মূলত সেলস, সার্ভিস এবং স্পেয়ার পার্টস এই তিন “S”-এর সমন্বয় গঠিত একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানকে 3s বলা হয়েছে। বিগত ১৩ই মে, ২০১৮ তে বাংলাদেশে ইয়ামাহার সোল ডিস্ট্রিবিউটর এস,সি,আই মোটরস লিমিটেডের নিজস্ব উদ্দ্যোগে তেজগাঁও বানিজ্যিক এলাকাতে গড়ে উঠেছে একটি পরিকল্পিত সেলস এবং সার্ভিসিং পয়েন্ট যার নামকরণ করা হয়েছে “Yamaha Flagship 3s Center”.

যদিও সারা দেশে প্রায় ৪০টিরও অধিক ইয়ামাহার ডিলার পয়েন্ট রয়েছে যেখানে সেলস, সার্ভিস এবং স্পেয়ার পার্টসের সমন্বয় রয়েছে। কিন্তু ইয়ামাহা মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের বাড়তি কিছুটা সুযোগ সুবিধা এবং বাংলাদেশে ইয়ামাহার ব্রান্ডকে আরো কিছুটা এগিয়ে নিতে এই উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে ৮৪০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে বৃহৎ পরিসরে নির্মিত এই থ্রি-এস সেন্টারে রয়েছে ইয়ামাহা ব্রান্ডের সব বাইক এবং হেলমেট ডিসপ্লে সমৃদ্ধ শো-রুম, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেকানিক এবং ইঞ্জিনিয়ার, স্পেয়ার পার্টসের মজুত, আধুনিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটারাইজড সার্ভিস সিস্টেম, কাস্টমারদের জন্য ওয়েটিং রুম, ক্যাফে ইত্যাদি।

- সময়ঃ সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা
- দিনঃ সোমবার থেকে শনিবার
- ঠিকানাঃ ২১২, তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া, তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোড (নিকেতন ৩ নং গেট)
- যোগাযোগঃ ০১৭০৪১২৩৮২১
গত ১৭ই জুলাই ২০১৮-তে আমরা টিম দেশি-বাইকার ভিজিট করেছি ইয়ামাহার এই থ্রি-এস সেন্টারটি। আজ আপনাদের যাবতীয় তথ্য (ছবিসহ) দেয়ার চেষ্টা করব।
ইয়ামাহা থ্রি-এস সেন্টারটিতে ঢুকতেই পাবেন সব বাইকের ডিসপ্লে সমৃদ্ধ একটি শো-রুম এবং অপরটিতে রয়েছে ইয়ামাহার নিজস্ব ব্রান্ডের হেলমেটের কালেকশন। অন্যান্য ডিলার পয়েন্টের ন্যায় একই দামে বাইক, হেলমেট এবং স্পেয়ার পার্টস ক্রয় করা যাবে এখান থেকে। এর পরেই সু-প্রসস্ত সার্ভিসিং সেন্টার যেখানে একই সাথে ১৯টি বাইক মেরামত করা যায়। কাস্টমার সার্ভিস রুম, ওয়েটিং হল, ক্যাফেটেরিয়া, বাইক ওয়াস গ্যারেজ এবং সব শেষে স্পেয়ার পার্টস সেলস পয়েন্ট। সব মিলিয়ে বেশ চাকচিক্যময় আর সুসজ্জিত একটি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট।
প্রতি সপ্তাহের রবিবার ব্যতিত এই প্রতিষ্ঠানটি খোলা থাকে। সার্ভিসিংয়ের জন্য একজন বাইকারকে প্রথমেই কাস্টমার কেয়ার রুম থেকে “জব কার্ড” নিয়ে বাইকটির ত্রুটি সহ মেকানিককে বুঝিয়ে দিতে হবে। সার্ভিসিংয়ের জন্য আনুমানিক কত সময় লাগতে পারে তা একটি মনিটরে দেখা যাবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়েটিং রুমে বিনোদনের জন্য রয়েছে টিভি, নিউজপেপার, মেগাজিন, ফ্রি ওয়াই-ফাই ইত্যাদি। জব কার্ডের সাথে থাকা টোকেন জমা দিয়ে ফ্রি কফি উপভোগের সুযোগও রয়েছে।
ইয়ামাহা ট্রেনিং একাডেমী, গাজিপুর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ মেকানিকদের দ্বারা সার্ভিসিং পরিচালিত হয়। প্রতিটি “বে” কিংবা মেকানিকের জন্য রয়েছে ফুল সেট মেরামতকারী যন্ত্রপাতি। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এই সার্ভিস সেন্টারটিতে রয়েছে ৩টি ফুয়েল ইঞ্জেক্টর ক্লিনার, ২টি স্পার্ক প্লাগ ক্লিনার, ২টি ব্যাটারী চার্জার (যা দ্বারা একই সাথে ৬+৬=১২টি ব্যাটারী চার্জ করা যায়), পর্যাপ্ত পরিমান কম্পিউটারাইজস ইয়ামাহা ডায়াগনস্টিক টুল (YDT), ২টি ওয়াশিং পাম্প এবং সব ধরনের স্পেশাল টুলস। ইঞ্জিনের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে বাড়তি জায়গা।

