান করে। তবে ৭০০০ আরপিএম এরপর কিছুটা ভাইব্রেশন বোঝা যায়। ৭০০০ এর পর এর ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে একটি রেড সিগন্যাল দেয়। সুতরাং বাইকটির ইঞ্জিন থেকে লং টার্ম ভাল পারফর্মেন্স পেতে ৭০০০ আরপিএম এর মধ্যে চালানোর চেষ্টা করা উচিত হবে।
সুইচ এবং রেয়ার ভিউ মিরর আগের RTR 160 এর মতই। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলটি সম্পূর্ন ডিজিটাল এবং গুড লুকিং, যাতে থাকছে প্রয়োজনীয় সব ফিচারের সাথে থাকছে আগের RTR এর মত টপস্পীড রেকর্ডার। তবে দারুণ এই ডিজিটাল মিটারটিতে গিয়ার ইন্ডিকেটর থাকা উচিত ছিল।
ভারতে RTR 4V তে AHO সিস্টেমটি থাকলেও টিভিএস বাংলাদেশে AHO বন্ধ করে রাইডারদের সুবিধার্থে একটি এডিশনাল সুইচ দিয়েছে হেডলাইট অফ-অনের জন্য। তবে সুইচটি কিছুটা নিম্নমানের। আমাদের মতে AHO সিস্টেমটি থাকাই ভাল ছিল। কারণ এটিতে আস্তে আস্তে আমাদের দেশের মানুষরাও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
সুইচ রেয়ার ভিউ মিরর এবং হর্ণ আগের RTR 160 এরটি ব্যবহার করা হয়েছে। হর্ণটি যথেষ্ট ভাল মানের এবং সাউন্ড যথেষ্ট লাউড যা রাইডিংয়ের সময় অনেক দূর থেকে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম। ছোট একটি ফিচার কিন্তু অনেক ইউসফুল একটি পার্ট। সব কোম্পানীর উচিত এমন ছোটখাট ফিচারগুলোকে কার্যকরী করে তোলা।
RTR 4V তে ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ১২ লিটার। ঢাকা সিটিতে পুরোটা পথ জ্যামে চালিয়ে আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৩৫ কিঃমিঃ/লিটার এবং হাইওয়েতে আমরা এর মাইলেজ পেয়েছি ৪১ কিঃমিঃ/লিটার। সব মিলিয়ে সিটি এবং হাইওয়েতে ৩৮ কিঃমিঃ/লিটার মাইলেজ পেয়েছি আমরা। ১৬০ সিসি’র একটি বাইকে এর বেশি মাইলেজ আমরা আশা করি না। তবে এএফআই ভার্সনটি বাংলাদেশে আসলে মাইলেজ আরো কিছুটা বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
এই সেগমেন্টে হাইয়েস্ট গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স আপনি পাবেন এটিতে যা ১৮০ মিঃমিঃ। তাই ভাংগা-চূড়া, উঁচু নিচু গর্ত কিংবা স্পীড ব্রেকারে বেঁধে যাওয়ার হাত বাইকটিকে সুরক্ষা দেবে। বাইকটির ওজন ১৪৫ কেজি। সিটটি পিলিওনের জন্য বেশ কম্ফোর্টেবল। তবে RTR 200 এর মত স্টেপ আপ সিট হলে বাইকটিকে আরো স্পোর্টি মনে হত। চাইলে আপনি এটিকেও কাস্টমাইজ করে স্টেপ আপ সিট বানিয়ে নিতে পারেন।
হাই এবং লো আরপিএমে RTR 4V এর সাউন্ড চমৎকার এবং এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা বলাই যায়। তবে আগের RTR এর সাউন্ড এর থেকে কিছুটা লাউড এবং স্পোর্টি ছিল।
শীতকালে এর ইঞ্জিনটি স্টার্ট হতে কিছুটা প্রবলেম ফেস করতে পারেন। তবে EFI ভার্সনটি বাংলাদেশে এলে হয়তো ভাল ফিডব্যাক পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি তারা এ বছরেই ফুয়েল ইঞ্জেকশন ভার্সনটিও লঞ্চ করবে। RTR 4V তে থাকছে টায়ার গার্ড যা আপনাকে বর্ষাকালে ভাল সাপোর্ট দেবে।
বাইকটির সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনে সেভেন স্টেপ এডজাস্টেবল মনোশক সাসপেনশন থাকছে। মনোশক সাসপেনশনটি সোর্সিং করা হয়েছে জাপানের নামকরা কোম্পানী SHOWA থেকে। যেটি হাই-স্পীড কর্ণারিং এবং রেসিং ট্র্যাকে পারফেক্ট ব্যালেন্স পেতে সহায়তা করে। উভয় সাসপেনশনের পারফর্মেন্স বেশ ভাল পেয়েছি। চেসিসে থাকছে Double Cradle Split Synchro Frame যা এর স্ট্যাবিলিটি ২৫% বৃদ্ধি করেছে।
RTR 4V এর সামনে ২৭০ মিঃমিঃ এবং পেছনে ২২০ মিঃমিঃ পেটাল ডিস্ক ব্যবহার করা হয়েছে। টিভিএস তাদের এই বাইকটিতে ব্রেকিংয়ে বেশ নজর দিয়েছে বলে মনে হয়েছে। শুধু ডাবল ডিস্ক ব্রেক নয় বরং টায়ার সাইজও বৃদ্ধি করেছে তারা এই মোটর বাইকটিতে। সামনে ৯০/৯০ এবং ১৩০/৭০ সেকশন টিভিএস রিমোরা টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করেছে। টিভিএস দিনকে দিন টায়ার ব্রান্ড হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। অনেকে জাপানীজ ব্রান্ডের মোটরসাইকেলেও এখন টিভিএস এর টায়ার দেখা যায়। টায়ার গ্রিপ ভাল এবং কর্ণারিংয়ে ভাল সাপোর্ট পাবেন।
RTR এ টপস্পীড বরাবরই কিছুটা বেশি। আমরা এটিতে টপস্পীড পেয়েছি ১৩১ কিঃমিঃ/ঘন্টা। স্পীডের কথা আসলে প্রশ্ন আসে ব্রেকিং নিয়ে। আগের RTR এর ব্রেকিং নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট ছিল না। সুতরাং অনেকের প্রশ্ন RTR 4V এর ব্রেকিং কেমন? ওয়েল। ব্রেকিংয়ের সময় এতে প্রপার ব্যালেন্স আমরা পেয়েছি। সব মিলিয়ে এর ব্রেকিং বেশ ভাল মনে হয়েছে। তবে এই সেগমেন্টের সেরা বলা যাবে না। আমরা আশা করছি টিভিএস খুব দ্রুত বাংলাদেশে এর এবিএস ভার্সনটি লঞ্চ করবে।
কোন বাইকে আপনি সব কিছু মনের মত পাবেন না। কিন্তু এই বাজেটে টিভিএস তাদের এই বাইকটিতে যা দিয়েছে তা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে। সব মিলিয়ে এটি এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা বাইক তা অকপটে বলা যেতে পারে।
মোটরসাইকেল কেনার সময় নিজের পছন্দকে সবার আগে মূল্যায়ন করুন এবং প্রতিটি বাইকের ভাল মন্দ দিক যাচাই করুন।
ধন্যবাদ।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.