Yamaha FZs V2 Fi-এর মালিকানা রিভিউ লিখেছেন সোহেল রানা

আমি তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। বই খাতায় খালি বাইকের ছবি আর্ট করতাম কলম দিয়ে। এটার জন্য মার খেতাম কিন্তু আর্ট করা ছাড়তাম না। আমাদের এক স্যার ইয়ামাহা ব্রান্ডের একটা বাইক নিয়ে আসতেন। অনেক ভাল লাগতো বাইকটা। দূর থেকে যখনই দেখতাম স্যার আসতেছে তখনই দৌড়ে গিয়ে স্যার কে সালাম দিতাম। স্যারের বাইকের সাইলেন্সার দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার ঘ্রান দামি ব্রান্ডের পারফিউমকেও যেন হার মানায়। আমি বাইক মানেই বুঝতাম ইয়ামাহা। ঐ যে শুরু হলো ইয়াহামার প্রতি টান তা আজও রয়ে গেছে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে জীবনে প্রথম নিজের কষ্টের টাকায় বাইক কেনার সামর্থ অজন করলাম। ইচ্ছে ছিলো FZS কেনার কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে পারি নাই তাই RTR নিয়েছিলাম। প্রায় ১২০০০ কিলো চালানোর পরে বিক্রি করে দিলাম।  বিক্রি করার দুদিন পরেই কিনে ফেল্লাম আমার স্বপ্নের Yamaha FZS।

FZs Ownership Review by Sohel Rana

কিছু কথা : FZS ২০১৬ গুলোতে চেইন প্রবলেম ছিলো তাই অপেক্ষা করেছি কখন এই সমস্যার সমাধান হবে। যারা এই সমস্যাতে পড়েছেন এক এক করে সবাইকে ইয়ামাহা চেইন চেন্জ করে দিচ্ছে… বিষয়টা ভাল লেগেছে।
আমি ২০১৭ অক্টোবরে কেনা তাই আমাকে উক্ত ঝামেলায় পড়তে হয়নি। এখন চেইন প্রোবলেম নেই।
আমার সাধারনত লং টুর দেয়া হয় বেশি। অফিস টাইম বেশি হওয়াতে তেমন একটা চালানোর সুযোগ পাইনা। আর যেদিন সুযোগ পাই সেদিন সকালে স্ট্রাট করি আর রাতে অফ করি

FZs at Jamuna Bridge

লুকস: FZS টা দেখতে আমার কাছে টেইলর সুইফট এর মত সুন্দর লাগে। নাকি আমার চোক্ষে সমস্যা??
আরো একটা ব্যপার আছে সেটা হলো FZS এর চাকা! আই এম ইন লাভ উইথ FZS এর চাকা!! নাডুসনুডুস চাকা!! সাইলেন্সার টা গাট্টুগুট্টু মুডে থাকে সবসময়।

FZs Looks

কর্নারিং: মোটরসাইকেল হচ্ছে বিপদজনক এবং পাশাপাশি এডভেঞ্চারাস রাইড। মোটরসাইকেল রাইডিং অনেক মজার। তবে আপনি যদি আরো ভালো ভাবে বাইক রাইডিং এর আনন্দ নিতে চান, তাহলে কনারিং এর পুরো মজা নিতে হবে। বর্তমানে বাইকের পারফর্মেন্স অনেকটা এই কর্নারিং এর উপর নির্ভর করে থাকে আর তাই এই ক্ষেত্রে FZS এর চাকাগুলে বেস্ট অপশন।টায়ার সাইজ সামনে 100/80-17M/C আর পেছনে 140/60-R17M/C থাকার কারনে ভাল কর্নারিং হয় আর ভাল গ্রিপ পাওয়া যায়।

সিটিং উইথ পিলিয়ন: লং টুরের জন্য FZS বেস্ট বাইক আমার কাছে। সিটিং পজিশনটা এমন করে বানানো যে ঘন্টার পর ঘন্টা চালালেও হাত বা পিঠ ব্যাথা করে না। লং টুরের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিলিয়ন পিছনে বসে ঘুমায় যায়। কড়া ব্রেক করলে যেন তার ঘুম ভাঙ্গে

FZs V2 with Pillion

০-২৮০০ কিলোমিটার যেমন সার্ভিস পেলাম: ময়মনসিংহ শো-রুম থেকে কিনেছিলাম বাইকটা। শোরুম থেকে আমার বাসা ৬০ কিলো দূরে। কিনেই ৪০০০ Rpm এ ৬০ কিলো চালিয়ে আসলাম। AHO (অটোমেটিক হেড লাইট অন) থাকার কারনে রাস্তার লোকজন মাথায় গ্যাসটিকের ব্যাথা উঠায় দিছে! “ভাই হেড লাইট জ্বলে” “ভাই হেড লাইট জ্বলে”

