Bajaj Pulsar 150 SD ২৩ হাজার কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- জুবায়ের আহমেদ)

আমি জুবায়ের আহমেদ। আমি চট্টগ্রামের একজন ছেলে। চট্টগ্রামের, পতেঙ্গা, পূর্ব কাটগর এলাকায় আমি বসবাস করি।
আজ আমি আমার জীবনের প্রথম বাইকের কিছু রিভিউ এবং আমার বাইকের কিছু ভালো দিক এবং খারাপ দিক গুলোর বর্ণনা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি, ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে এবং উপস্তিত বিদ্যমান রয়েছে যার নাম “Bajaj Pulsar 150 SD”২০১৭ এডিশন.
“Bajaj Pulsar” বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় একটি ব্রান্ড। যার জন্যে আমার মনের মধ্যে একটি শখ জন্মেছিলো “Bajaj Pulsar” বাইক চালাবো। সেই শখ থেকেই আমার রাইডিং যাত্রা শুরু হয়। আমার বাইকটি বর্তমানে ২৩ হাজার কিলোমিটার চলেছে।  

আমার বড় ভাইয়ের বাইক ছিলো বিধায় ছোটবেলা থেকেই একরকম বাইকের প্রতি আমার আকৃষ্ট জন্মেছিলো। পাড়ার বড় ভাইরা বাইক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর করতো, যা আমাকে বাইকের প্রতি আরো আকৃষ্ট করে তুলে। সে থেকেই আমার বাইক কেনার প্রতি দীর্ঘ ক্ষোভ জমতে থাকে। বাইক ভালোবাসার কারণ হয়তো শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি বাইক মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। বাইক আমার মন – মানসিকতা সতেজ রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বাইক প্রকৃতির খুব কাছে নিয়ে যেতে পারে। যার কারণেই বাইক চালানো কিংবা বাইকিং আমি ভালোবেসে ফেলেছি। 

আমি ২০১৬ থেকে বাইক চালানো শুরু করি আমার ভাইয়ের বাইকটি দিয়ে। সে সময় “Bajaj Pulsar” ব্রান্ডটি খুব জনপ্রিয় ছিলো এবং বর্তমানেও তা খুব জনপ্রিয়। আমার সামর্থ্য / বাজেট এর মধ্যে “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকটি কেনা খুব পারফেক্ট ছিলো এবং “Bajaj Pulsar” ব্রান্ড এর মধ্যে “Bajaj Pulsar 150 SD ” বাইকটি খুব ভালো মানের বাইক হিসেবে আমার কাছে বিবেচিত হয়েছিলো। যার ফলে আমি “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকটি কিনেছি।

আমার “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকটি  150 সিসি একটি বাইক ।  এটির রয়েছে শক্তিশালী 150 সিসি DTSI Twin Spark DSIV complain  4-stroke, 2 valve এর DTS-i ইঞ্জিন। তাছাড়া আমি আমার  বাইকটি এখন পর্যন্ত 4 বার সার্ভিস করিয়েছি। বাজাজ এর অথরাইজ সেন্টার থেকে সার্ভিসিং করিয়েছি। আমি বাইকে ১ লিটার অকটেন দিয়ে ৩৫-৩৭ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়ে থাকি। বাইকটি ২৩ হাজার কিলোমিটার চলার কারণে এখন মাইলেজ কিছুটা কম পাচ্ছি হয়তো। এতসব কিছু চিন্তাভাবনা করেই আমি আমার “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকটি বেছে নিয়েছি।

বাইকটির দাম বর্তমানে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাইকটি সাধারণত আমার খালাতো ভাই বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন আগে উত্তরা মটরস, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম থেকে কিনেছিলেন নিজের ব্যবহারের জন্য। কিন্ত সে বিদেশ চলে যাবে বিধায় সে ১ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করার পরপরই সে আমার কাছে বাইকটি ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করে।

নতুন বাইক কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এমতাবস্থায় আমার খালাতো ভাই বিদেশ যাওয়ার সুবাদে বাইক বিক্রি করার প্রস্তাব আমাকে জানায়। তার বাইক বিক্রির প্রস্তাবটি আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং পরিবারের সকলের সম্মতিতে আমাকে তার বাইকটি কিনে দেয়। সব কিছু আত্মীয়দের মধ্যে হওয়ায় তেমন কিছু ঘটেনি ওইদিন। তবে ওইদিনটি আমার জীবনের এক অন্যতম মহাখুশির দিন ছিলো।

