৮০ সিসি বাইক নিয়ে তিন্দু ভ্রমণ

ভ্রমণ কাহিনীটি লিখেছেন মোঃ খোকন মিয়া

আসসালামু ওয়ালাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমার নাম মোঃ খোকন মিয়া। বাসাঃ নরসিংদী জেলার, রায়পুরা থানার,উত্তর মির্জানগর ইউনিয়ন এর বাহেরচর গ্রাম। আমি বাইক চালানো শিখেছি ৬ আগষ্ট ২০২০ সালে। আমি একজন স্টুডেন্ট অনার্স সম্পুর্ন করেছি বাট কোনো চাকরিতে এখনো জয়েন করিনাই। পরিবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড এই ৮০ সিসির বাইকটি কিনেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো এলাকার ভিতরেই এই বাইক দিয়ে ঘুরাঘুরি করবো। একদিন হাইওয়ে তে উঠে টান দিয়েছিলাম, দেখলাম বাইকটি বেশ ভালো পারফর্ম করলো।

পরে চিন্তা করলাম, আমি হইতোবা দুরে ও ট্যুর করতে পারবো। তারপর আমার বাড়ি থেকে আমার এক ছোট ভাই (মামুন) কে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মৌলভীবাজার একটা চা বাগান আছে যেখানে লেখা আছে *চায়ের দেশে স্বাগতম। এই খানে গিয়ে ছবি তুললাম, তারপর শ্রীমঙ্গল ঘুরে সুষ্ঠু ভাবে বাড়িতে চলে আসি। এটায় ছিলো আমার প্রথম লং ট্যুর ৮০ সিসি বাইক দিয়ে। তারপর থেকে চিন্তা করলাম শ্রীমঙ্গল যেহেতু যাইতে পারছি তাহলে বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে।

তারপর নরসিংদী থেকে গাজীপুর, মময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা আসতে আসতে সাজেক ও গিয়েছিলাম এই ৮০ সিসি বাইক দিয়ে, পিলিয়ন সহ। তারপর একে একে বরিশাল,পাটুয়াখালি,কুয়াকাটা, বরগুলা,ঝালকাঠি, কক্সবাজার, টেকনাফ,বান্দরবান, নীলগিরি, ডিম পাহাড়, থানচি,তিন্দু আলীকদম ট্যুর করেছি এই ৮০ সিসি বাইক দিয়ে।ইতোমধ্যে ৪০+ জেলা সম্পুর্ন করেছি। ইচ্ছা আছে ৬৪ জেলা ইন-শা-আল্লাহ সম্পুর্ন করবো ৮০ সিসি বাইক দিয়ে।

আমার ট্যুর গুলোর মধ্যে অন্যতম ট্যুর ছিলো বান্দরবান ভ্রমণ। নীলগিরি, থানচি,ডিম পাহাড় ঘুরে আমার একটা টার্গেট ছিলো তিন্দুতে যাওয়ার। কারন বড় বড় বাইকাররা তিন্দুতে গিয়ে হিসসিম খেয়ে যায়। শুনেছি,তিন্দু খুব ভয়ংকর। নরসিংদী থেকে ১৪-০৭-২০২২ ইং রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে রউনা দেই আমার ৮০ সিসি বাইক দিয়ে।

টাঙ্গাইল থেকে একটা বাইক আসছিলো Tvs metro 110, তাকে নিয়ে নরসিংদী সদরে গিয়ে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের আরেক জনের জন্য অপেক্ষা করি, সেও ৮০ সিসি নিয়েই আসছিলো। তারপর আমরা ৩ টা বাইক নিয়ে মাধবদী টু মদনপুর বাস-স্টেন্ড এর রাস্তা দিয়ে মদনপুর যাই এবং আরেকটা ৮০ সিসি বাইকার এর জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম উনি আসছিলো ঢাকা থেকে যদিও উনার হোম ডিস্ট্রিক্ট নাটোরে। তারপর ৪ টা বাইক রউনা দিয়ে দিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে কুমিল্লা যাওয়ার আগে চেইন খুলে যায়। একটা গেরেজ থেকে সামনের চেইন স্পকেট লাগাইয়া নেই। এটায় প্রথম কোনো ট্যুরের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যায় পরি। মিরসরাই এসে চেইন ছিড়ে যায়। পরে একটা গেরেজ থেকে পুরা চেইনের সেট পরিবর্তন করি। লাগানোর পরে আসল সমস্যা বের হইলো বিয়ারিং ভেঙে গিয়েছিলো। ইতিমধ্যে প্রচন্ড রোধ ও বাইকের পেরাই অতিষ্ঠ হইয়া গেছি। তারপর খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম। বায়েজিদ লিংক রোডে আসার পর নামলো বৃষ্টি। তারপর বৃষ্টিতে ভিজে ছবি তুলি এবং ভিডিও করেছি।

বৃষ্টি একটু কমে যাওয়ার পর আবার রউনা দেই কিন্তু লিংক রোডের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর বৃষ্টি আরো বেশি নামে, যার ফলে ঐ জায়গায় আমাদের সাথের একজন উনার বন্ধুরে কল দিলো এবং মুহূর্তের মধ্যেই উনার বন্ধু এখানে চলে আসে। ২ মিনিট লাগে উনার বাসায় যাইতে। তারপর রাতে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকি এবং নীলগিরিতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে হোটেল কনফার্ম করি। কারন আমরা চাদনী রাত দেখবো পাহাড় থেকে।

