Shell Advance Ultra 10W40 (সিনথেটিক) ইঞ্জিন অয়েল টেস্ট রিভিউ

ভাল মানের ইঞ্জিন অয়েল একটি মোটরসাইকেলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা ও জীবনী শক্তি বাড়ায়। একটা সময় ছিল যখন বাইকাররা ইঞ্জিন অয়েলের ব্যাপারে খুব একটা সচেতন ছিল না কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। সোশাল মিডিয়ায় বাইকারদের একটি কমন প্রশ্ন, আমার বাইকে কোন লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করব?

মোটরসাইকেলের কেনার সময় প্রত্যেকটি বাইকের সাথে সবাইকেই একটি বই দেয় যেটাকে বলে সার্ভিস বই বা ম্যানুয়াল বই। আর সেখানেই লেখা থাকে আপনার বাইকের জন্য কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল রিকমেন্ড করা হয়েছে। ম্যানুয়াল বই হারিয়ে ফেললও গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন আপনার বাইকের ইঞ্জিনের সাথে যেটা রিকমেন্ডেড গ্রেড কত।

বাজারে অনেক কোম্পানীর বিভিন্ন মানের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। আপনাকে অবশ্যই মোটরসাইকেলের জন্য তৈরী এবং সার্টিফাইড লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে হবে। সবার আগে দেখে নিন কন্টেইনারের গায়ে “4T” লেখা আছে কিনা যার দ্বারা বুঝবেন এটি ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের জন্য। বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিন অয়েলের সার্টিফিকেশন দিয়ে থাকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হল API, JASO, ILSAC, ASTM ইত্যাদি। যার মধ্যে API এবং JASO সব থেকে বেশি নামকরা। যেগুলো অয়েল API এবং JASO অনুমোদিত, সেগুলো অবশ্যই API এবং JASO-এর শর্ত পূরণ করে এমন অয়েলের থেকে বেশি নির্ভরযোগ্য। ইঞ্জিন অয়েলের কন্টেইনারে সাধারণত API ক্যাটাগরী লেখা থাকে এভাবে API SJ, API SL, API SM, API SN, যার মধ্যে “SN” হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট এবং আধুনিক। JASO এর ক্ষেত্রে JASO-MA কিংবা JASO-MA2 লেখা থাকবে যার মধ্যে JASO-MA2 ১৫০ সি,সি কিংবা তার অধিক বাইকগুলোর জন্য বেশি অগ্রাধিকার পাবে। এই বেসিক বিষয়গুলো মনে রাখলে আশা করি আপনার বাইকের জন্য সেরা মানের ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের বাজারে মূলত তিন ধরনের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। যেগুলো হচ্ছে মিনারেল, সেমি-সিনথেটিক এবং সিনথেটিক। মিনারেল অয়েলগুলোর দাম সাধারণত ৩৫০-৪৫০ টাকা এবং সিনথেটিকগুলোর দাম ৮০০-১৫০০ টাকা। মিনারেল লুব্রিকেন্টে সাধারণত একটি মোটরসাইকেলে ৮০০-১২০০ কিঃমিঃ চালানোর উপযোগী থাকে যেখানে ফুল সিনথেটিকে ২০০০-৩০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেলের জন্য শেল-এর ৩টি ধরনের ইঞ্জিন ওয়েল রয়েছে। যার মধ্যে মিনারেল ২টি হচ্ছে Shell Advance AX5 20W40 (425/-), Shell Advance AX5 20W50 (425/-) এবং সিনথেটিকটি Shell Advance 4T Ultra 10W40 (1200/-). মূলত মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের জন্য যে ওয়েলগুলো রয়েছে শেল সেগুলোর নামকরণে “শেল এডভান্স” যুক্ত করেছে।

বাংলাদেশে শেলের কোন উৎপাদনকেন্দ্র নেই। বাংলাদেশে শেল-এর ডিস্ট্রিবিউটর র‍্যাংকস পেট্রোলিয়াম লিমিটেড সাধারণত ভারত, সিংগাপুর এবং হংকং থেকে শেল এডভান্স আমদানী করে থাকে। আর তাই শেল নকল হওয়ার সুযোগ বেশ কম। তবু ভেজালমুক্ত Shell Advance পেতে দেশব্যাপী শেলের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার নিকটস্থ ডিলার পয়েন্ট থেকে কিংবা অনলাইনে Pickaboo ডট কম থেকে কিনে নিতে পারেন। আর Pickaboo ডট কম থেকে শেল-এর ইঞ্জিন অয়েলে কিনলে সাধারণত সাথে কিছু গিফট আইটেমও থাকে।

Yamaha R15 Version 3.0-এর জন্য রিকমেন্ডেড ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10W40 বলা যায়। আর তাই আমরা এই অন্যতম সেরা স্পোর্টস বাইকটিকে বেছে নেই Shell Advance Ultra 4T 10W40 ফুল সিনথেটিক অয়েলটি টেস্টের জন্য।

Shell Advance Ultra 10W40 ফুল সিনথেটিক

পারফর্মেন্সের আগে জানা দরকার Shell-এর এই ইঞ্জিন অয়েলটি API এবং JASO-এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য।Shell Advance Ultra 10W40-এর বোতলের উল্টোদিকে লেখা আছে Specifications & Approvals: API SN, JASO MA2, ENDORSED BY DUCATI. সার্টিফিকেশনের এই ধাপে শেলের এই লুব্রিকেন্টটিকে ১০০ তে ১০০-ই দিতে হবে কারণ বাজারে এর থেকে বড় সার্টিফিকেটধারী ইঞ্জিন অয়েল নেই বললেই চলে।

মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথে এর ইফেক্ট বোঝা যায়। ওয়েল নতুন অবস্থায় ইঞ্জিন খুব দ্রুত রেসপন্স করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দীর্ঘক্ষণ হাই আরপিএম-এ এক্সিলারেট করলেও ইঞ্জিনে চাপ অনুভূত হয় না। R15 Version 3.0-এর সাউন্ড কিছুটা কমলেও আগের থেকে স্মুথ হয়েছে।

সিটি, হাইওয়ে এবং পাহাড়ি রাস্তা সব মিলিয়ে আমরা Shell Advance Ultra 4T 10W40 চালিয়েছি প্রায় ২৭০০ কিঃমিঃ। সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে শেলের এই ইঞ্জিন অয়েলটি বাইকগুলোতে ৪০০০-৫০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত চালানো যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ফুয়েলের মান কিংবা RON (Research Octane Number) কম হওয়ায় লুব্রিকেন্টের কার্যক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ীতা কম হয়। তাছাড়া রাস্তাঘাট, ট্রাফিক জ্যাম এবং রাইডিংয়ের ধরণও এর সাথে জড়িত। শেলের এই সিনথেটিক অয়েলটি ব্যবহারের কারণে বাইকের থ্রটল রেস্পন্স কিংবা এক্সিলারেশন ছিল চমৎকার। ২৭০০ কিঃমিঃ চালানোর পরও সাউন্ড বেশ স্মুথ ছিল কিন্তু ২৫০০ কিলোমিটারের পর ১ম গিয়ারে ইঞ্জিন রেসপন্স কিছুটা কমে গিয়েছিল।

ক্লাচ এবং গিয়ার শিফটিং ছিল অসাধারণ স্মুথ। এর আগে R13 V3-তে মাইলেজ পেতাম ৪৫ কিঃমিঃ/লিটার আর Shell Advance Ultra ব্যবহারের সময় মাইলেজ পেয়েছি ৪৬ কিঃমিঃ/লিটার। সিটি রাইডিংয়ে ইঞ্জিন কখনো ওভারহিট হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এক্সিলারেশন চমৎকার হলেও টপস্পীড কিছুটা কম পাওয়া গেছে শেল এডভান্সের এই ইঞ্জিন ওয়েলটি ব্যবহার করে।

Shell Advance Ultra-তে ব্যবহার করা হয়েছে পিওর প্লাস টেকনোলজি। যার কারণে ইঞ্জিন ওয়েলটি বেশ স্বচ্ছ। আর দেখতে হলুদাভ সোনালী রংয়ের। মূলত পিওর প্লাস টেকনলজি হচ্ছে শেলের গ্যাস-টু-লিকুইড (GTL) পরিশোধন পদ্ধতিতে পাওয়া স্বচ্ছ বেজ অয়েল। শেলের যুগান্তকারী পিউর প্লাস টেকনোলজি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

২৭০০ কিঃমিঃ রাইড করার পরও অয়েল ড্রেনের পর লুব্রিকেন্টের রঙ কুচকুচে কাল বর্ণ না হয়ে বরং লালচে বাদামী রঙয়ের দেখাচ্ছিল। আর এর কৃতিত্ব পাবে শেলের পিওর-প্লাস টেকনোলজি। তবে অয়েলের আঠালো ভাবটি নেই বললেই চলে এবং ভিসকোসিটি (ঘনত্ব) কমে গেছে।

২৫০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত পারফর্মেন্স ভাল হলেও সিনথেটিক অয়েলে ২৮০০-৩০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত রাইড করা যাবে এই আশা করতেই পারি। বাংলাদেশে উৎপাদনকেন্দ্র থাকলে দাম আরো কিছুটা কমে আসত বলে আশা করা যায়। শুধু 10W40 ছাড়াও 20W50 গ্রেডের সিনথেটিক অয়েল থাকলে সব বাইকরাই শেল-এর সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করতে পারত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত একই বাইকে পরপর ৩ বার ব্যবহারের পর একটি ইঞ্জিন অয়েল তার পুরো ফিডব্যাক দেয়। বেশি ক্লাচ না চেপে ইঞ্জিন ব্রেকে অভ্যস্ত হলে, ভাল মানের ফুয়েল ব্যবহার এবং বাইকের প্রপার মেইনটেইনেন্স করলে সব মিলিয়ে ২৬০০-২৭০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত Shell Advance Ultra ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করা যায়।

Shell-এর বিশেষত্ব এর পরিশুদ্ধতা। যারা সবচেয়ে বিশুদ্ধ, ইঞ্জিনকে স্মুথ রাখে এবং পারফর্মেন্স সহায়ক ইঞ্জিন অয়েল খুঁজছেন তারা ট্রাই করে দেখতে পারেন।

একটি বিষয় যুক্ত না করলেই নয় যে বিশ্বখ্যাত মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডুকাটি, বিএমডব্লিউ, হোন্ডা, সুজিকি তাদের বিভিন্ন মডেলের বাইকগুলোতে Shell Advance ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে পরামর্শ দেয়। বিগত ১১ বছরে বিশ্বব্যপী সব থেকে বেশি বিক্রিত ইঞ্জিন ওয়েল কোম্পানী এই ব্রিটিশ-ডাচ যৌথ উদ্দ্যোগের শেল। বাংলাদেশে এর ডিস্ট্রিবিউটর র‌্যাংকস পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যেটি কিনা র‌্যাংকস এর একটি অঙ্গসংস্থান।

একটি পরামর্শঃ বাইক স্টার্ট করে ৩-৪ মিনিট রাখুন এরপর রাইড শুরু করুন। এতে অয়েলের দীর্ঘস্থায়িতা বাড়বে এবং ইঞ্জিন ভাল থাকবে।

 

লিখেছেনঃ দেওয়ান সোহান

Related Posts

error: Content is protected !!