আমার আপন বড় ভাইয়ে “Bajaj Pulsar” বাইক ছিলো বিধায় আমি তার বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখেছি। মোটামুটি আগে থেকে বাইক চালানো পারতাম বিধায় আমার বাইক চালাতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় নিই। তবে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে বাইক সম্পর্কে।
নিজের বাইক প্রথবার চালানো অনুভুতিটা হয়তো আমি ভাষায় কিংবা শব্দে প্রকাশ করতে পারবো না। কারণ সেই অনুভুতি কিংবা সেই বাইকের প্রতি ভালোবাসা আসলে লিখে কিংবা মুখে বলে বুঝানো সম্ভব না। সেই অনুভুতি তারাই বুঝবে যারা জীবনের প্রথম বাইক প্রথমবার চালিয়েছে।

আমার বাবার ব্যবসা থাকার সুবাদে আমাকে আমার ব্যবসা দেখাশোনা করতে হয়। যার কারণে বাইকটি ব্যবহার করা হয়। তবে আমি সময় পেলেই আমি বিভিন্ন ট্যুরে এবং ট্রাভেলিং  এ বেড়িয়ে পড়ি। আমি সাধারণত বছর দুই-এক ট্রাভেলিং কিংবা ট্যুর করছি এবং Long রাইড করছি। অতএব,  আমার কাছে আমার বাইক চালানোর প্রধান কারণ আমার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করা এবং আরেকটি কারণ হচ্ছে ট্যুর, ট্রাভেলিং এবং লং রাইড করা।

Bajaj Pulsar 150 DD বাইকটির কিছু ভালো দিক-

১.বাইকটি দেখতে অসাধারণ লাগে আমার কাছে।
২.সিটিং পজিশন আমার কাছে  বেশ কম্ফোর্টেবল মনে হয়। কারণ ব্যাক পেইন হয় না একটানা ১৫০/২০০ কিলোমিটার চালানোর পর বিরতি দিয়েছি। কিন্ত তেমন কোমড়ে ব্যথ্যা অনুভব হয়নিই।
৩.উভয় সাসপেনশন অফরোডেও বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
৪.সামনে পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ৯০ সেকশন এবং ১১০ সেকশন এর টায়ার। তবে আমি চেঞ্জ করে পরবর্তীতে পিছনের চাকা ১২০ সেকশনের লাগাইয়েছি যা ব্রেকিং লেভেল কিছুটা বাড়িয়েছে।
৫. বাইকটির কন্ট্রোলিং খুব ভালো মানের। পার্টসগুলোর মূল্য মাত্রাও অন্যান্য বাইকের পার্টসের তুলনায় খুব সীমিত।

Bajaj Pulsar 150 DD বাইকটির কিছু খারাপ দিক-

১.পিছনের চাকার ব্রেক ডিস্ক নাই বাট হার্ড ব্রেক করলে পিছনের চাকা মোটামুটি স্লিপ করে। আমি সামনে পেছনে একসাথে ব্রেক করায় অভ্যস্ত তারপর কয়েকবার স্লিপ করেছে এখন চাকা ১২০ সেকশনের লাগানোতে  তেমন স্লিপ করে না তারপরও মাঝেমধ্যে করে!
কিন্তু বৃষ্টিতে হালকা হালকা ব্রেক করা লাগে আমার। তারপরও দুই একবার ধাক্কা খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ অভ্যস্ত হয়ে গেছি। 
২. বাইকটি একটানা ৭০ থেকে ৮০ কিলো চালালে ইঞ্জিনের সাউন্ড কেমন যেনো ফাটা ফাটা  হয়ে যায় তবে একদম ঠান্ডা হওয়ার পর Start দিলে আবার ঠিক থাকে অর্থাৎ অটো আর পি এম বেড়ে যায়।
৩. CBS অথবা ABS নেই। (ব্রেকিং লেভেল কিছুটা দূর্বল।)
৪.আরপিএম মিটারটি এনালগ এবং অন্যান্য সব ফিচার ডিজিটাল মিটার দেওয়া হয়েছে।
৫. পিলিয়ন সিট সিস্টেম কম্ফোর্ট না।

