আমি ও আমার জিক্সারঃ ছোটবেলা তে সাইকেল আর কিশোর বয়সে পা দেওয়ার পর মটরসাইকেল এর প্রেমে পরে যাওয়া টা মনে হয় বেশিরভাগ ছেলের জীবন এ ঘটে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তবে ২০১৪ সালে বাবা চলে যাওয়ার পর আমার বাইক চালানো টা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। কারন বাবা আগেই তার বাইকটি বিক্রি করে দিয়েছিল। যাই হোক আম্মু তো কিছুতেই আর নতুন বাইক কিনে দিবে না। বাইক ছাড়াই আমার জীবন চলতে লাগলো। মাঝে মাঝেই বন্ধুর বাইক চালাতাম আর বাসায় এসে আম্মুর সথে চিল্লাচিল্লি করতাম বাইক এর জন্য। যাই হোক অনেকটা সময় বাইক ছাড়া কাটানোর পর ২০১৭ সালের ২৩শে ডিশেম্বর আমি বাইক কিনলাম।
আমি সুজুকি জিক্সার ১৫৫ সিসি ২০১৭ এডিসন টা বাসায় নিয়ে আসলাম। দীর্ঘ এতটা সময় পর বাইক পাওয়ায় সব ভালবাসা আমি বাইকটাতে ঢেলে দিয়েছি। সাড়ে ৩ বছর হয়ে গেছে কিন্তু সুজুকি জিক্সার আমাকে কখনো নিরাশ করে নি। ২৭০০০ কিঃমিঃ পার হয়ে গেছে কিন্তু মনে হয় কেবলি তো শুরু আমার যাত্রা।
শুরুতেই বলি বাজারে এই সেগমেন্টে আরো অনেক বাইক থাকা সত্ত্বেও এই বাইক কেন নিলাম, সুজুকি জিক্সার যখন বাজারে আসে তখন থেকে বাইকটা বেশ ভাল লাগে। এর লুকস থেকে ওভারল সব কিছুই মন কাড়ে। বিশেষ করে তরুণদের বেশি মানায় এই বাইক।
এবার কথা বলি এর মাইলেজ নিয়ে, ১৫৫ সিসির এই বাইকটির মাইলেজ সত্যি অবাক করার মত, ১৪০ সেকশনের মোটা টায়ার থাকা সত্ত্বেও এর থেকে আমি সিটিতে ৪২ কিঃমিঃ এবং হাইওয়েতে ৪৭-৪৮ কিঃমিঃ মাইলেজ পাচ্ছি এবং এই ২৭০০০ কিঃমিঃ পরেও এর মাইলেজ আমাকে নিরাশ করে নি। সেই ক্ষেত্রে বলবো একটা কার্ব ইঞ্জিন বাইক হিসেবে এর মাইলেজ সত্যি অনেক ভাল। তবে মাইলেজটা অনেক সময় রাইডার এর উপরেও নির্ভর করে।
ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স নিয়ে কথা বলতে গেলে এই বাইককে আমি ১০/১০ এ দিবো। আমার জিক্সার যদিও সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক এর বাইক তবে এর ড্রাম ব্রেক ও কখনো নিরাশ করেনি আমাকে। আর এর সামনে ডিস্কে ব্যবহার করা হয়েছে নিশিনের ক্যালিপার যা ব্রেকিং খুব ভাল সাপোর্ট দেয় এছাড়া এর পেছনের ১৪০ সেকশন মোটা টায়ার ব্রেকিং এ বাইকের ব্যালেন্স খুব ভাল ভাবে ধরে রাখে।
এবার কথা বলবো জিক্সারের রাইডিং পজিশন এবং কম্ফোর্ট নিয়ে, আমার এই লম্বা পথ চলায় আমি অনেক শর্ট এবং লং ট্যুর করেছি এই বাইক নিয়ে, রাইডার হিসেবে কখনো আমার কোনো রকম সমস্যা ফিল হয় নি। তবে হুম এর পিলিয়ন সিট অনেক সমস্যা, এটাতে বসে পিলিয়ন মনে হয় না এক টানা ৫০-৭০ কিঃমিঃ যেতে পারবে। এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা ফিল করি নি।
আমার কাছে আমার বাইক এর তেমন কোন খারাপ দিক নেই শুধুমাত্র পিলিয়ন সিট ছাড়া। সুজুকির কাছ থেকে ফ্রি সার্ভিস খুব একটা ভাল আশা না করাই ভালো। পেইড সার্ভিস কিছুটা চলে । এত বছর ধরে সুজুকি এর সাথে আছি কিন্তু কখনও আমি কাস্টমার এর প্রতি সুজুকির কোন আন্তরিকতা দেখি নি। যাই হোক আমার বাইক নিয়ে আমি সন্তুষ্ট । আমি মনে করি সিটি রাইড এবং লং ট্যুর দুইটার জন্যই সুজুকি জিক্সার বেস্ট একটা বাইক।
এই ছিলো আমার জিক্সার নিয়ে ২৭০০০ কিঃমিঃ পথ চলার গল্প, হয়তো আরো অনেক পথ চলা বাকি আছে। ধন্যবাদ।
লিখেছেন – মারুফুর রায়হান
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.