প্রথম দিন থেকেই ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলেছি। প্রথমে গিয়ার সিফ্টিং অনেক হার্ড ছিলো তাই চালিয়ে মজা পাচ্ছিলাম না। বেশ কিছুদিন রাইড করার পর আস্তে আস্তে গিয়ার সিফ্টিং ইজি হয়ে গেল ।আমি একবার ইয়ামাহালুব আর তিনবার কেস্ট্রল ইউজ করেছি ব্রেকিং পিরিয়ডে। প্রত্যেকবার মবিল ফিল্টার চেন্জ করেছি। ব্রেকিং পিরিয়ড আমার ভালুকা টু ময়মনসিংহ রোডে কেটেছে। মাখন রাস্তা একটা যদি এনা ঠুস না মারে
৯৫০ কিলোতে প্রথম সাভিসিং করিয়েছি ময়মনসিংহ সাভিস সেন্টার থেকে। ২০০০ কিলোমিটার শেষ হবার পরে যিক এম-9 (ফুল সেনথেটিক) ইউজ করতেছি।

FZs V2 Review

লং ট্যুর: অল্পসময়ের ভিতরে বেশ ট্যুর দেয়া হয়েছে আমার। ময়মনসিংহ-যশোর-বেনাপোল-ফরিদপুর-যমুনা সেতু। আপনি FZS ইউজার কিন্তু লং টুরে করেন নাই তাহলে FZS এর আসল মজা পাবেন না। যদিও বড় ভাইয়েরা বলে ৫০০০ হলে FZS এর আসল মজা পাওয়া যাবে।

ব্রেকিং & কন্ট্রোলিং: প্রত্যেক বাইকারের এটা একটা মেজর বিষয়। আপনার বাইক যতই দামি হোক না ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিং ভাল না হলে ব্যাপার কেমন জানি বেমানান। যত ভাল ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিং তত চালিয়ে মজা। হাইওয়ে রাস্তায় এটার মর্ম হাড়ে হাড়ে বুঝা যায়।

FZs Fi suspension

মাইলেজ: আমি বাইক কেনার দিন ফুল ট্যাংক অকটেন ভরেছি, ৬১২ কিলো চলার পর অক্কা গেছে। লিটারে ৫১ কিলোমিটার যাওয়ার পরে আর চেক করতে যায়নি! চেক করতে ভয় লাগে। যদি পোল্টি মারে আমি ভালুকা টু ময়মনসিংহ রোডে চালিয়েছি খুব বেশি আর রাস্তা কেমন তা সবারই জানা। Fuel injection ইন্জিনের জন্য আগের F্Zs গুলো থেকে মাইলেজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

টপ স্পিড: আমি ১১৬ পর্যন্ত টপ স্পিড তুলেছি।তবে মন বলতেছে এর থেকে বেশি উঠবে। পিলিয়ন নিয়ে টপ স্পিড তোলা হয়নি।

সাউন্ড: মাঝে মাঝে মনে হয় উড়োজাহাজ স্টার্ট দিলাম। আবার মাঝে মাঝে স্যালোমেশিন। FI এর সাইন্ড নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন তবে একটা সময় পরে ঠিক হয়ে যায় শুনেছি। অপেক্ষায় থাকলাম।

খারাপ দিক: সার্ভিসিং সেন্টারে ভাল মানের টেকনিশিয়ান নেই যেটা খুব কষ্ট দেয়।পিলিয়ন নিয়ে উঁচু স্পীড বেকারে উঠালে নিচে গুতা খায়। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক কম। স্টক হেড লাইট গুলো একটু ভাল করা যায় না? যাতে স্টকের টা খুলার চিন্তা আমাদের না করতে হয়

গুরু: সব কিছুরই একটা গুরু লাগে আর এই গুরু যদি আপনার মনের মত পেয়ে যান তাহলে কথাই নেই! বাইক কেনার পর থেকে আমি Sahed Ahsan Abir ভাইয়ের সাথে সব কিছু শেয়ার করতাম। ভাইটাকে আমি সময়ে অসময়ে খুব জ্বালিয়েছি আর ভবিষ্যতে আরো বেশি জ্বালানোর প্রিপারেশন নিচ্ছি! আবির ভাই আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর সহজ করে বুঝিয়ে দিছেন। সত্যি বলতে আমার বাইকের মাখন মুডের জন্য আবির ভাই দায়ী!! লাভ ইউ ব্রাদার।

Yamaha FZs V2 Fi Owner review

শেষকথা: জীবনে প্রথম Click n Type দিয়ে এত কিছু লিখলাম আর বাইকের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লেখা। একজন গ্রুপ মেম্বার হিসেবে এটাকে দায়িত্ব মনে করেছি। ভূল কিছু লিখে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হেলমেট না নিয়ে বাইকের কাছেই যাবেন না কইলাম

 

লিখেছেন – সোহেল রানা

Related Posts

error: Content is protected !!