Yamaha FZS V2 ১৫০০০কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- বাদশা নূর সোহাগ)

Yamaha FZ-S V2 ও আমার ১ বছরের অভিজ্ঞতা-গত বছরের এই দিনে ১৭ নভেম্বর ২০১৯ সালে আমি FZ-S V2 আর্মাডা ব্লু কালার বাইক টা কিনি। যদিও সুজুকি নেয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে ইয়ামাহা নেই। বাইকটি চালিয়ে এখন পর্যন্ত আমি সম্পুর্ণ সন্তুষ্ট৷ অনেকের মত আমারো ACI এর প্রতি ক্ষোভ আছে। কারন তারা সকল বাইক অতিরিক্ত লাভে সেল করে। আমি যখন বাইকটি নেই তখন এর প্রাইজ ছিল ২৪৫০০০ টাকা। এখন সেটির দাম কমিয়ে ২১০০০০ করা হয়েছে।
আমি বাইকের খুব যত্ন না নিলেও মোটামুটি যত্ন নিতাম।

ব্রেক ইন পিরিয়ড ঃ আমি বাইক কেনার পরে এটির উপরে খুব ভালভাবে নজর দিয়েছি। কারন বাইকের পরবর্তী অনেক বিষয় ব্রেক ইন পিরিয়ড এর উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হল মাইলেজ। তাই আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড শোরুম থেকে ১০০০ কিমি বললেও আমি ২০০০ কিমি পর্যন্ত তা মেইন্টেইন করি। এ সময় আমি বাইক এর আর পি এম ৫-৬ এর বেশী তুলগাম না, দ্রুত থ্রটল দেয়ার চেষ্টা করতাম না এবং যথাসম্ভব সেফ রাইড করার চেষ্টা করতাম।

ইঞ্জিন অয়েলঃ সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার বাইকের জন্যে খুব গুরুত্বপুর্ন। তাই ইঞ্জিনের গ্রেড অনুযায়ী আমি সবসময় ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতাম। প্রথম ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি ৪০০ কিমি তে। এর পর ৯০০,১৪০০,১৯০০,২৪০০,৩০০০ কিমি তে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি এবং প্রথম থেকে আমি মতুল এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। প্রথ। ৩০০০ কিমি তে মিনারেল এবং পরবর্তী ২০০০ কিমি তে ১০০০ কিমি পর পর সেমি সিনেথিক ব্যাবহার করি। এরপর ৫০০০ কিমি এর পরে থেকে আমি ফুল সিনেথিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার শুরু করি। এবং প্রতি ২৫০০ কিমি পর পর ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি। এবং আমি প্রতি ২০০০ কিমি পরপর ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করার সময় মবিল ফিল্টার চেঞ্জ করতাম।

মাইলেজঃ আমি বাইক কেনার পরে ৫০০০ কিমি পর্যন্ত ৪৫-৪৭ কিমি মাইলেজ পাই। এবং পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখন আমি ৪০-৪২ মাইলেজ পাচ্ছি।

সার্ভিসিংঃ নিয়মিত সার্ভিসিং করানো খুব জরুরী। এতে বাইক সবসময় ভালো থাকে। আমি শোরুমের যে ৫ টি ফ্রি সার্ভিসিং থাকে সবগুলো সার্ভিসিং সময় মতো করিয়েছি। এর বাইরে এখন পর্যন্ত সার্ভিসিং করানোর দরকার পড়ে নাই। তবে সার্ভিসিং এর দিক দিয়ে আমার তেজগাও এর 3S সেন্টার এর সার্ভিসিং সবচেয়ে ভাল লেগেছে।

পার্টসঃ আমার ১৫০০০ কিমি চালানোর মধ্যে কিছু পার্টস চেঞ্জ করা লাগছে। এর মধ্যে পিছনের ব্রেক সু, সামনের ব্রেক সু, ক্লাচ ক্যাবল, থ্রটল ক্যাবল, এয়ার ফিল্টার, স্পার্গ প্লাগ। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোন পার্টস চেঞ্জ করতে হয় নাই।

