দিনকে দিন আমাদের দেশে ভ্রমণ পিপাসু মোটরসাইকেলিস্টদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোটরসাইকেলে বেড়ানো এখন একটা ট্রেন্ড পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাইকাররা এতেই পরিতৃপ্ত নয়। ইতোঃমধ্যে আমাদের দেশের অনেক মোটরসাইকেলিস্ট নিজ বাইকে ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, ভূটান। অনেকের মাঝে এখন ইচ্ছে সারা বিশ্ব ভ্রমণের। আসুন দেখে যাক নিজ মোটরসাইকেলে বিদেশ ভ্রমণের প্রসেসগুলো।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিটঃ
আপনার অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং পাসপোর্ট থাকতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিটের জন্য এপ্লাই করা যাবে। ফর্মটি এই লিঙ্কে গিয়ে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। ফর্মটি পূরণ করার সাথে আপনার যা যা ডকুমেন্ট লাগবে তা হল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজ এবং ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। এবং ২৫০০ টাকা জমা দিতে হবে এই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিটের জন্য।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রসেস করে থাকে বাংলাদেশ অটো-মোবাইল এসোসিয়েশন। যাদের অফিসিয়াল এড্রেস নিচে দেয়া হল।
বাংলাদেশে অটোমোবাইল এসোসিয়েশন
৩বি, আউটার সার্কুলার রোড, মগবাজার
ঢাকা – ১২১৭
(আগোরা শপিং সেন্টারের বিপরীতে)
সাধারণত এই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট প্রসেস করতে তারা ১২ কার্যদিবস সময় নিয়ে থাকে। তাই ২ সপ্তাহের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
ভিসা এবং পাসপোর্টঃ
যেহেতু আপনি অন্য দেশে যাচ্ছেন সুতরাং পাসপোর্ট এবং যে দেশে যাচ্ছেন তার জন্য ভিসা থাকতে হবে। আগে ভাগে প্রসেস করে রাখতে পারলে অন্তিম মূহুর্তে কাজগুলো সহজ হয়ে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমতিপত্রঃ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি এপ্লিকেশন করতে হবে। সাথে বেশ কিছু ডকুমেন্ট যেমন ভিসা, পাসপোর্ট, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন পেপার, ইন্স্যুরেন্স, স্মার্টকার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট ইত্যাদির ফটোকপি এবং ছবিসহ জমা দিতে হবে। রাজস্ব বোর্ডের অনুমতিপত্র পেতে ২ সপ্তাহের মত সময় লেগে যেতে পারে। এই অনুমতি জন্য কোন টাকা লাগে না। অনুমতিপত্রের একটি কপি আপনার কাছে থাকবে এবং একটি বর্ডারে কাস্টস অফিসে জমা করতে হবে। এর পরের ধাপে কারনেটের জন্য আপনাকে এই কপি নিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশ অটোমোবাইল এসোসিয়েশনে।
কারনেট, মোটরসাইকেল/গাড়ির মূল্যের সম পরিমান ব্যাংক গ্যারান্টি/পে-অর্ডার জমা (ফেরতযোগ্য)ঃ
সহজভাবে যদি বলি, কারনেট হচ্ছে কোন একটি দেশে যানবাহন চালানোর অনুমতি। যেহেতু আপনি অন্য দেশে গিয়ে আপনার মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি চালাবেন তাই এটি সব সময় আপনার সাথে রাখতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতিপত্র বাংলাদেশে অটোমোবাইল এসোসিয়েশনে গিয়ে দেখালে ওরা বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আপনাকে সহায়তা করবে। কারনেট ইস্যু করার সময় আপনার বাইক/গাড়ির মূল্যের সমপরিমাণ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি কিংবা পে-অর্ডার জমা দিতে হবে যা ফেরতযোগ্য। তবে এই জায়গায় তাদের সাথে কথা বলে কিছুটা কমিয়ে নিতে পারেন টাকার পরিমাণ। সাধারণত আপনার বাইকটি একটি ব্যবহৃত পণ্য হিসেবে তার বর্তমান দাম কেমন হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে কিংবা তার থেকেও কিছুটা কম পরিমান টাকা ধার্য করা হয়। এছাড়া কারনেট ইস্যু করার জন্য সাধারণত সাড়ে বার হাজার টাকা লাগে।
মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ির সুল্কের সম পরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টি কাস্টমসে জমা (ফেরতযোগ্য)ঃ
আপনার মোটরসাইকেলটি কেনার সময় কোম্পানীকে কি পরিমাণ কর দিতে হয় তা জেনে নিতে হবে কিংবা রাজস্ব বোর্ড থেকে জেনে নিতে পারেন আপনার বাইকের জন্য কত পরিমান ব্যাংক গ্যারান্টি বর্ডারে কাস্টমসে জমা দিতে হবে। আপনি কোন বর্ডার পাস করবেন তার বিবরণ অনুমতিপত্র পাওয়ার আবেদনে উল্ল্যেখ করতে হবে।
আপনার যাবতীয় পেপারসের কাজ শেষ। যেদিন ভ্রমণে বের হবেন, সেদিন সকাল সকাল বর্ডারে চলে যাবে কারণ সেখানে হয়তো আপনার ২-৩ ঘন্টা লেগে যাবে সব প্রোসেস হতে।
বর্ডারে গিয়ে ৩০০ টাকার ইন্ডেমনিটি বন্ড এবং আপনার গাড়ির জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমতি পত্র দেখিয়ে কমিশনারের অফিসে জমা দিন। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলে কাস্টমস অফিসে এসিস্টেন্ট রেভিনিউ অফিসার (ARO) এর নিকট কারনেটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিলে ওনারা বাকি সব প্রসেস করবে। এবার ভারতের বর্ডারে গিয়ে কাস্টমস অফিসে বাকি সব কার্যাবলি সেরে ফেলুন।
ঘুরে এসে কাস্টমস অফিস থেকে গাড়ির সমপরিমাণ মূল্যের ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত নিতে ভূলবেন না। আর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ অটোমোবাইল এসোসিয়েশনে কারনেটের কপি জমা দিলে ওরা বাইকের সমমূল্যের সমপরিমাণ যে টাকা জমা দিয়েছিলেন তা ফেরত দিয়ে দিবে।
আসলে পথে নামলেই পথ চেনা যায়। বিষয়গুলো শুনে আপনাদের কাছে খুব কষ্টসাধ্য মনে হলেও। আসলে বিষয়গুলো খুব একটা জটিল নয়। শুধু সময় আর ধৈর্য্য নিয়ে কাজগুলো করে ফেললেই হল।
আপনার যাত্রা শুভ হোক।
লিখেছেনঃ GRz Piyash (ফাউন্ডার – BD Ghost Riderz)
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.