হর্নেটের সাথে বগা ও কিওক্রাডং জয়ের গল্প লিখেছেন জুন সাদিকুল্লাহ

বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পাহাড় হল কেওক্রাডং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২৩৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়টি বান্দরবান জেলার রুমা সদর উপজেলায় বাংলদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত।

ছোট বড় পাহাড়, ঘন জঙ্গল, এবং নানা ধরনের পশুপাখিতে পরিপূর্ণ এই দুর্গম এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে হয়তোবা আপনি অবাক হবেন।

রোমাঞ্চ প্রিয় মানুষদের কাছে কেওক্রাডং এক অন্যরকম আকর্ষণের নাম আর বাইক অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে এখন এই কেওক্রাডং এখন হট কেক।

Hornet at Keokradong

বান্দারবান থেকে রুমার দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার আর রুমা থেকে বগা লেক প্রায় বিশ কিলোমিটার আর বগা থেকে কেওক্রাডং প্রায় দশ কিলোমিটার আর দশ কিলোমিটার কাচা পাহাড়ি রাস্তা মাঝে একটা ঝিরি আছে সেখানে রাস্তা প্রায় ৪৫ ডিগ্রি খাড়া। বগায় থাকার ভালো সুবিধা নেই তাই আমি ভোর পাঁচটায় রওনা হয়েছিলাম চট্টগ্রাম থেকে পথে নাস্তা করে রুমা পৌঁছাতে সাড়ে আটটা বেজে গেলো আর রুমায় ঢোকার আগে আর্মি ক্যাম্পে নাম আর বাইকের নাম্বার লিখে রাখলো।

চট্টগ্রাম থেকে রুমা পর্যন্ত খুব ভালো রাস্তা আর সাথে ছিল আপেলর হর্নেট। হর্নেট নিয়ে ট্যুর করা হয়নি আগে তাই প্রথম প্রথম একটু খুতখুতে মনোভাব কাজ করছিলো কিন্তু চিটাগাং আমানত শাহ্‌ সেতুর আগে ভাঙ্গা রাস্তায় বাইকের সাস্পেন্সনে আমি মুগ্ধ। যাইহোক রুমা পৌঁছানের পর সব চাইতে বিরক্তিকর কাজ গাইড ঠিক করা আর সেই গাইডকে পিছনে বসিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেটা আমার কাছে আরও বিরক্তিকর মনে হয়েছে। এটা ঠিক আগে বগা আর কেওক্রাডং দুর্গম ছিল কিন্তু এখন বগা পর্যন্ত পাকা রাস্তা তাই আমার মনে হয় অপশন রাখা উচিৎ গাইড নেওয়া অথবা না নেওয়ার। দুই বন্ধু মিলে এক বাইকে যেতে পারতো সেখানে গাইড এর জন্য আলাদা ঝামেলা। আর গাইডকে দিতে হবে প্রতিদিন ৬০০ টাকা আর টিপস তো আছেই।

তবে বগা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার সময় গাইড থাকলে কিছু হেল্প হয়, রাস্তা চেনানো পাহাড়ে বাইক ঠেলা এইসব কাজে গাইড দরকার হয়। যাইহোক রুমায় ঘণ্টাখানেক এর বেশী সময় নষ্ট হলো ফরম ফিলাপ আর আর্মি ক্যাম্পে তারপর রুমা থানা থেকে আবার সাইন ইন করে বগার দিকে রওনা হলাম। থানায় দেখা হলো বগা থেকে ফেরত আসা দুই কক্সবাজারের বাইকারদের সাথে। তারা বারবার সাবধান করলেন বগার লাস্ট হাফ কিলো রাস্তার ব্যাপারে যেটা নাকি খুব খাড়া আর আর্মিরা রাস্তা বানাচ্ছেন তাই রাস্তায় অনেক বালি। যেকোনো সাজেশন মোস্ট ওয়েলকাম তাই সব শুনে আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে রওনা হলাম এবং পিলিওন নিয়ে বাইক ঠেলাঠেলি না করে বগায় পৌছালাম এরপর আবার আর্মি ক্যাম্পে সাইন ইন কেওক্রাডং এর জন্য।