ট্যুরঃ আমি আমার বাইক নিয়ে এখন পর্যন্ত ৬ টি লং জার্নি করেছি। প্রতিটি জার্নি ছিল ৪০০+ কিমি। এবং আমি এ জার্নিগুলো করার সময় কোন প্রকার সমস্যার সম্মুক্ষীন হই নাই।

স্পীডঃ আমি এই বাইকটিতে সর্বোচ্চ ১০৮ কিমি টপস্পীড পেয়েছি পিলিয়ন সহ আর সিঙ্গেলে ১১১ কিমি টপস্পীড পেয়েছি।

অভিজ্ঞতাঃ ১৫০০০ কিমি চালানোর আলোকে এতোটুকু বলতে পারি কম্ফোর্ট এর দিক দিয়ে এই বাইককে টেক্কা দেয়া বাইক বাংলাদেশে নাই বলা যায়। এই বাইকের রাইডার সিটিং পজিশন এবং পিলিয়ন সিটিং পজিশন খুব ভাল। আমি একদিনে একাই ৪০০+ কিমি জার্নি করলেও তেমন ব্যাকপেইন অনুভব করি নাই।।যে বিষয়টা আমার খুব ভালো লেগেছে। পিছনের টায়ার মোটা হওয়ার কারনে অনেক স্কীড হওয়া থেকে বেচে গেছি। ব্রেকিং নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে বিরক্তিকর একটা দিক ছিল হেডলাইট সবসময় জল্বে থাকা। তাই এর চাপা চেঞ্জ করে নিয়েছিলাম।

সুবিধাঃ এই বাইটির সবচেয়ে যে বিষয়টি ভাল লেগেছে তা হল এর সিটিং পজিশন। পিলিয়ন সিটটি চমৎকার। বাইকটি চালিয়ে খুব কম্ফোর্ট ফীল হয়। টায়ার মোটা হওয়ার কারনে বৃষ্টির দিনেও স্কীড কম হয়।

অসুবিধাঃ রেডি পিকআপ খুব কম। যার ফলে অনেক সময় অভারটেক করে অনেক রিস্ক হয়। বাইকের চেইন লুজ হয়ে যাও এটা খুব বিরক্তিকর। হেড লাইটের আলো খুব কম। যা হাইওয়েতে রাতে চালানোর জন্যে যথেষ্ট না। হর্ন লাউড না। ফুয়েল ইন্ডিকেটর মাঝে মাঝে ভুল রিডিং দেয়।

পরামর্শঃ বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড টি খুব ভালোভাবে মেইনটেইন করবেন। যার ফল আপনি পরবর্তীতে পাবেন। গ্রেড অনুযায়ী ভাল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন। নিয়মিত সার্ভিসিং করাবেন। টায়ার প্রেশার ঠিক রাখবেন। লং ট্যুর দিলে অবশ্যই ১-২ ঘন্টা অথবা ৬০-১০০ কিমি পর পর ইঞ্জিনকে ১০-১৫ মিনিট রেস্ট দিবেন। চেইন লুবিং করবেন নিয়মিত।

সবশেষে এই ছিল আমার ১ বছরের এই বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা। আমি ৯০% সন্তুষ্ট এই বাইক চালিয়ে। তবে ২৪৫০০০ দামটা একটু বেশি ছিল। ২০০০০০ টাকা হলে এই বাইক পারফেক্ট। লেখাটা একটি বেশি বড় হয়ে গেল। যদি কোন কিছু ভুল লিখে থাকি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
সবাই সেফ রাইড করবেন এবং সবসময় হেলমেট পরিধান করবেন।

 

লিখেছেন- বাদশা নূর সোহাগ 

Related Posts

error: Content is protected !!