ইয়ামাহার সার্ভিসিংয়ে যে জিনিসটি নতুন মাত্রা প্রদান করেছে সেটি হচ্ছে “Yamaha Diagnostic Tool (YDT)”. “YDT”-মূলত একটি মেশিন ল্যাগুয়েজ বেজড সফটওয়্যার যেটি মোটরসাইকেলের সেন্সরের সাথে যুক্ত করে চালু করলে প্রায় ৮-১০ ধরনের ত্রুটি নির্ণয় করা যায় যেগুলো হচ্ছে ইঞ্জেকশন ডিউরেশন, ইগ্নিশন টাইমিং, ইঞ্জিন টেম্পারেচার বা কুলেন্ট টেম্পারেচার, ও-টু সেন্সর ১ ভোল্টেজ, ইন্টেক এয়ার টেম্পারেচার, ইন্টেক এয়ার প্রেসার সেন্সর ১, থ্রটল পজিশন সেন্সর ভোল্টেজ, এটমোস্ফেরিক প্রেসার সেন্সর, ব্যাটারী ভোল্টেজ, ইঞ্জিন স্পীড (আর,পি,এম) ইত্যাদি। সাধারণত এই ত্রুটিগুলো ডায়াগনসিস করা একজন মেকানিকের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য আর সময় সাপেক্ষ। তাই এই আধুনিক টেকনোলজিতে প্রস্তুসকৃত এই ইয়ামাহা ডায়াগনস্টিক টুল প্রশংসার দাবি রাখে।
একটি বিষয় বলে রাখা ভাল, ইয়ামাহা থ্রি-এস সেন্টার ছাড়াও সকল ইয়ামাহার ডিলার পয়েন্টে মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের জন্য এই ডায়াগনস্টিক টুল রয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্যান্য মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলোর সার্ভিসিংয়ে এই জাতীয় কম্পিউটারাইজড টুলস ব্যবহার করা হয় না।
মোটরসাইকেলের যাবতীয় ত্রুটি পর্যালোচনার জন্য রয়েছে ডিসকাশন রুম। সার্ভিসিংয়ের পর একজন মোটরসাইকেলিস্ট কতটুকু সন্তুস্ট তার উপর দিতে পারবে কাস্টমার ফিডব্যাক।
ইয়ামাহা বাইক আরোহীদের যাতে সার্ভিসিং নিয়ে কোন ধরনের আপত্তি তৈরী না হয়, যে কোন মেজর ত্রুটি দেখা দিলে যাতে তার সমাধান মেলে, বাইকারদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ইয়ামাহার এই উদ্দ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।