লাস্ট কয়েক মাস ধরে আমি আমার বাইকে ব্যবহার করছি টোবাকি ব্র্যান্ডের সিরামিক ব্রেক প্যাড। আজকে আপনাদের সাথে এই ব্রেক প্যাডটার ইউজার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করব। শুধু তাই নয়, সিরামিক ব্রেক প্যাড ও অন্যান্য ব্রেক প্যাড নিয়েও আপনাদের সাথে আলোচনা করব। বাংলাদেশের বাজারে মূলত বাজারে তিন ধরনের ব্রেক প্যাড এভেলেবেল। যথাঃ
১) অর্গানিক ব্রেক প্যাড।
২) মেটালিক ব্রেক প্যাড।
৩) সিরামিক ব্রেক প্যাড।
আজকের আলোচনার বিষয় সিরামিক ব্রেক প্যাড। তাই সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না করলেও চলুন আপনাদেরকে হালকা করে একটু ধারণা দেইঃ
১) অর্গানিক ব্রেক প্যাডঃ যে ব্রেক প্যাড তৈরিতে অর্গানিক কম্পনেন্ট ব্যবহার করা হয় তাকে অর্গানিক ব্রেকপ্যাড বলে। এই অর্গানিক ব্রেক প্যাড গুলোতে মূলত ক্যাবলার, রাবার, কপার, ফাইবার গ্লাস, গ্লাস, স্পঞ্জ, এজবেস্টোজ, চামড়া ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই ব্রেকপ্যাড গুলো বেশ নরম ও স্পঞ্জি হয়ে থাকে। এই ব্রেক প্যাডের দাম তুলনামূলক কম এবং এটি কম টেকসই। সাইকেল, রিক্সা এবং বাইকে এই ব্রেক প্যাড টি ব্যবহার করা হতো। এক্সট্রিম টেম্পারেচারে এই ব্রেক প্যাড ভালো পারফরম্যান্স করতে পারে না। এতে থাকা এজবেস্টোজের কারণে এটি থেকে ক্ষতিকারক ডাস্ট নির্গত হয়। এই কারণেই এটি এখন কম ব্যাবহারিত হয়।
২) মেটালিক ব্রেক প্যাডঃ মেটালিক ব্রেক প্যাড তৈরিতে মূলত ৭০-৮৫% মেটাল কম্পোনেন্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন: ফিলার, মেটাল, আয়রন, কোপার, গ্রাফাইড ইত্যাদি। এই ব্রেকপ্যাড গুলো অর্গানিক ব্রেকপ্যাড এর মত সফট হয়না। তাই এই ব্রেক প্যাড ব্যবহারে ব্রেক থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়। এই ব্রেকপ্যাড গুলো তুলনামূলক বেশি গরম হয়ে যায় এবং এ থেকে ডাস্ট ক্রিয়েট হয়। যার কারনে এক্সট্রিম সিচুয়েশনে ও লং রাইডে এই ব্রেকপ্যাড গুলো খুব ভালো পারফরম্যান্স দেয় না। শুধু তাই নয় যেহেতু এতে মেটাল ব্যবহার করা হয় তাই এটি বাইকের হাইড্রোলিক ডিস্ক এর জন্য ক্ষতিকারক। তবে এই ব্রেক প্যাড গুলো বাইক এর ডিক্স খুব ভাবে ভাবে লক করে, ফলে শর্ট রাইড বা ট্রাকে খুব ভালো পারফরমেন্স দেয়।
৩) সিরামিক ব্রেক প্যাড: এই ব্রেক প্যাড তৈরিতে পট্টি, সিরামিক, মেটাল, আয়রন, কোপার ইত্যাদি ব্যবহার হয়। এতে ফাইন কপার থাকার কারনে এটি থেকে বেটার ফিকশন ও স্টোপিং পাওয়ার পাওয়া যায় এবং ব্রেক থেকে কোনো রকম সাউন্ড বের হয়না। অন্যান্য ব্রেকপ্যাডের তুলনায় এটি বেশি শক্ত ও ডিউরেবল। সিরামিক ব্রেকপ্যাডের সিরামিক এর পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এটি অধিক তাপমাত্রা সহনশীল। এক্সট্রিম তাপমাত্রা এবং এক্সট্রিম ওয়েদারে এটি থেকে ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যায়। তবে সিরামিক ব্রেকপ্যাড ব্যবহারের সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, বাইকের ডিক্স রোটেশন এর কারণে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা সিরামিক ব্রেক প্যাড অনেকাংশে শোষণ করে নেয়, অনেক সময় এই তাপ ব্রেক প্যাড থেকে ক্যালিবার, হোস পাইপ এবং ব্রেক ফ্লুয়িডে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে লঞ্চিভিটি, লং রাইড এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বাইকারদের কাছে সিরামিক ব্রেক প্যাড অধিক জনপ্রিয়।
ইউজার এক্সপেরিয়েন্সঃ
টোবাকি সিরামিক ব্রেক প্যাডটি মূলত একটি মালয়েশিয়ান অরিজিনের প্রোডাক্ট। এটি আমি লাস্ট ৬ মাস ধরে ব্যবহার করছি। এর মধ্যেই এটি দিয়ে আমি তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি রাইড করেছি। পূর্বে আমি যেহেতু সব সময় স্টক ব্রেকপ্যাড ব্যবহার করে আসছি, তাই সিরামিক ব্রেকপ্যাড ব্যবহার করাটা আমার কাছে একটি নতুন এক্সপেরিয়েন্স। প্রথম দিন থেকেই এই ব্রেকপ্যাড টি আমাকে একটা অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্স দেয়। আমার কাছে মনে হয়েছে এই ব্রেকপ্যাডটি তুলনামূলক কম সময়ে পারফেক্ট ভাবে বাইকের ডিস্ককে লক করতে পারে। ব্যাপার টা এমন, জায়গায় ধরবেন – জায়গাতে ব্রেক। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও বাইক রাইড করে এ থেকে অসাধারণ পারফরমেন্স পেয়েছি এবং এটি থেকে কোনো রকম সাউন্ড পাওয়া যায়নি। এই ব্রেকপ্যাডটি দিয়ে হিলে চালিয়ে সব থেকে বেশি মজা পেয়েছি। হিলে অতিরিক্ত ব্রেক ব্যবহার করার কারণে অনেক সময় ডিক্স ও ব্রেক প্যাড গরম হয়ে যায়, যার কারনে অনেক সময় ব্রেকপ্যাড গুলো ঠিকভাবে বাইকের ডিস্ক কে লক করতে পারে না। কিন্তু এই সিরামিক ব্রেকপ্যাড দিয়ে বাইক চালিয়ে হিলে অন্যরকম একটা কনফিডেন্স পাওয়া যায় এবং হিলে আগা গোড়াই এটি থেকে সমান পারফরম্যান্স পেয়েছি। আমি এখন পর্যন্ত ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পার করে ফেললেও ব্রেক শু টি খুব বেশি ক্ষয় হয় নাই। অন্যান্য ব্রেকপ্যাডের তুলনায় এই ব্রেকপ্যাড বেশ পুরু, এটি একদিক থেকে যেমন ভালো অন্য দিকে আমার মনে একটা সংশয় কাজ করছে যে, এটি দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে বাইকের ডিক্স ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। দেখা যাক সামনে কি হয়।
আমার কাছে মনে হয় একটি উচ্চ গতির বাইককে পারফেক্টলি কন্ট্রোল করার জন্য এই ব্রেক প্যাডটি বেস্ট একটা অপশন।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.