সফরে থাকা অবস্থায় নামাজের নিয়ম (কসরের নামাজ)

সফরের সময় ৪ রাকাত ফরয (যোহর+আসর+ইশা) নামায ২ রাকাত পড়তে হয়, কিন্তু ২/৩ রাকাত ফরয নামায ২/৩ রাকাতই পড়তে হয়। একে নামায “কসর” বা সংক্ষিপ্ত করা বলা হয়।

আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সফরে থাকা অবস্থায় ৫ ওয়াক্তের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নত নামাযগুলো পড়তেন না, ফযরের ২ রাকাত সুন্নত আর বিতির নামায ছাড়া। তাই আমাদেরও উচিত হবেনা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা করেন নি সেটা করা।

আর সফরে থাকা অবস্থায় তাড়া থাকলে বা অসুবিধা থাকলে যোহর+আসর এই দুই ওয়াক্তের নামায যে কোনো এক ওয়াক্তে এক সাথে পড়া যায়। অর্থাৎ যুহরের ওয়াক্ত হলে যুহর পড়ে আসর নামাযকে এগিয়ে নিয়ে এসে যুহর ও আসর এক সাথে পড়া যায় অথবা, আসরের ওয়াক্তে যুহরকে পিছিয়ে দিয়ে যুহর ও আসর একসাথে পড়া যায়। অনুরূপ করা যায়, মাগরিব ও ইশা এই দুই ওয়াক্তের নামায যে কোনো এক ওয়াক্তে একসাথে পড়া যায়। একে নামায “জমা করা” বলে।

উল্লেখ্য, নামায এক সাথে পড়ার যে নিয়ম বর্ণনা করা হলো এর বাইরে করা যাবেনা, যেমন ফযর+যোহর অথবা আসর+মাগরিব এক সাথে করা যাবেনা।

এছাড়া কেউ ইচ্ছা করলে নফল নামায পড়তে পারবেন, তবে সুন্নত নামাযের নিয়তে না। বা এটা মনে করা যাবেনা যে নামায কম পড়ছি বাঁ সুন্নত নামায পড়ছিনা তাই নফল পড়ে পূরণ করে দেই। কারণ, এই নামাযের নিয়ম আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার, তাই বাড়িতে থাকতে যে যত রাকাত নামায পড়ে অভ্যস্ত আল্লাহ তার সমপরিমান নামাযের সওয়াবই দিবেন – সুবহা’নাল্লাহ!

দলীল জানতে চাইলে দেখুনঃ সুরা নিসাঃ ১০১, বুখারী ও মুসলিম – মিশকাতঃ ১৩৩৬।
সহীহ আল-বুখারীর সালাত অধ্যায়ের নামায সংক্ষিপ্ত করার অনুচ্ছেদ দেখুন, সবগুলো হাদীস পেয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে আরো কতিপয় প্রশ্ন এসেছে, যা জানা জরুরি —–

প্রশ্নঃ দুই ওয়াক্তের নামায এক সাথে জমা করে পড়ার নিয়ম কি?
উত্তরঃ এক ওয়াক্তের দুই রাকাত নামযের নিয়ত করে (যোহর) নামায পড়বেন/তিন রাকাতের নিয়ত করে (মাগরিবের) নামায পড়ে সালাম ফিরাবেন। পরের ওয়াক্তের (আসর/ইশা, যেই সময়ের জন্য যেটা) নামাযের নিয়ত করে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবেন। কেউ চাইলে দুই ওয়াক্তের নামাযের জন্য আলাদা আলাদা আযান ও ইকামত দিতে পারেন, এটা করা সুন্নত। আযান, ইকামত না দিয়েও নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। তবে দুইজন বা তার বেশি মানুষ থাকলে যদি সুযোগ থাকে তাহলে আযান ও ইকামত দিয়ে জামাতে নামায পড়তে হবে।

প্রশ্নঃ সফরে কত দূরে গেলে কসর করতে পারবেন?
উত্তরঃ ১-৪৮ মাইল পর্যন্ত প্রায় ২০টি মত রয়েছে। তবে কুরান-হাদীসে নির্দিষ্ট কোনো দূরত্ব নির্ধারণ করা হয় নাই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নত থেকে বুঝা যায়, সফর হিসেবে গণ্য করা যায় এমন সফরে বের হলে একজন মুসাফির যদি নিজ শহর থেকে বাইরে বের হয় তাহলেই তিনি কসর করতে পারবেন। নিজ শহর থেকে বের হওয়ার আগের দূরত্বে তার জন্য কসর করা বৈধ নয়।

প্রশ্নঃ সফরে সর্বোচ্চ কতদিন কসর করতে পারবে?
উত্তরঃ সর্বোচ্চ ১৯ দিন। তবে যদি অনির্দিষ্ট থাকে সফরের মেয়াদকাল নিয়ে, তাহলে এইরকম সিদ্ধান্তহীনতায় ১৯ দিনের বেশিও কসর পড়তে পারবেন।