আমার “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকটি আমি অনেক যত্ন করি। একদমই নতুন তাই অনেক পার্টস পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়েছে বা কিছুদিন পর হবে যেনেও পরিবর্তন করে ফেলেছি আমি এবং ২ টি চাকা ও  পিছনের সাসপেন্সন পরিবর্তন করে ফেলেছি যেহেতু লং ট্যুর করি । বাইকটি দিয়ে আমি  টপ স্পিড তোলার চেষ্টা না করলেও মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েতে ট্যুর করতে গিয়ে টপ স্পিড ১২২ পেয়েছি হয়তো আরও কিছু উঠতো বাট রিস্ক নেই নিই। বাইকটি নিয়ে ছোট/বড় অনেক ট্যুর করেছি ইনশাআল্লাহ আরো অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে। তবে কোনো ট্যুরে “Bajaj Pulsar 150 SD” আমাকে নিরাশ করে নিই বরং প্রত্যেকটা ট্যুর আমাকে সুন্দর ভাবে উপহার দিয়েছে।

আসলে আমার প্রত্যেকদিনই বাইক চালানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে। রাতে যখন বাসায় ফেরা হয় তখন বাবা কে পিছনে নিয়ে বাসায় আসা হয়। বাবা কে নিয়ে বাসায় ফেরার অনুভূতি অনেক অসাধারণ।  অনুভূতি গুলো অনেকটা অদৃশ্য, ভাষাহীন, বাক্যহীন, শব্দহীন হয়ে থাকে। আমার কাছে আমার বাইক মানে ভালোবাসা, আমার বাইক মানে অনুভুতি।

আগে বিভিন্ন কোম্পানির ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি কিন্ত ৬ মাস যাবত মটুল এর সেমি সিন্থেটিক ব্যবহার করে আসছি। খুব ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে আমাকে।

২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি মাইলেজ পেয়েছিলাম ৩৯-৪০ কিলোমিটার কিন্ত পরে মাইলেজ পেয়েছি ৩৬-৩৮ কিন্ত এখন ২৩ হাজার কিলোমিটার চলেছে বিধায় মাইলেজ ৩৫-৩৭ পেয়ে থাকি।

০৪.০২.২০২১ তারিখে আমি সকাল ৬ টা বাজে চট্টগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে চকরিয়া দিয়ে আলীকদম ডিমপাহাড় – থানচির উপর দিয়ে বান্দরবান গিয়ে পৌছাই  বিকাল ৪.৩০ মিনিটে এবং দুপুরের খাবার খেয়ে বান্দরবান শহর থেকে চন্দ্রঘোনা দিয়ে রাংগুনিয়া হয়ে চট্টগ্রাম আসি রাত ০৯ টা বাজে। এই একদিনের লং ট্যূরে “Bajaj pulsar 150 SD” একটুও নিরাশ করে নিই। সবদিকেই আমাকে ভালো পারফরম্যান্স দিয়েছে।

বাইকটি রাইড করে, ব্যবহার করে, ট্যুর করে সব দিকেই আমার কাছে Comfortable মনে হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সামনে আরও রাইড করার ইচ্ছা আছে। তবে খুব ইচ্ছে আছে এই “Bajaj pulsar 150 SD” নিয়েই আমি ৬৪ জেলা ট্যুর করতে বের হবো ইনশাআল্লাহ।  এক কথায় বাইকটি আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার অনুভুতি।
আমার একান্ত মতামত অনুযায়ী বলছি :-
যারা “Bajaj Pulsar 150 SD” নিতে চাচ্ছেন বা নেওয়ার জন্য ভাবছেন তাদের বলছি নিশ্চিন্তে নিয়ে নেন।কারণ “Bajaj Pulsar 150 SD” বাইকের লুক, কন্ট্রোলিং বেশ ভালো। তবে বর্তমানে  ডাবল ডিস্ক বাজারে আছে। তবে ডাবল ডিস্ক কিংবা সিংগেল ডিস্ক  কোনোটাই খারাপ না। (বাজেট অনুযায়ী কথা!)

(ভালো থাকুক সকল বাইকার ভাই- বোনরা। সকলের জন্য শুভ কামনা রইলো।)

লিখেছেন- জুবায়ের আহমেদ