বগালেক

আমি জানিনা কেনও মানুষজন বগা লেকের এতো প্রশংসা করে কারন আমার কাছে এমন কোনো আহামারি কিছু মনে হয়নি। মেবি আমার চোখে সমস্যা তবে পাহাড়ের উপর থেকে বগা লেক দেখতে সুন্দর লেগেছে এটা ঠিক। বগায় দেখা হলো আমার নেপাল রাইড পার্টনার রনির সাথে এরপর একসাথে রওনা হলাম কেওক্রাডং এর পথে। রনির গাইড মিন্টু খুব ফেমাস মানুষ কারন সে গাইড আবার বাইক রাইডার আবার বাইক মেকানিক। বেচারা আমার উপর মনেহয় অনেক রাগ করে আছে কারন কেওক্রাডং যাওয়ার পথে তার কিছু কথা বার্তা শুনলেও ব্যাক করার সময় আমি আর কোন কথাই আর শুনতে পারিনি কারন আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে সেম ডে তে ঢাকা ব্যাক করবো।

Way to Keokradong

কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দুইটা যায়গা আমার কাছে কিছুটা বেশী অ্যাডভেঞ্চারস লেগেছে একটা হচ্ছে জাস্ট বগা থেকে বের হয়েই যেখানে আর্মিরা নুতুন মাটি ফেলেছেন নুতুন রাস্তা করার জন্য তবে এটা বেশিদিন থাকবেনা কারন খুব দ্রুত রাস্তার কাজ চলছে আর কেওক্রাডং যাওয়ার সময় হারমন পাড়ার আগে একটা ছোট্ট ঝিরি আছে সেখানে নামতে হয় অনেক ঢালুতে আবার ঝিরি পার হয়েই খাড়া উপরে উঠতে হয়। হর্নেট এর টর্ক (14.50 NM @ 6500 rpm) দেখি ভালোই তেমন কোনো সমস্যা হয়নি সিবিআর (12.66 Nm available at 8500 rpm) দেখলাম ভালোই কষ্ট করছে খাড়া পাহাড়ে উঠতে।

কেওক্রাডং এর আগের পাড়ার নাম দার্জিলিং পাড়া। সেখানে লেবুর শরবত খেয়ে সোজা কেওক্রাডং। তারপর আর্মিদের রিকোয়েস্ট করে সোজা কেওক্রাডং এর চুড়ায়। ঘড়িতে তখন পুরো বারোটা।

Boga to keokradong

কেওক্রাডং থেকে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ভালোই লাগছিলো। কিন্তু ঢাকা ব্যাক করার চিন্তায় বেশী সময় থাকতে পারিনি। আর তিনটার মধ্যে রুমা ক্রস না করলে আবার আর্মি যেতে দিবে না তাই সন্ধ্যায় বান্দারবান ব্যাক করে বাইক ওয়াস করতে করতে লাঞ্চ করে রাত আটটায় চট্টগ্রাম।

কিছু সাজেশনঃ

১। রবি অথবা টেলিটক এর সিম লাগবে যদি নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক চান।

২। গাইড আগে থেকে ঠিক করে গেলে ভালো। গাইড হিসেবে মিন্টু (01852453582)খুব ফেমাস কারন সে গাইড আবার বাইক রাইডার আবার বাইক মেকানিক। আপনি যদি বাইক রাইড না করতে চান তাকে দিতে পারেন আপনার বাইক।

৩। পাহাড়ে উঠার আগে চাকার হাওয়া কমিয়ে নিতে হবে।

৪। ট্যাঙ্ক ফুল করে যাওয়ার দরকার নেই। বান্দারবানে পাম্প আছে তাই বান্দারবান থেকে কেওক্রাডং যাওয়া আসা করতে যতটুকু ফুয়েল লাগবে তটটুকু ফুয়েল নিবেন।

৫। ব্যাগ বেশী ভারী করার দরকার নেই, চাইলে রুমায় ব্যাগ রেখে যেতে পারেন।

৬। গ্রুপ রাইড করলে সামনের রাইডারদের সাথে অনেক ডিসটেনস রাখবেন।

৭। যেই বাইকের টর্ক ভালো সেই বাইক নিলে বেশী ভালো হয়। 4V, হর্নেট, জিক্সার কিট ছাড়া বাইক হলে রাইড করে মজা পাবেন।

৮। কিছু কিছু যায়গায় গাইডকে নামিয়ে দিয়ে গাইডকে দিয়ে বাইক ঠেলে নেওয়া ভালো।

৯। যতো বেশী সেফটি গিয়ার পরবেন তত বেশী সেফ থাকবেন।

১০। সাথে চকলেট নিতে পারেন লাঞ্চের জন্য সময় নষ্ট না করে।

১১। অনেক সময় চোখে পোকা পড়ে তাই একটা চোখের ড্রপ আর প্রয়োজনীয় মেডিসিন নিতে পারেন।

১২। বাইকের ব্রেকসু নতুন না থাকলে এক্সট্রা নিয়ে যেতে পারেন সাথে ক্লাচ ক্যাবল আর এক্সিলেটর ক্যাবল।

লিখেছেনঃ Mohammad Shadiqullah