প্রশ্নঃ জামাতে নামায পড়লে কসর করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যা করা যাবে, যদি ইমামও মুসাফির হন। সেক্ষেত্রে ইমাম আগে বলে দিবেন তিনি মুসাফির, যারা মুসাফির না তারা দুই রাকাতের পর ইমাম সালাম ফিরালে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত আরো দুই রাকাত পড়ে চার রাকাত পূর্ণ করে নিবেন। কিন্তু মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের পেছনে নামায পড়েন, তাহলে তিনি ইমামের সাথে পূর্ণ চার রাকাত পড়বেন, কারণ ইমামকে অনুসরণ করা তার জন্য ওয়াজিব।

প্রশ্নঃ অনেকে হোস্টেলে বা বাড়ীর বাইরে থাকেন, তারা ১-২ সপ্তাহের জন্য বাড়িতে আসলে কি কসর পড়বেন নাকি পূর্ণ নামায পড়বেন?
উত্তরঃ তারা রাস্তায় সফরে থাকা অবস্থায় কসর পড়বেন, কিন্তু বাড়ীতে চলে আসার পর পূর্ণ নামায পড়বেন। কারণ তিনি তার পরিবারের কাছে চলে এসেছেন।

প্রশ্নঃ মুসাফির কি তারাবীহর নামায পড়তে পারবেন?
উত্তরঃ হ্যা, পড়তে পারবেন। কারণ তারাবীহ পড়া একদিক থেকে সুন্নত (কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পড়েছেন) আবার অন্য দিক থেকে নফল (ফরয সালাতের পরে অতিরিক্ত) আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সফরে থাকা অবস্থায় সুন্নত নামায না পড়লেও তারাবীহ/তাহাজ্জুদ/নফল নামায ঠিকই পড়তেন।

প্রশ্নঃ কারো ইচ্ছা হলে কি কসরের দুই রাকাত নামায না পড়ে পূর্ণ চার রাকাত ও ওয়াক্তের সুন্নত নামাযগুলো পড়তে পারবেন?
উত্তরঃ সফরে থাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চার রাকাতের ফরয নামায দুই রাকাত পড়তেন, আর কোনো সুন্নত নামায পড়তেন না, ফযরের দুই রাকাত সুন্নত ও বিতির ছাড়া। এটা করা আমাদের জন্য সুন্নত। যে এইগুলো করবেনা সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নতকে অপছন্দ করলো ও এর বিরোধীতা করলো। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

প্রশ্নঃ সফরে কি নামায জমা করে দুই ওয়াক্ত এক সাথে পড়তেই হবে?
উত্তরঃ কারো ইচ্ছা হলে সে সফরে দুই ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়তে পারে। কিন্তু সফরে থাকা অবস্থায় যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায পড়তে কোনো অসুবিধা না হয় তাহলে সে ইচ্ছা করলে জমা করতে পারে, আবার ওয়াক্ত অনুযায়ী সময় মতোও পড়তে পারে। এক্ষেত্রে তার উচিত হবে জমা না করে ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায পড়া। অর্থাৎ, যখন সুযোগ থাকবে তখন সময় অনুযায়ী নামায পড়বেন (কিন্তু ২ রাকাত ঠিকই থাকবে), আর অসুবিধা হলে জমা করবেন।

প্রশ্নঃ সফরে থাকা অবস্থায় কি জামাতে নামায পড়া ওয়াজিব?
উত্তরঃ যদি সহজ সাধ্য হয় তাহলে জামাতে নামায পড়া ওয়াজিব, আর যদি অসুবিধা থাকে তাহলে একা একা নামায পড়ে নিবেন।

প্রশ্নঃ সফরে নফল নামায পড়া যাবে?
উত্তরঃ হ্যা যাবে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সফরে নফল নামায পড়তেন। কিন্তু এমনটা করা যাবেনা, আচ্ছা সুন্নত পড়ছিনা বা ৪ রাকাতের জায়গায় দুই রাকাত পড়ছি, বা নামায একটু কম পড়ছি সুতরাং নফল পড়ে তার সমান করে নেই। না এরকম ধারণা করা যাবেনা কারণ ৪ রাকাতের জায়গায় দুই রাকাত, আর সুন্নত নামায না পড়েই সে নিয়মিত যা পড়তো তার সমানই সওয়াব পাবে। তবে, কেউ যদি এমনিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বা সওয়াবের আশায় নফল পড়ে, সে পড়তে পারবে।

প্রশ্নঃ যারা নিয়মিত বা প্রতিদিন সফর করেন (যেমন বাস বা বিমান চালক) তারা কি কসর ও জমা করতে পারবেন?
উত্তরঃ হ্যা পারবেন, এমনকি যদি তারা প্রতিদিন সফরও করে থাকেন না কেনো। তবে শর্ত হলো, নিজ শহরের বাইরে যাওয়ার পর থেকেই তিনি কসর করতে পারবেন।

উত্তর প্রদানে ~~~~~
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Related Posts

error: Content is protected !!