তারপর সুন্দর ভাবে চিম্বুকে এসে ছবি তুলি, এরপর টাইটানিক ভিউ তে এসে মন জুড়িয়ে গেলো। এরপর নীলগিরিতে প্রবেশ করি, বাইক এবং আমার জন্য ১৫০ টাকা দিয়ে। ঐখানে গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করে টাইটানিক ভিউ তে রউনা দিয়ে দিলাম। যাইতে যাইতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

পরের দিন ভর বেলায় রওনা দিয়েছিলাম থানচি,ডিম পাহাড়, তিন্দু, আলীকদম এর উদ্দেশ্য। নীলগিরি থেকে যখন নিচের দিকে নামতেছিলাম তখন তো খুব ভালো লাগছিলো কারন অনেক খানি জায়গা নিচের দিকেই যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো পুরো পাহাড় আমাদের উপরে পরে যাচ্ছে। মাথার উপরে শুধু পাহাড় আর পাহাড়।শুনেছি, ডিম পাহাড় ২৫০০ ফুট উপরে। কিভাবে উঠবো মনে মনে চিন্তা করতেছিলাম। পরে ভাবলাম, পিলিয়ন নিয়ে যদি সাজেক যেতে পারি তাহলে তো সিংগেলে ডিম পাহাড় ও যাওয়া সম্ভব। তারপর ডিম পাহাড়ে উঠার সময় প্রথম যে খাড়া পাহাড় টা পরে ঐ খানে একটা বাইক পরে যায়। তারপর ক্লাস প্লেট ভেঙে যায়। পরে টেপ দিয়ে পেছিয়ে ঐটা লাগাই । যাইহোক আল্লাহর রহমতে ডিম পাহাড়ে উঠতে পারি। আহহহ কত সুন্দর ভিও মনে হচ্ছিলো আমি সর্গে চলে আসছি। ৮০ সিসি বাইক দিয়ে ২৫০০ ফুট উপরে উঠা আমার মনে অকল্পনীয়। কারন জিক্সার বাইক দিয়ে উঠলেই ইঞ্জিনের যে সাউন্ড মনে হয় ইঞ্জিন ফেটে যাবে।

 

বান্দরবান, নীলগিরি, থানচি, চিম্বুক, তিন্দু,আলীকদম এর মধ্যে সবচেয়ে বেস্ট জায়গা খুজে পেয়েছিলাম ডিম পাহাড়ে।তিন্দুর মাঝ পথ পর্যন্ত বেশ ভালোভাবে গিয়েছি। তারপর খুব চিন্তায় পরে যাই এবং বেশ ভয় হতে থাকে মনের মধ্যে।আমার সাথে আরো একটা ৮০ সিসির বাইক ছিলো এবং একটা জিক্সার ছিলো। আমরা ৩ জনেই ভাবছিলাম তিন্দু যাওয়ার পর অন্য কোনো রাস্তা আছে আমরা ঐ রাস্তা দিয়া ফিরে আসবো। সুষ্ঠু ভাবে তিন্দু পৌছানোর পর নিজের আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি কারন, তিন্দু যে আসলেই ভয়ংকর তা আমরা ইতিমধ্যে বুঝতে পারি। ঐ খানে গিয়ে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করি আর আল্লাহর কাছে বলি হে আল্লাহ তুমি ঘরের সন্তান ঘরে ফিরিয়ে নিও।

হটাৎ মনে হতে লাগলো ৮০ সিসি বাইক দিয়ে তিন্দু থেকে ফিরে যাওয়াটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। নদীর ধারে আরো কয়েকটি বাইক ছিলো। ওরা ট্রলার চালকদের সাথে কথা বলেছিলো বাট প্রতি ট্রলারে ১ টা বাইক নিবে এবং ১৫০০ টাকা করে দিতে হবে। আমরা পুরাই হতবাগ। পরে এক বাইকার ভাই ছিলো বললো “দুর মিয়া কিয়ের ভয় পান? আমাদের কাছে যে রশি আছে আপনার বাইক বেধে টাইন্না নিয়া যামু”। তার কথায় আত্নবিশ্বাস অনেকটায় বেড়ে গেছে। আল্লাহর নাম নিয়া রওনা দিলাম খুব সুন্দর করে যাচ্ছিলাম কিন্তু লতা আর ঘাস আমার পায়ে পেছিয়ে যায়, আমি ক্লাস ছেড়ে দিয়ে বাইক থেকে নেমে যাই এবং বাইকের স্টেন্ড ফেলে দাড় করাইয়া দেয়। পিছনে ২ টা বাইক ছিলো 4v এবং FZ-S v3 ওরা পিলিয়ন নিয়ে আসছিলো। দুর্ভাগ্য ক্রমে ওরাও উঠিতে পারেনাই। আমরা ৪ জনে মিলে 4v এবং FZ-s v3 ধাক্কা দিয়ে উঠাই এবং ওরাও আমাদেএ ধাক্কা দিয়ে হাল্কা উঠানোর পর স্বাভাবিক ভাবে তিন্দু থেকে আল্লাহর রহমতে মেইন রোডে চলে আসি। আলহমদুলিল্লাহ।

তারপর আলীকদম গিয়ে খাবার খেয়ে কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে রউনা দিয়েছিলাম। কক্সবাজার ২ দিন থেকে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই আল্লাহর রহমতে সুষ্ঠুভাবে বাড়িতে পৌছাইতে পেরেছি।

আমার কাছে মনে হয়েছে, তিন্দুতে দেখার মতো কিছুই নেই তবে তিন্দু থেকে সুষ্ঠু ভাবে ঘুরে আসতে পারলে মনে করবেন আপনার ড্রাইভিং স্কিল অনেক ভালো।

অলি আহাদ খান

Related Posts

Add Comment

রিপ্লে দিন

error: Content is protected !!